জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ (Omar Abdullah) দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছেন যে, রাজ্যের মর্যাদা পুনর্বহাল করা জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের অধিকার। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত কোনো ‘হাইব্রিড সিস্টেম’ বা মধ্যবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, যা রাজ্যের পূর্ণ মর্যাদার পরিবর্তে আংশিক স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব দিতে পারে।
ন্যাশনাল কনফারেন্সের (এনসি) নেতা ওমর আবদুল্লাহ বলেন, “রাজ্যের মর্যাদা আমাদের অধিকার। আমরা কোনো আধা-আধি সমাধান বা হাইব্রিড সিস্টেম মেনে নেব না। জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণ পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে, এবং আমরা এই দাবি থেকে পিছু হটব না।”
২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রদানকারী ধারা ৩৭০ এবং ৩৫এ বাতিলের পর থেকে রাজ্যটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের পর থেকে ওমর আবদুল্লাহ এবং তাঁর দল ন্যাশনাল কনফারেন্স ধারাবাহিকভাবে রাজ্যের মর্যাদা পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে আসছে।
সম্প্রতি শ্রীনগরে একটি জানসভায় তিনি বলেন, “ধারা ৩৭০ বাতিলের সময় জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করা হয়েছিল। আমরা জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করি, এবং তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া আমাদের লক্ষ্য।” তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের যে কোনো প্রস্তাব যা পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদার কম কিছু প্রস্তাব করবে, তা জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার সমান।ওমর আবদুল্লাহ ‘হাইব্রিড সিস্টেম’ প্রত্যাখ্যান করে স্পষ্ট করেছেন যে, তাঁর দল কোনো মধ্যবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না।
এই ‘হাইব্রিড সিস্টেম’ বলতে এমন একটি ব্যবস্থার ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে, যেখানে জম্মু ও কাশ্মীরকে আংশিক রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হতে পারে, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত থাকবে। ওমর বলেন, “আমরা জম্মু ও কাশ্মীরের পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা চাই, যেখানে আমাদের নিজস্ব বিধানসভা এবং স্বায়ত্তশাসন থাকবে। আমরা কোনো আপস করব না।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণ তাদের পরিচয় এবং অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে।এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ওমর আবদুল্লাহ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তাঁর দলের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা সংসদে এবং জনগণের মধ্যে এই দাবি তুলে ধরব। জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের কণ্ঠস্বর দমিয়ে রাখা যাবে না।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ন্যাশনাল কনফারেন্স সবসময় জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের অধিকার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পক্ষে লড়াই করেছে। তাঁর মতে, রাজ্যের মর্যাদা পুনর্বহাল না হওয়া পর্যন্ত এই লড়াই চলবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ওমর আবদুল্লাহর এই বক্তব্য সংসদের আসন্ন অধিবেশনে জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা নিয়ে তীব্র বিতর্কের সূচনা করতে পারে।
২০২৪ সালে জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচনের পর ন্যাশনাল কনফারেন্স এনডিএ-র বিরুদ্ধে জোট গঠন করে সরকার গঠন করেছে। এই নির্বাচনে জনগণের সমর্থনের ভিত্তিতে ওমর আবদুল্লাহ তাঁর দলের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছেন।জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সংবেদনশীল হওয়ায় ওমরের এই বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, “২০১৯ সালে আমাদের কাছ থেকে যা কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এটি কেবল রাজনৈতিক দাবি নয়, জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের আবেগ এবং পরিচয়ের বিষয়।” তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত জনগণের মতামতকে সম্মান করা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা।
এই ঘোষণা জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ন্যাশনাল কনফারেন্সের সমর্থকরা ওমর আবদুল্লাহর এই অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন, যখন বিজেপি নেতারা এটিকে ‘রাজনৈতিক নাটক’ বলে সমালোচনা করেছেন। বিজেপির একজন নেতা বলেন, “ধারা ৩৭০ বাতিলের সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্ট দ্বারা বহাল রাখা হয়েছে।
গে ডেটিং অ্যাপের ফাঁদে যুবক লুঠের শিকার, ধৃত ২ অভিযুক্ত
জম্মু ও কাশ্মীর এখন ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে উন্নয়নের পথে এগোচ্ছে।” তবে, ওমর আবদুল্লাহর বক্তব্য স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, রাজ্যের মর্যাদা নিয়ে তাঁর দল কোনো আপস করবে না।এই ঘটনা আগামী দিনে জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনীতিতে নতুন দিক নির্দেশ করতে পারে। ওমর আবদুল্লাহর এই দৃঢ় অবস্থান জনগণের মধ্যে তাঁদের অধিকারের প্রতি আস্থা জোরদার করেছে।