উত্তরাখণ্ডে ভারী বৃষ্টিতে ভূমিধস ও বন্যা: চারধাম যাত্রা ব্যাহত

উত্তরাখণ্ডে (Uttarakhand) অবিরাম ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে একের পর এক ভূমিধস এবং আকস্মিক বন্যার ঘটনা ঘটেছে। বন্যা চারধাম যাত্রাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে এবং একাধিক জেলায় স্থানীয়…

Uttarakhand flood landslide

উত্তরাখণ্ডে (Uttarakhand) অবিরাম ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে একের পর এক ভূমিধস এবং আকস্মিক বন্যার ঘটনা ঘটেছে। বন্যা চারধাম যাত্রাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে এবং একাধিক জেলায় স্থানীয় জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। কেদারনাথ যাত্রাও অস্থায়ীভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে, কারণ ভূমিধসের ফলে গৌরীকুণ্ড থেকে কেদারনাথ যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

রুদ্রপ্রয়াগ জেলায়, শনিবার ভোর ৩:৩০ টার দিকে গৌরীকুণ্ড থেকে কেদারনাথের পথে একটি ভূমিধসের ঘটনায় পথের উপর ধ্বংসস্তূপ এবং বড় বড় পাথর পড়ে যাওয়ায় পথচারীদের চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ এই পথে যাতায়াত বন্ধ করেছে এবং পথ পরিষ্কার করার কাজ চলছে।

   

উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপ্রয়াগ, চামোলি, পিথোরাগড় এবং অন্যান্য জেলায় ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট ভূমিধস এবং বন্যা রাজ্যের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। স্টেট ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র বৃহস্পতিবারই ১১৩টি সড়ক, যার মধ্যে দুটি জাতীয় মহাসড়কও রয়েছে, ভূমিধসের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে।

চামোলি জেলায় সর্বাধিক ২৩টি সড়ক বন্ধ হয়েছে, এবং পিথোরাগড়ে ২২টি সড়ক বন্ধ রয়েছে। কেদারনাথের দিকে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সোনপ্রয়াগ-গৌরীকুণ্ড পথে মানকুটিয়ার কাছে বুধবার রাত ১০টার দিকে ভূমিধসের ফলে ৪০ জনেরও বেশি তীর্থযাত্রী আটকা পড়েছিলেন। স্টেট ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এসডিআরএফ) ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে একটি অস্থায়ী পথ তৈরি করে তীর্থযাত্রীদের উদ্ধার করেছে।

তবে, এই পথটি এখনও যানবাহন চলাচলের জন্য উপযুক্ত নয়, ফলে কর্তৃপক্ষ তীর্থযাত্রীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে।কেদারনাথ যাত্রার পথে মানকুটিয়া স্লাইডিং জোন এবং গৌরীকুণ্ডের কাছে শাটল পার্কিং এলাকায় পড়ে থাকা পাথর এবং ধ্বংসস্তূপের কারণে চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। জেলা পুলিশের একজন আধিকারিক জানিয়েছেন, “মানকুটিয়া স্লাইডিং জোন এবং গৌরীকুণ্ডের কাছে ছোট পার্কিং এলাকা এখন পথচারীদের জন্য আংশিকভাবে খোলা হয়েছে।”

তবে, আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসে আরও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা জানানো হয়েছে, ফলে এই পথ এখনও বিপজ্জনক বলে বিবেচিত হচ্ছে। তীর্থযাত্রীদের সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।চারধাম যাত্রা, যা গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী, কেদারনাথ এবং বদ্রীনাথের চারটি পবিত্র তীর্থস্থানকে কেন্দ্র করে, এই বছর ৩০ এপ্রিল শুরু হয়েছিল।

এই যাত্রায় প্রতিদিন প্রায় ৫০,০০০ তীর্থযাত্রী অংশ নিচ্ছিলেন, কিন্তু বর্ষার আগমনের সঙ্গে সঙ্গে এই সংখ্যা কমে ১৪,০০০ থেকে ১৫,০০০-এ নেমে এসেছে। কেদারনাথে, যেখানে প্রতিদিন ২০,০০০-এরও বেশি তীর্থযাত্রী আসতেন, সেখানে এখন দৈনিক দর্শনার্থীর সংখ্যা মাত্র ৪,০০০-এর কাছাকাছি।

উত্তরাখণ্ড চারধাম তীর্থ পুরোহিত মহাপঞ্চায়েতের সাধারণ সম্পাদক ব্রিজেশ সতী জানিয়েছেন, “বর্ষার আগমন এবং স্কুল খোলার কারণে তীর্থযাত্রীর সংখ্যা কমেছে। আবহাওয়াজনিত কারণে পথের ক্ষতি এটির আরেকটি বড় কারণ।” তিনি আরও বলেন, “১৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকে যাত্রা আবার গতি পাবে এবং হেলিকপ্টার পরিষেবাও পুনরায় শুরু হবে।”

Advertisements

এই বছরের ভারী বৃষ্টিপাত এবং ভূমিধসের ঘটনাগুলি ২০১৩ সালের কেদারনাথ বিপর্যয়ের স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে, যখন চোরাবাড়ি হ্রদের বিস্ফোরণ এবং মন্দাকিনী নদীর তাণ্ডবের ফলে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। সেই সময় গৌরীকুণ্ড এবং রাম বাড়ার মতো এলাকা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

এই বছরের ঘটনাগুলি, যদিও ২০১৩-এর মতো তীব্র নয়, তবুও রাজ্যের পর্যটন এবং তীর্থযাত্রার উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। উত্তরাখণ্ডের পর্যটন শিল্প, যা রাজ্যের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় ২৭% অবদান রাখে, বর্ষার কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।রুদ্রপ্রয়াগে মন্দাকিনী এবং আলকানন্দা নদী বিপদসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

কর্তৃপক্ষ তীর্থযাত্রীদের রুদ্রপ্রয়াগে অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছে, যতক্ষণ না আবহাওয়ার উন্নতি হয় এবং বন্ধ পথগুলি পুনরায় খোলা হয়। জাতীয় মহাসড়ক এবং পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট (পিডব্লিউডি) যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে পথ পরিষ্কারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু অবিরাম বৃষ্টির কারণে কাজের গতি ব্যাহত হচ্ছে।

স্থানীয় প্রশাসন এবং এসডিআরএফ দলগুলি তীর্থযাত্রীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করছে, তবে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ঝুঁকি এখনও রয়ে গেছে।উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি পরিস্থিতির তদারকি করছেন এবং জনগণকে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।

BLO প্রশিক্ষণ নিয়ে তৃণমূলের তোপ, কমিশনের ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন

তিনি বলেছেন, “আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী পাহাড়ি এবং কিছু সমতল এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।” ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) আগামী ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যের বিভিন্ন অংশে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, তীর্থযাত্রী এবং স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে।