ওয়াশিংটন: ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাত ঘিরে ফের আলোচনার কেন্দ্রে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে এক নৈশভোজে তিনি দাবি করেন, মে মাসে দুই দেশের মধ্যে চলা সঙ্ঘাতে অন্তত চার থেকে পাঁচটি যুদ্ধবিমান গুলি করে নামানো হয়েছিল। সেই সঙ্গে তাঁর আরও দাবি, এই উত্তেজনা প্রশমনে বড় ভূমিকা ছিল তাঁর প্রশাসনের বাণিজ্যকে হাতিয়ার করেই তাঁরা যুদ্ধ থামাতে পেরেছেন (Trump India Pakistan Conflict), এমনটাই তাঁর বক্তব্য।
ট্রাম্পের কথায়, “এই যুদ্ধটা ভয়ানক রূপ নিচ্ছিল। দুই দেশ একে অপরকে টার্গেট করছিল। বিমান আকাশে ধ্বংস হচ্ছিল, সম্ভবত পাঁচটি নামানো হয়েছিল। আমরা এটা থামিয়েছি, এবং সেটা করেছি বাণিজ্যের মাধ্যমে।”
মে মাসে কী ঘটেছিল?
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা মে মাসের শুরুতে তুঙ্গে পৌঁছয়। নিয়ন্ত্রণরেখা ও আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর একাধিক সংঘর্ষ, ড্রোন হামলা, বিমান প্রতিহত করার ঘটনা ঘটেছিল বলে সামরিক সূত্রে খবর। শেষ পর্যন্ত ১০ মে দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হয়।
যুদ্ধবিরতির পরপরই ভারতীয় বায়ুসেনার এয়ার মার্শাল এ কে ভারতি জানান, সংঘর্ষ চলাকালীন ভারত “বহু উন্নত প্রযুক্তির পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে”, যদিও তিনি নির্দিষ্ট কোনও সংখ্যা জানাননি।
পাকিস্তানের পাল্টা দাবি
পাকিস্তান সরকার ভারতের দাবি খারিজ করে জানায়, তাদের কেবল একটি বিমান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বরং, পাকিস্তানের দাবি ছিল আরও বড়, তারা ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে নামিয়েছে, যার মধ্যে রাফাল যুদ্ধবিমান রয়েছে বলেও দাবি করে ইসলামাবাদ।
সেনাবাহিনীর ব্যাখ্যা: সংখ্যা নয়, ভুল থেকে শিক্ষা
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ভারতের চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান পাকিস্তানের দাবি একেবারেই নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, “সংখ্যা বড় কথা নয়। বিমান কেন নামল, কী ভুল হয়েছিল, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দ্রুত সেই ভুল শুধরে নিয়েছি এবং কার্যকরী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি।”
তিনি জানান, সংঘাতের শুরুর দিকে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হলেও ভারতীয় সেনা পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে।
ট্রাম্পের ‘মধ্যস্থতা’ নিয়ে বিতর্ক
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর আগেও একাধিকবার দাবি করেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তাঁর প্রশাসনের হস্তক্ষেপেই উত্তেজনা প্রশমিত হয়। এবার ফের সেই দাবিই তুলে ধরলেন তিনি বলেন, “আমরা বহু যুদ্ধ থামিয়েছি। ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধটা ছিল সবচেয়ে উদ্বেগজনক। দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে উত্তেজনা দ্রুত বাড়ছিল। আমরা তা থামিয়েছি, এবং তাও যুদ্ধের নয়, বাণিজ্যের মাধ্যমে।”
নয়াদিল্লির প্রতিক্রিয়া: ‘মধ্যস্থতার কোনও প্রশ্নই নেই’
তবে ভারতের অবস্থান বরাবরই পরিষ্কার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিদেশ মন্ত্রকের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বা কোনও তৃতীয় পক্ষ এই সংঘাতে মধ্যস্থতা করেনি। যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়ায় বাণিজ্য বা কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়েও কোনও আলোচনা হয়নি বলেই ভারতের দাবি।