মাত্র তিন বছরে আই-লিগের টিকিট, ময়দানের চতুর্থ প্রধানের লক্ষ্যে আইএসএল!

শতবর্ষের ইতিহাসে মোহনবাগান (Mohun Bagan), ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) ও মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে (Mohammedan SC) ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে কলকাতার ফুটবল (Kolkata Football। কিন্তু মাত্র তিন বছরের…

Diamond Harbour FC mines away in quest to be Kolkata Football fourth giant

শতবর্ষের ইতিহাসে মোহনবাগান (Mohun Bagan), ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) ও মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে (Mohammedan SC) ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে কলকাতার ফুটবল (Kolkata Football। কিন্তু মাত্র তিন বছরের মধ্যে ডায়মন্ড হারবার এফসি (Diamond Harbour FC) যেন নতুন বাতাস এনেছে এই জমজমাটি ময়দানে। বর্তমানে কলকাতা ক্লাব ফুটবলের ‘চতুর্থ জায়ান্ট’ হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে দাপটের সঙ্গেই।

২০২২ সালের ১৫ এপ্রিল, বাংলা নববর্ষে আত্মপ্রকাশ করে ডায়মন্ড হারবার এফসি। জন্মলগ্ন থেকেই লক্ষ্য ছিল বড়, তার দিকে এগিয়ে যাওয়ার কৌশল ছিল পেশাদার। অল্প সময়ে কলকাতা লিগের প্রথম ডিভিশন পেরিয়ে তারা পৌঁছে যায় প্রিমিয়ার ডিভিশনে। এবার সেই স্বপ্ন আরও বিস্তৃত, কারণ চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আই-লিগ ২ জিতে তারা অর্জন করেছে আই-লিগের টিকিট। দেশের সর্বোচ্চ লিগ ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (ISL) পৌঁছানো এখন আর দূরের স্বপ্ন নয়। পাশাপাশি প্রথমবারের মতো জায়গা করে নিয়েছে এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী টুর্নামেন্ট ডুরান্ড কাপে।

   

ডায়মন্ড হারবার এফসির অন্যতম প্রধান মুখ ও অভিভাবক, তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং ডায়মন্ড হারবারের সংসদ সদস্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ক্লাব গঠনের অনুপ্রেরণা এবং নেপথ্যের কারিগর। ২০১৭ সালে তাঁর উদ্যোগে শুরু হয় ‘ডায়মন্ড হারবার এমপি কাপ’, যা এক রাতেই জনপ্রিয় হয়ে যায়। সেখান থেকেই ফুটবলপ্রেমে গড়ে ওঠে ক্লাব গঠনের ভাবনা।

ডায়মন্ড হারবার এফসির সহ-সভাপতি আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এলাকার যুব সমাজের জন্য কিছু করার তাগিদেই এই ক্লাব। করোনা পরিস্থিতির জন্য কিছুটা দেরি হলেও, ২০২২ সালে আমরা পথ চলা শুরু করি। এখন আমাদের লক্ষ্য, শুধু স্থানীয় প্রতিভাকে মঞ্চ দেওয়া নয়, বরং জাতীয় মানচিত্রে শক্ত জায়গা করে নেওয়া।”

ক্লাবের বর্তমান সাফল্যের পেছনে অন্যতম ভূমিকা পালন করছেন প্রাক্তন ভারতীয় ফুটবলার ও মোহনবাগানের কিংবদন্তি মিডফিল্ডার মানস ভট্টাচার্য। ক্লাবের সচিব পদে থাকা মানসবাবু জানান, “ডায়মন্ড হারবার এফসি কোন রাজনৈতিক দল বা ধর্মীয় গোষ্ঠীর ক্লাব নয়। এটা সবার জন্য। আমরা চাই, রাজ্যের প্রতিটি কোণ থেকে প্রতিভা উঠে আসুক। পেশাদারিত্বই আমাদের মূল মন্ত্র।”

এই পেশাদারিত্বের প্রমাণ দলের কোচ নিয়োগেই পাওয়া যায়। স্প্যানিশ কোচ কিবু ভিকুনা, যিনি ২০১৯-২০ মরসুমে মোহনবাগানকে আই-লিগ জিতিয়েছিলেন, বর্তমানে ডায়মন্ড হারবারের হেড কোচ। তাঁর মতে, “এই ক্লাবের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। আমরা ধাপে ধাপে এগোচ্ছি। আই-লিগে খেলতে গেলে প্রস্তুতি অনেক বেশি দরকার, কারণ মাঠ, আবহাওয়া এবং প্রতিপক্ষের ভিন্নতা এখানে বড় চ্যালেঞ্জ।”

Advertisements

ডায়মন্ড হারবার এফসির অন্যতম সাফল্যের কারণ, ক্লাব পরিচালনায় অভিজ্ঞ পেশাদারদের সম্পৃক্ততা। মাঠের বাইরে যেমন দক্ষ ব্যবস্থাপনা, তেমনি মাঠে তারুণ্য এবং অভিজ্ঞতার মিশেল। ভিকুনা বলেন, “আমাদের দলে ভারসাম্য আনাটাই এখন সবচেয়ে বড় কাজ। বিদেশি এবং ভারতীয় খেলোয়াড়দের নিয়ে একটি পরিপূর্ণ গেম মডেল তৈরি করছি।”

কিন্তু শুধু সাফল্য দিয়ে কোনও ক্লাব টিকতে পারে না, প্রয়োজন শক্তিশালী সমর্থকভিত্তি। ডায়মন্ড হারবার অঞ্চলে প্রায় ৩০০ ক্লাবের সঙ্গে কাজ করছে ডিএইচএফসি। আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “এখনও অবধি স্থানীয় মানুষ আমাদের পাশে রয়েছেন। আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে চাই।”

তবে প্রশ্ন থেকেই যায় ইন্ডিয়ান সুপার লিগে ওঠার মতো বিশাল অর্থ বিনিয়োগের যোগান কিভাবে আসবে? এই বিষয়ে আকাশ বলেন, “আমাদের স্পনসররা শুরু থেকেই পাশে আছেন। আমাদের সাফল্যে অনেক নতুন সংস্থাও আগ্রহ দেখাচ্ছে। আইএসএলে উঠতে পারলে অর্থনৈতিক দিক থেকেও বড় সাপোর্ট আমরা পাব বলে আশাবাদী।”

চতুর্থ মরসুমে পা দিয়েই যেভাবে এই ক্লাব সফলতা পেয়েছে, তা নিঃসন্দেহে নজর কাড়ার মতো। কিন্তু চূড়ান্ত সাফল্যের সিঁড়ি চড়তে গেলে প্রয়োজন সময়, ধৈর্য এবং ধারাবাহিকতা। কলকাতার ফুটবল ইতিহাসে ডায়মন্ড হারবার এফসির সংযোজন একটি নতুন অধ্যায়, যেখানে পুরাতনের সঙ্গে নতুনের জুটি আরও সমৃদ্ধ করবে বাংলার ফুটবলকে।

Diamond Harbour FC mines away in quest to be Kolkata Football fourth Giant