দিল্লি: বর্ষার জেরে সারা দেশে তাণ্ডব অব্যাহত। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশে একদিনে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বৃষ্টিজনিত নানা দুর্ঘটনায়। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর (IMD) শনিবার হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, কেরল এবং পশ্চিমবঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির (Red Alerts) পূর্বাভাস দিয়ে সতর্কতা জারি করেছে।
উত্তরপ্রদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় (১৮ জুলাই রাত ৮টা পর্যন্ত) ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৮ জন জলে ডুবে প্রাণ হারিয়েছেন, ২ জনের মৃত্যু হয়েছে সাপের কামড়ে। চিত্রকূটে ২ জন, মোরাদাবাদে ৩ জন ও গাজিপুরে ১ জন ডুবে মারা গেছেন। এছাড়া বান্দা, মহোবা ও ললিতপুরেও মৃত্যুর খবর মিলেছে।
রাজস্থানের বিভিন্ন অংশে টানা বৃষ্টিতে বানভাসি অবস্থা তৈরি হয়েছে। অজমের, পুষ্কর, বুন্দি, পালি ও সাওয়াই মাধোপুরে রাস্তাঘাট জলের তলায়। নদী, নালা ও জলাধার উপচে পড়ায় বহু গ্রাম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। টোংকের গোলেরা গ্রামে ১৭ জন নদীতে আটকে পড়েন, পরে SDRF-এর তৎপরতায় তাঁদের উদ্ধার করা হয়।
অজমেরের দরগাহ এলাকায় স্রোতের তোড়ে বেশ কয়েকজন ভেসে যান, স্থানীয় বাসিন্দারা ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁদের উদ্ধার করেন। আনাসাগর লেক উপচে পড়ায় শহরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলের তলায় চলে গিয়েছে।
রাজস্থানে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে বুঞ্জির নৈনওয়ায় (২৩৪ মিমি), নাগৌরের মেরতা সিটিতে ২৩০ মিমি, অজমেরের মাঙ্গলিয়াওয়াসে ১৯০ মিমি, নাসিরাবাদে ১৮০ মিমি ও প্রতাপগড়ে ১৬০ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। শনিবার যোধপুর বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুন অঞ্চলে রবিবার ভারী বৃষ্টির আশঙ্কায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। নৈনিতাল, চম্পাবত ও উদম সিং নগর জেলায় অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা। গাড়োয়াল এলাকার দেরাদুন, তেহরি ও পৌরী জেলাসহ বাগেশ্বর ও পিথোরাগড়েও অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
জেলাগুলির প্রশাসনকে আগাম সতর্কতা নিতে বলা হয়েছে। উচ্চ হিমালয়ে পর্যটকদের যাত্রা আপাতত নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। প্রতিটি থানায় উদ্ধার সরঞ্জাম ও ওয়্যারলেস সেট প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।
হিমাচল প্রদেশেও সোমবার ও মঙ্গলবারের জন্য ৯টি জেলায় অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি করেছে IMD। এখানে এখনও পর্যন্ত ১৪১টি রাস্তা বন্ধ, ৫৮টি জল সরবরাহ প্রকল্প এবং ২৮টি বিদ্যুৎ ট্রান্সফর্মার ক্ষতিগ্রস্ত।
কেরলের মালাপ্পুরম, কোঝিকোড়, ওয়ানাড়, কন্নুর এবং কাসারগড় জেলায় রেড অ্যালার্ট জারি হয়েছে। এখানে টানা বৃষ্টিতে অনেক শহর এবং পাহাড়ি অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এরনাকুলাম, ইডুক্কি, ত্রিশূর এবং পালক্কাড়ে অরেঞ্জ অ্যালার্ট রয়েছে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে জরুরি সতর্কবার্তা জারি করেছে।
অরুণাচল প্রদেশের লোয়ার সিয়াং জেলায় লাগাতার বৃষ্টিতে একাধিক জায়গায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। জাতীয় সড়ক NH-10-এও ধস নামায় পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পং থেকে সিকিমের রংপো রুট সাময়িক বন্ধ। দিল্লিতে শনিবার বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে IMD। রাজধানীতে এদিন সকালে তাপমাত্রা ছিল ২৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের তুলনায় ২ ডিগ্রি কম।