বিহারে নিরুদ্দেশ ৩৫ লক্ষ ভোটার, উদ্বেগে নির্বচন কমিশন

বিহারে (Bihar) নির্বাচন কমিশন কর্তৃক পরিচালিত বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) অভিযানে প্রকাশ পেয়েছে যে, প্রায় ৩৫ লক্ষ ভোটার হয় খুঁজে পাওয়া যায়নি বা তারা তাদের…

Bihar SIR

বিহারে (Bihar) নির্বাচন কমিশন কর্তৃক পরিচালিত বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) অভিযানে প্রকাশ পেয়েছে যে, প্রায় ৩৫ লক্ষ ভোটার হয় খুঁজে পাওয়া যায়নি বা তারা তাদের নিবন্ধিত ঠিকানা থেকে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত হয়েছেন। এই তথ্য ভোটার তালিকার সততা নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

বিশেষ করে যখন ভারতের নির্বাচন কমিশন (ECI) দেশব্যাপী ভোটার তালিকার একটি বিশেষ নিবিড় সংশোধন পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিহারে এত বিপুল সংখ্যক ভোটারের সন্ধান না পাওয়া জাতীয় স্তরে এসআইআর অভিযানে কী কী তথ্য প্রকাশিত হতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

   

রাজনৈতিক দলগুলি বারবার ভোটার তালিকার বিশুদ্ধতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, বিশেষ করে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনে ভোটার সংযোজনের বিষয়ে। এই অভিযানে প্রকাশ পেয়েছে যে, বিহারে প্রচুর সংখ্যক ভোটারের কোনো হদিশ পাওয়া যায়নি।

এসআইআর অভিযানের বিবরণ

২৪ জুন, ২০২৫ থেকে শুরু হওয়া এই এসআইআর অভিযানে বিহারের ৭.৮৯ কোটি ভোটারের তালিকা যাচাই করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) এবং বুথ লেভেল এজেন্ট (বিএলএ) দ্বারা ঘরে ঘরে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে, প্রায় ৬৫.২ লক্ষ ভোটারের নাম খসড়া ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এর মধ্যে ২২ লক্ষ মৃত ভোটার, ৭ লক্ষ ডুপ্লিকেট এন্ট্রি এবং ৩৫ লক্ষ ভোটার যারা হয় স্থায়ীভাবে বিহারের বাইরে চলে গেছেন বা খুঁজে পাওয়া যায়নি। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে যে, ৯৯.৮% ভোটার এই অভিযানের আওতায় এসেছে, এবং ৭.২৩ কোটি ভোটারের তথ্য সংগ্রহ ও ডিজিটাইজ করা হয়েছে। খসড়া ভোটার তালিকা ১ আগস্ট, ২০২৫-এ প্রকাশিত হবে।

রাজনৈতিক বিতর্ক ও সুপ্রিম কোর্টে মামলা

এই অভিযান নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিরোধী দলগুলি, বিশেষ করে কংগ্রেস এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি), অভিযোগ করেছে যে, এই সংশোধন প্রক্রিয়া নির্বাচনের ঠিক আগে তাদের সমর্থকদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার একটি ‘ষড়যন্ত্র’।

তারা দাবি করেছে যে, এই প্রক্রিয়ায় সাধারণ সরকারি পরিচয়পত্র যেমন আধার, ভোটার আইডি বা রেশন কার্ড গ্রহণ করা হচ্ছে না, যা বিশেষ করে দরিদ্র ও প্রান্তিক সম্প্রদায়ের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছে। আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব বলেছেন, প্রতি নির্বাচনী এলাকায় ১ শতাংশ ভোটার বাদ পড়লেও প্রায় ৩,২০০ ভোটার প্রভাবিত হবে, যা নির্বাচনের ফলাফলের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক পিটিশন দায়ের করা হয়েছে, যেখানে অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস, যোগেন্দ্র সিং যাদব, মনোজ ঝা, মহুয়া মৈত্র এবং পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ-এর মতো পিটিশনকারীরা দাবি করেছেন যে, এই প্রক্রিয়া সংবিধানের ১৪, ১৯ এবং ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করছে।

Advertisements

তারা বলছেন, এই প্রক্রিয়া ভোটারদের উপর নাগরিকত্ব প্রমাণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে এবং বিহারের উচ্চ দারিদ্র্য ও স্থানান্তরের হারের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারে। সুপ্রিম কোর্টে শুনানির সময় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে যে, তারা এই প্রক্রিয়ায় কোনো বৈধ ভোটারকে বাদ দেওয়ার ইচ্ছা রাখে না এবং প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে।

অভিযানের প্রয়োজনীয়তা ও সমালোচনা

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে যে, দ্রুত নগরায়ন, ঘন ঘন স্থানান্তর, তরুণ ভোটারদের সংযোজন, মৃত্যুর তথ্য না জানানো এবং বিদেশি অবৈধ অভিবাসীদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এই সংশোধনের প্রধান কারণ। ২০০৩ সালের পর এটি বিহারে প্রথম নিবিড় সংশোধন।

কমিশনের মতে, এই অভিযান ভোটার তালিকার বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। তবে, সমালোচকরা বলছেন যে, এই প্রক্রিয়ার সময়সীমা অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত এবং নথির প্রয়োজনীয়তা কঠোর, যা বিশেষ করে প্রান্তিক সম্প্রদায়, যেমন তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি এবং অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকা

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে যে, বিহারের ১২টি প্রধান রাজনৈতিক দল এই অভিযানে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে এবং ১.৫ লক্ষেরও বেশি বুথ লেভেল এজেন্ট নিয়োগ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, বিজেপি ৫২,৬৯৮, আরজেডি ৪৭,৫০৬ এবং জেডি(ইউ) ৩৫,৭৯৯ বিএলএ নিয়োগ করেছে। তবে, একই সঙ্গে কিছু দল এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে, যা এই অভিযানের রাজনৈতিক সংবেদনশীলতা তুলে ধরে।

বিহারের এসআইআর অভিযান ভোটার তালিকার বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও, এটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ৩৫ লক্ষ ভোটারের সন্ধান না পাওয়া এবং ৬৫.২ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার সম্ভাবনা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

‘অপারেশন সিঁদুর’-এর উপর মডিউল আনতে চলেছে NCERT, জেনে নিন বিশেষ কী

সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী শুনানি এবং নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপ এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করবে। এই অভিযান শুধুমাত্র বিহারের জন্য নয়, বরং দেশব্যাপী ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য একটি নজির স্থাপন করতে পারে।