ম্যানচেস্টার টেস্টে অনশুলের অভিষেক প্রায় নিশ্চিত, করুণে ভরসা গিলের

ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক শুভমান গিল (Shubman Gill) ম্যানচেস্টারে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চতুর্থ টেস্টের আগে দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো পরিষ্কার করেছেন। পাঁচ ম্যাচের অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফি সিরিজে ভারত…

shubman gill confirms anshul kamboj

ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক শুভমান গিল (Shubman Gill) ম্যানচেস্টারে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চতুর্থ টেস্টের আগে দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো পরিষ্কার করেছেন। পাঁচ ম্যাচের অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফি সিরিজে ভারত বর্তমানে ১-২ ব্যবধানে পিছিয়ে রয়েছে। এই ম্যাচে জয় না পেলে ভারতের সিরিজ জয়ের আশা শেষ হয়ে যাবে। তবে দলের জন্য বড় ধাক্কা হলো অলরাউন্ডার নীতিশ কুমার রেড্ডি পুরো সিরিজ থেকে ছিটকে গেছেন, এবং পেসার আরশদীপ সিং চতুর্থ টেস্টে খেলতে পারবেন না। এছাড়াও, বার্মিংহামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ উইকেট নিয়ে ভারতের জয়ের নায়ক আকাশ দীপও চতুর্থ টেস্টে অনুপলব্ধ। এই পরিস্থিতিতে শুভমান গিল জানিয়েছেন যে ২৪ বছর বয়সী তরুণ পেসার অনশুল কাম্বোজের (Anshul Kamboj) অভিষেকের সম্ভাবনা খুবই বেশি।

মঙ্গলবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে গিল বলেন, “আকাশ দীপ এবং আরশদীপ খেলতে পারছেন না, তবে আমাদের দলে এমন খেলোয়াড় রয়েছেন যারা ২০টি উইকেট নিতে পারেন। বিভিন্ন বোলার নিয়ে খেলা আদর্শ নয়, তবে আমরা প্রস্তুত। অনশুল কাম্বোজ অভিষেকের খুব কাছাকাছি। আমরা কাল প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ এবং অনশুলের মধ্যে একজনকে বেছে নেব।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা অনশুলের দক্ষতা দেখেছি। আমাদের বিশ্বাস, তিনি আমাদের জন্য ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারেন। ইনজুরি সবসময়ই কঠিন, নীতিশ এবং আকাশ এই ম্যাচে নেই, তবে আমাদের দলে ২০ উইকেট নেওয়ার মতো যথেষ্ট ভালো খেলোয়াড় রয়েছে।”

   

অনশুল কাম্বোজ যদি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন, তবে এটি হবে তার প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ২৪ বছর বয়সী এই পেসার ২৪টি ফার্স্ট-ক্লাস ম্যাচে ৭৯টি উইকেট নিয়েছেন এবং একটি ফার্স্ট-ক্লাস হাফ-সেঞ্চুরিও রয়েছে তার নামে। গত বছর রঞ্জি ট্রফিতে কেরালার বিপক্ষে এক ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়ে তিনি সবার নজর কেড়েছিলেন। ইন্ডিয়া এ দলের ইংল্যান্ড সফরে তিনি চার উইকেট নিয়েছিলেন, যা তার দক্ষতার প্রমাণ দেয়। গিলের বক্তব্য থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণের তুলনায় কাম্বোজের অভিষেকের সম্ভাবনা বেশি।

এদিকে, করুণ নায়ারের ফর্ম নিয়ে আলোচনা চললেও গিল তাকে সমর্থন করেছেন। হেডিংলি, এজবাস্টন এবং লর্ডসে তিনটি টেস্টে নায়ার মাত্র ১৩১ রান করেছেন, গড় ২২-এর নিচে। তিনি ছয় ইনিংসে ০, ২০, ৩১, ২৬, ৪০ এবং ১৪ রান করেছেন। তবে গিল বলেন, “আমরা মনে করি তিনি ভালো ব্যাট করছেন। প্রথম ম্যাচে তিনি তার স্বাভাবিক পজিশনে ব্যাট করেননি। তার ব্যাটিংয়ে কোনো সমস্যা নেই। একবার যদি তিনি ৫০ রানের গণ্ডি পার করতে পারেন এবং জোনে প্রবেশ করেন, আমরা আশাবাদী যে তিনি ফর্মে ফিরবেন।” এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে নায়ার সম্ভবত চতুর্থ টেস্টে দলে জায়গা ধরে রাখবেন, যদিও কিছু রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে সাই সুদর্শন তার জায়গা নিতে পারেন।

Advertisements

ঋষভ পন্থের উইকেটকিপিং নিয়েও স্পষ্টতা এনেছেন গিল। তিনি বলেন, “ম্যানচেস্টারে চতুর্থ টেস্টে ঋষভ পন্থই উইকেটকিপিং করবেন।” লর্ডসে তৃতীয় টেস্টে পন্থ হাতের আঙুলে চোট পাওয়ায় মাত্র ৩৫ ওভার উইকেটকিপিং করেছিলেন। বাকি সময় ধ্রুব জুরেল উইকেটকিপারের দায়িত্ব পালন করেন। তবে জুরেলের পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক, ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ২৫ বাই রান দিয়েছিলেন, এবং ইংল্যান্ড ম্যাচটি ২২ রানে জিতে নেয়। পন্থের ফিটনেস নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও, তিনি ম্যানচেস্টারে প্রশিক্ষণে ব্যথামুক্তভাবে ব্যাটিং এবং কিপিং প্র্যাকটিস করেছেন, যা তার খেলার জন্য সবুজ সংকেত।

দলের বোলিং ইউনিটে জসপ্রিত বুমরাহ এবং মোহাম্মদ সিরাজ নিশ্চিতভাবে খেলবেন। তৃতীয় পেসার হিসেবে কাম্বোজ বা প্রসিদ্ধ কৃষ্ণের মধ্যে একজনকে বেছে নেওয়া হবে। এছাড়া, নীতিশ রেড্ডির জায়গায় শার্দুল ঠাকুর বা কুলদীপ যাদবের অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের পিচ সাধারণত পেসারদের সহায়ক হয়, তবে বৃষ্টির পূর্বাভাসের কারণে পিচের আচরণ অনিশ্চিত। বৃষ্টির কারণে খেলা ব্যাহত হলে ম্যাচ ড্র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা ভারতের সিরিজ জয়ের আশাকে আরও কঠিন করে তুলবে।

এই ম্যাচে ভারতের সম্ভাব্য একাদশে রয়েছেন: শুভমান গিল (অধিনায়ক), যশস্বী জয়সওয়াল, কেএল রাহুল, করুণ নায়ার/সাই সুদর্শন, ঋষভ পন্থ (উইকেটকিপার), রবীন্দ্র জাদেজা, ওয়াশিংটন সুন্দর, শার্দুল ঠাকুর, জসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজ, এবং অনশুল কাম্বোজ। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ম্যাচের দিন পিচের অবস্থা এবং আবহাওয়ার উপর নির্ভর করবে।
ক্রিকেটপ্রেমীরা এখন অপেক্ষায় রয়েছেন, কাম্বোজ তার সম্ভাব্য অভিষেকে কীভাবে পারফর্ম করেন এবং নায়ার ফর্মে ফিরতে পারেন কিনা। পন্থের উইকেটকিপিং এবং ব্যাটিংয়ে ফিরে আসা দলের জন্য বড় স্বস্তি। তবে বৃষ্টির পূর্বাভাস এই মরণ-বাঁচন ম্যাচের ফলাফলের উপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।