পূর্ব মেদিনীপুর (Police Lapse) জেলার তমলুক থানার অধীন চিয়ারা গ্রামে ২০১৮ সালের ২ জুন একটি নৃশংস ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। স্থানীয় বাসিন্দারা ১৪ বছর বয়সী এক নাবালিকা হিন্দু মেয়ে বনশ্রী ঘোড়ুইয়ের পচা-গলা মৃতদেহ উদ্ধার করে। মৃতদেহের মুখমণ্ডল এবং শরীরে নৃশংসতার চিহ্ন দেখে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
এই ঘটনায় পুলিশ তৎক্ষণাৎ তদন্ত শুরু করে এবং ৫ জুন, ২০১৮ তারিখে হাওড়া জেলা থেকে হামিদুল আলি খান নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় হামিদুল পুলিশের কাছে স্বীকার করে যে সে ৩০ মে, ২০১৮ তারিখে ওই নাবালিকা মেয়েটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করে এবং তার মৃতদেহ ঝোপের মধ্যে ফেলে দেয়।
কিন্তু, এত গুরুতর অভিযোগ এবং স্বীকারোক্তির পরেও পুলিশের তদন্তে গাফিলতির কারণে আদালত আজ হামিদুল আলি খানকে বেকসুর খালাস ঘোষণা করেছে। এই ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং হতাশার সৃষ্টি করেছে।তমলুক থানার পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করলেও, তদন্ত প্রক্রিয়ায় একাধিক ত্রুটি ধরা পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ প্রয়োজনীয় প্রমাণ সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছে, যার ফলে আদালতে মামলাটি দাঁড় করানো সম্ভব হয়নি। হামিদুলের স্বীকারোক্তি থাকা সত্ত্বেও, তদন্তকারী দল পর্যাপ্ত ফরেনসিক প্রমাণ, সাক্ষী সংগ্রহ এবং অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়ায় গাফিলতি করেছে। ফলে, আদালত প্রমাণের অভাবে হামিদুল আলি খানকে মুক্তি দিয়েছে।
এই রায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে, এবং অনেকে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি নৃশংস অপরাধের কাহিনী নয়, বরং এটি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার দুর্বলতাকেও প্রকাশ করে। বনশ্রী ঘোড়ুইয়ের মৃতদেহ উদ্ধারের সময় তার শরীরে নৃশংসতার চিহ্ন স্পষ্ট ছিল, যা ধর্ষণ এবং হত্যার ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে।
স্থানীয়রা দাবি করেছেন যে, পুলিশ যদি সময়মতো এবং সঠিকভাবে তদন্ত পরিচালনা করত, তাহলে অভিযুক্তকে শাস্তি দেওয়া সম্ভব হত। কিন্তু, তদন্তে গাফিলতির কারণে একজন নাবালিকার হত্যার মতো গুরুতর অপরাধের অভিযুক্ত মুক্ত হয়ে গেছে, যা ন্যায়বিচারের প্রতি মানুষের আস্থাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
এই ঘটনা পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনৈতিক এবং সামাজিক মহলেও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তারা দাবি করছেন যে, এই ঘটনার পুনঃতদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, “একটি নাবালিকা মেয়ের উপর এত বড় অপরাধ হয়েছে, অভিযুক্ত স্বীকারোক্তি দিয়েছে, তবুও সে মুক্ত। এটা কী ধরনের ন্যায়বিচার?
পুলিশের গাফিলতির জন্য আমাদের মেয়ে ন্যায় পেল না।”এই ঘটনা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার উপর প্রশ্ন তুলেছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, তমলুক থানায় ২০১৬ সালের একটি হত্যা মামলায় (তমলুক থানা মামলা নং ৪৪৪/১৬, তারিখ ২৩/০৬/১৬, ধারা ৩০২/২০১/৪১১/৩৪ আইপিসি) অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এই ধরনের সফল তদন্তের উদাহরণ থাকলেও, বনশ্রী ঘোড়ুইয়ের মামলায় পুলিশের ব্যর্থতা স্পষ্ট।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের মামলায় ফরেনসিক প্রমাণ, সাক্ষীর বয়ান এবং সঠিক সময়ে এফআইআর দায়ের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, এই মামলায় পুলিশ এই বিষয়গুলিতে পর্যাপ্ত মনোযোগ দেয়নি। উদাহরণস্বরূপ, মৃতদেহের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এবং ডিএনএ প্রমাণ সংগ্রহে দেরি বা অপূর্ণতা মামলাটিকে দুর্বল করে দিয়েছে।
এছাড়া, স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের তদন্তে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই ঘটনা কেবল বনশ্রী ঘোড়ুইয়ের পরিবারের জন্যই নয়, সমগ্র সমাজের জন্য একটি গভীর শিক্ষা। নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসনের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন।
বিলিতি মদের দাম কি সত্যিই কমবে? ভারত-ব্রিটেন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে সংশয়ে বিশেষজ্ঞরা
স্থানীয়রা এই ঘটনার পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়েছেন এবং কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। এই মামলার রায় ন্যায়বিচারের প্রতি মানুষের আস্থাকে ক্ষুণ্ন করেছে, এবং এটি প্রশাসনের জন্য একটি গুরুতর সতর্কবার্তা।