ওড়িশা সরকারের ভুবনেশ্বর মেট্রো রেল প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত রাজ্যের রাজনীতিতে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে (Bhubaneswar)। বিজু জনতা দলের (বিজেডি) নেতা মন্মথ কুমার রাউত্রায় এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, “আমাদের সবসময়ই সন্দেহ ছিল। প্রথমে তারা দাবি করেছিল যে এটি একটি ডাবল-ডেকার প্রকল্প হবে, যেখানে মেট্রো লাইনের উপরে ফ্লাইওভার নির্মিত হবে।
তারপর তারা বারবার সংশোধনের কথা বলে এবং প্রকল্পটি বিলম্বিত করার জন্য সব রকম কৌশল ব্যবহার করেছে, যা আমাদের সন্দেহকে আরও গভীর করেছে। আমি ঠিকাদারদের সঙ্গে দেখা করেছিলাম যখন মাটির পরীক্ষা বন্ধ করা হয়েছিল এবং আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
অফিসিয়ালি আমাদের বলা হয়েছিল যে প্রকল্পটি বাতিল করা হয়েছে।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে রাউত্রায় ইঙ্গিত দিয়েছেন যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ওড়িশা সরকারের এই সিদ্ধান্তের পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
প্রকল্প বাতিলের পটভূমি
ভুবনেশ্বর মেট্রো রেল প্রকল্পটি ছিল ওড়িশার রাজধানী ভুবনেশ্বর এবং কটকের মধ্যে একটি আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের নেতৃত্বাধীন বিজেডি সরকার ২০২৩ সালের এপ্রিলে এই প্রকল্প ঘোষণা করেছিল। প্রথম পর্যায়ে ৬,২৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বিজু পট্টনায়েক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কটকের ত্রিশূলিয়া পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়ালপথে মেট্রো লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নবীন পট্টনায়েক প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং ২০২৭ সালের মধ্যে প্রথম পর্যায় সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। ডেলহি মেট্রো রেল কর্পোরেশন (ডিএমআরসি) এই প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিল।
কিন্তু ২০২৫ সালের মার্চে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার জয়দেব বিহার-নন্দনকানন রুটে মেট্রোর উপরে একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের পরিকল্পনা করে প্রকল্পের বিস্তারিত প্রকল্প প্রতিবেদন (ডিপিআর) সংশোধনের কথা বলে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে মাটির পরীক্ষা এবং অন্যান্য প্রাথমিক কাজ স্থগিত হয়। জুলাই ২০২৫-এ ডিএমআরসি ঠিকাদার সংস্থা সিগাল ইন্ডিয়া লিমিটেড এবং রঞ্জিত বিল্ডকনের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে, যার ফলে প্রকল্পটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
বিজেডি’র অভিযোগ
বিজেডি নেতা মন্মথ কুমার রাউত্রায় দাবি করেছেন যে বিজেপি সরকার শুরু থেকেই এই প্রকল্প বন্ধ করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করেছে। তিনি বলেন, “প্রথমে তারা ডাবল-ডেকার প্রকল্পের কথা বলেছিল, তারপর সংশোধনের নামে সময় কাটিয়েছে। মাটির পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আমি ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলেছি, কিন্তু কোনো অগ্রগতি ছিল না।
অফিসিয়ালি বলা হয়েছিল যে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেছে।” প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকও এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, “এই সিদ্ধান্ত ভুবনেশ্বরকে ১০ বছর পিছিয়ে দেবে। এটি ওড়িশার জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।” তিনি আরও বলেন, এই প্রকল্পটি ভুবনেশ্বরকে একটি বিশ্বমানের শহরে রূপান্তরিত করার স্বপ্ন ছিল, যা মোবাস এবং অন্যান্য গণপরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে শহরের যানজট কমাত।
বিজেপি সরকারের জবাব
ওড়িশার আবাসন ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী কৃষ্ণচন্দ্র মহাপাত্র এই অভিযোগের জবাবে বলেছেন যে সরকার প্রকল্পটি সম্পূর্ণভাবে বাতিল করেনি, বরং একটি “আরও সম্ভাব্য” মেট্রো প্রকল্পের পরিকল্পনা করছে। তিনি বলেন, “প্রাক্তন বিজেডি সরকার কেন্দ্রীয় সহায়তা না নিয়ে ৫,০০০ কোটি টাকার সম্পূর্ণ রাজ্য-অর্থায়িত প্রকল্প পরিকল্পনা করেছিল।
আমরা কেন্দ্রের সহযোগিতায় একটি নতুন ডিপিআর তৈরি করছি।” মন্ত্রী আরও জানান, একটি উচ্চ-পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা অন্যান্য রাজ্যের মেট্রো প্রকল্প অধ্যয়ন করে একটি নতুন রুট ম্যাপ প্রস্তুত করবে।
ভুবনেশ্বর মেট্রো রেল প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত রাজ্যের নগর উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিজেডি নেতা মন্মথ কুমার রাউত্রায় এবং নবীন পট্টনায়েকের মন্তব্যে এই প্রকল্পের গুরুত্ব এবং বিজেপি সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আইএসএলের আরেক দলের প্রস্তাব পেয়েছেন বিনো, চুক্তি প্রসঙ্গে কী বললেন লাল-হলুদ কোচ ?
অন্যদিকে, বিজেপি সরকার দাবি করছে যে তারা একটি নতুন এবং আরও কার্যকর প্রকল্প নিয়ে এগোচ্ছে। এই বিতর্ক ২০২୫-এর রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, এবং ভুবনেশ্বরের জনগণ এখন অপেক্ষায় রয়েছে একটি আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার জন্য।