বিলিতি মদের দাম কি সত্যিই কমবে? ভারত-ব্রিটেন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে সংশয়ে বিশেষজ্ঞরা

ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (Free Trade Agreement) কার্যকর হওয়ার ঘোষণা হতেই, দেশে-বিদেশে সুরারসিকদের মধ্যে উৎসাহের সঞ্চার হয়। কারণ এই চুক্তি…

বিলিতি মদের দাম কি সত্যিই কমবে? ভারত-ব্রিটেন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে সংশয়ে বিশেষজ্ঞরা

ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (Free Trade Agreement) কার্যকর হওয়ার ঘোষণা হতেই, দেশে-বিদেশে সুরারসিকদের মধ্যে উৎসাহের সঞ্চার হয়। কারণ এই চুক্তি অনুযায়ী, ব্রিটিশ স্কচ হুইস্কি ও জিন-এর (UK-India Whisky Trade Deal) উপর ভারতে কার্যকর আমদানি শুল্ক ১৫০ শতাংশ থেকে এক ধাক্কায় ৭৫ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, আগামী ১০ বছরের মধ্যে এই হার আরও কমে ৪০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

এই ঘোষণার পর অনেকেই আশা করতে শুরু করেছিলেন, ‘শিভাস রিগ্যাল’, ‘দ্য গ্লেনলিভেট’, ‘জনি ওয়াকার’-এর মতো বিলিতি হুইস্কির দাম ভারতের বাজারে উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা আদৌ কি তেমন হবে?

   

শুল্ক কমলেও দাম পড়ার সম্ভাবনা কম
বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আশায় জল ঢেলে দিচ্ছে ভারতীয় মদের বাজারে প্রচলিত মূল্য কাঠামো। তাঁদের দাবি, বিদেশি মদের বোতলের চূড়ান্ত দামের মাত্র ১০-১৫% নির্ধারিত হয় আমদানি শুল্কের ভিত্তিতে। বাকি দাম নির্ভর করে রাজ্য সরকারের কর (excise duty), উৎপাদন খরচ, পরিবহণ খরচ এবং বিপণন বা মার্কেটিং খরচের উপর। ফলে আমদানি শুল্ক অর্ধেক হলেও, চূড়ান্ত মূল্য বেশি কিছু পরিবর্তিত হবে না।

বিশেষজ্ঞদের হিসেব অনুযায়ী, গড়ে বোতল প্রতি সর্বাধিক ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত দাম কমতে পারে। কিন্তু রাজ্যের স্তরে শুল্ক বা আবগারি কর যদি অপরিবর্তিত থাকে, তাহলে ভোক্তারা এই মূল্যছাড়ের খুব একটা উপকার পাবেন না।

রাজ্য রাজস্বে বড় অংশ মদের উপর নির্ভরশীল
ভারতের বিভিন্ন রাজ্য সরকারের আয়ের একটা বড় অংশ আসে মদের উপর থেকে আদায় হওয়া কর ও রাজস্ব থেকে। ফলে এই চুক্তির জেরে রাজ্য সরকারগুলি নিজেরা কর ছাঁটাই করবে— এমন সম্ভাবনা কার্যত নেই বললেই চলে। অনেক রাজ্যেই এখনও বিদেশি মদ বা প্রিমিয়াম হুইস্কির উপর উচ্চ হারে শুল্ক এবং ফ্লোর প্রাইস ধার্য থাকে। ফলে আন্তর্জাতিক স্তরে আমদানি শুল্ক কমলেও, সেই সুবিধা আদৌ সাধারণ গ্রাহকের কাছে পৌঁছবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

Advertisements

ভারতের বাজারে ব্রিটিশ ব্র্যান্ডগুলির আগ্রহ
এই পরিস্থিতিতে ‘শিভাস রিগ্যাল’ প্রস্তুতকারী সংস্থা ‘পারনো রিকার্ড’-এর চেয়ারম্যান ও সিইও জাঁ এঁতিয়ে গর্জিউস জানিয়েছেন, “ভারত বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম হুইস্কি বাজার। এই বাজারে প্রবেশ এবং বিকাশের জন্য এই বাণিজ্য চুক্তি এক দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক পদক্ষেপ।”

সংস্থার আশা, শুল্ক ছাড়ের পাশাপাশি আমদানির আনুষ্ঠানিকতা ও নিয়মকানুন সহজ হলে ভবিষ্যতে আরও ব্র্যান্ড ভারতে প্রবেশ করবে এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রতিযোগিতার ফলে দাম নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে।

ভারত-ব্রিটেন বাণিজ্য চুক্তি যে আন্তর্জাতিক মদ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির কাছে একটি বড় সুযোগ, তা নিয়ে সংশয় নেই। কিন্তু সাধারণ সুরাপ্রেমীদের জন্য বড় স্বস্তির খবর এখনই বয়ে আনছে না এই চুক্তি। কারণ ভারতের অভ্যন্তরীণ কর ব্যবস্থার জটিলতা ও রাজ্যভিত্তিক রাজস্ব নির্ভরতা বিলিতি মদের দামে উল্লেখযোগ্য হারে পতন ঘটানোর পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই অন্তত এখনই ‘শিভাস’ বা ‘গ্লেনলিভেট’-এর বোতল অনেকটা সস্তায় দোকানের তাক থেকে তুলে নেওয়া যাবে— এমনটা ভাবার কারণ খুব একটা নেই।