ডিমলায় জামাত বিএনপি যোগে ভাংচুর মন্দির, জ্বলছে বসতবাড়ি

বাংলাদেশের নীলফামারী (Jamaat) জেলার ডিমলা উপজেলায় হিন্দু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর জামাত-ই-ইসলামী এবং বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি)-এর সঙ্গে যুক্ত ইসলামপন্থীদের দ্বারা নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই…

Jamaat BNP vandalism in bangladesh

বাংলাদেশের নীলফামারী (Jamaat) জেলার ডিমলা উপজেলায় হিন্দু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর জামাত-ই-ইসলামী এবং বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি)-এর সঙ্গে যুক্ত ইসলামপন্থীদের দ্বারা নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই হামলায় বাবু পাড়া মন্দিরের কাছে মেডিকেল মোড় এলাকায় হিন্দু পরিবারগুলির বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়েছে, মন্দিরে হামলা ও দেবতার মূর্তি ধ্বংস করা হয়েছে এবং বসতবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এই হামলায় হিন্দু নারীদের উপর নির্মম নির্যাতনের ঘটনাও সংঘটিত হয়েছে, যা দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে, যেখানে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ এবং ভিডিও ফুটেজে হামলার ভয়াবহতা প্রকাশ পেয়েছে।

   

জানা গেছে, এই হামলায় দুটি হিন্দু পরিবার বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামলাকারীরা মন্দিরে প্রবেশ করে দেবতার মূর্তি ভাংচুর করেছে এবং বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হামলাকারীরা বিএনপি এবং জামাত-ই-ইসলামীর সঙ্গে যুক্ত, এবং তারা হিন্দু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালিয়েছে। হামলার সময় হিন্দু নারীদের উপর নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, যা এই ঘটনাকে আরও মর্মান্তিক করে তুলেছে।

এই হামলার ফলে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, এবং তারা নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছে।এই ঘটনা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর ক্রমবর্ধমান হামলার একটি অংশ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, ৪ থেকে ২০ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত ১৬ দিনের মধ্যে দেশজুড়ে সংখ্যালঘুদের উপর ২,০১০টি হামলার ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ৬৯টি মন্দির ভাংচুরের ঘটনাও রয়েছে। এই হামলাগুলির মধ্যে ১৫৭টি পরিবারের বাড়িঘর লুটপাট, ভাংচুর এবং আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

ডিমলার এই ঘটনা পহেলগাঁও হামলার পর থেকে বাংলাদেশে বেড়ে চলা হিন্দুবিরোধী হিংসার একটি অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পহেলগাঁও হামলার পর বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার একটি অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। জামাত-ই-ইসলামী এবং বিএনপির মতো দলগুলি এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এই হামলার ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, হামলাকারীরা বাড়িঘরে প্রবেশ করে আসবাবপত্র, টেলিভিশন, এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র ভাংচুর করেছে এবং নগদ টাকা ও গয়না লুট করেছে। এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করেছে, কিন্তু অনেকে অভিযোগ করেছেন যে পুলিশ এবং সেনাবাহিনী তাদের কলের জবাব দেয়নি। এই ঘটনা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি আরও তীব্র করেছে।

Advertisements

বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার ইতিহাস দীর্ঘ। ২০১৩ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর ৩,৬৭৯টি হামলার ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে মন্দির ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ এবং লক্ষ্যবস্তু সহিংসতা অন্তর্ভুক্ত। ২০২১ সালের অক্টোবরে দুর্গা পূজার সময়ও একই ধরনের সহিংসতা দেখা গিয়েছিল, যখন একটি ভাইরাল ভিডিওর জেরে ৫০টিরও বেশি মন্দির ভাংচুর করা হয়েছিল।

ডিমলার এই ঘটনার পর স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় নিরাপত্তা এবং বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে। তারা সরকারের কাছে এই হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে। তবে, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত এই ধরনের হামলা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক এবং অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।

এই ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের উপরও এই হামলার প্রভাব পড়তে পারে, কারণ ভারত ইতিমধ্যে বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর হামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

সেনাবাহিনীর অত্যাধুনিক হেলিকপ্টারে আরও নির্ভুল এয়ার স্ট্রাইক

ডিমলার এই হামলা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরির জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা মনে করিয়ে দেয়। সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনকে অবশ্যই এই ধরনের হামলার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।