বছরের অন্যতম রাজনৈতিক ইভেন্ট তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ দিবস। প্রতিবছর এই দিনে ধর্মতলায় অনুষ্ঠিত হয় দলটির বিশাল সমাবেশ। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। কলকাতার ধর্মতলায় আজ হাজার হাজার তৃণমূল কর্মী-সমর্থক জমায়েত হয়েছেন শহিদদের স্মরণে, এমনটাই দলীয় বক্তব্য। কিন্তু, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Shuvendu Adhikari) এই সমাবেশকে কড়া ভাষায় কটাক্ষ করেছেন। তাঁর কথায়, “এটা কোনও শহিদ স্মরণ নয়, এটা পাগলু ডান্স।”
সোমবার সকালে উত্তরবঙ্গমুখী বিজেপির ‘উত্তরকন্যা অভিযান’-এ যোগ দিতে কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছন শুভেন্দু। সেখানেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “নাচতে নাচতে আসছে দেখছেন না? জলঙ্গি থেকে বাসের ভেতরে নাচতে নাচতে বাজনা বাজিয়ে আসছে। পুরুলিয়া থেকে যাদের জোর করে আনা হয়েছিল, তারা ইতিমধ্যেই পালিয়ে গেছে।” তাঁর বক্তব্য, এই জমায়েত শুধুই রাজনৈতিক, শহিদদের প্রতি কোনও শ্রদ্ধা নেই।
তাঁর আরও দাবি, “২১ জুলাই কোনও শহিদ স্মরণ নয়, এটা নিছক রাজনৈতিক কর্মসূচি। বহু মানুষ অনেক স্টেশনে এসে ফিরে গেছে। কারণ, জোর করে লোক তোলা হচ্ছে।”
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, এবারের সমাবেশ দলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লোকসভা ভোটের পরে, এবং বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে এটাই শেষ বড় সভা। সেখান থেকেই তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ভবিষ্যতের রাজনৈতিক দিশা দেখাবেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই শহিদ দিবসকে ‘তৃণমূলের লড়াই ও আত্মত্যাগের প্রতীক’ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে।
অন্যদিকে বিজেপি আজই আয়োজন করেছে ‘উত্তরকন্যা অভিযান’, যেখানে শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। বিজেপির বক্তব্য, উত্তরবঙ্গের প্রতি সরকার চূড়ান্ত বিমাতাসুলভ আচরণ করছে।
আজকের দিনটি রাজনীতির ময়দানে তৃণমূল ও বিজেপির টক্করের দিন। একদিকে ধর্মতলায় মমতার নেতৃত্বে শহিদ দিবসের বিশাল সমাবেশ, অন্যদিকে শিলিগুড়ি থেকে উত্তরকন্যার উদ্দেশ্যে রওনা শুভেন্দুর দলবল। একে অপরের বিরুদ্ধে কাদা ছোঁড়া, পাল্টা মন্তব্যে উত্তাল বাংলার রাজনীতি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, এই মুহূর্তে তৃণমূলের পক্ষেও এবং বিজেপির পক্ষেও ২১ জুলাই একটি রাজনৈতিক মঞ্চ। একজন শহিদদের স্মরণ করছেন দলীয় শক্তি প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে, আর অন্যজন সেই অনুষ্ঠানকে ব্যঙ্গ করে নিজেদের বিরোধিতা স্পষ্ট করছেন।
শুভেন্দু অধিকারীর পাগলু ডান্স মন্তব্যে ইতিমধ্যেই তৃণমূলের অন্দরেও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। রাজ্য রাজনীতি যতই গরম হোক, শহিদদের সম্মান নিয়ে রাজনীতি কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন সামনে রেখে এই পাল্টাপাল্টি ভাষার যুদ্ধই আগামী দিনে আরও তীব্র হবে, তা বলাই যায়।