মিলন পণ্ডা, মহিষাদল: পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদল থানায় পুলিশ হেফাজতে (Police Custody) থাকা অবস্থায় এক বিচারাধীন ব্যক্তির আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি, আমজাদ শা, বর্তমানে তমলুক জেলা হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশি হেফাজতের নিরাপত্তা এবং নজরদারির গাফিলতি নিয়ে উঠেছে একাধিক প্রশ্ন।
পুলিশ সূত্রে খবর, আমজাদ শা মহিষাদলের মছলন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা। গত ১১ জুলাই তাঁর বৌমা রহস্যজনকভাবে আত্মঘাতী হন বলে অভিযোগ। মৃতার বাপেরবাড়ির তরফ থেকে দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার রাতে মহিষাদল থানার পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। পরে তদন্তের স্বার্থে আমজাদকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে আমজাদকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য স্থানীয় বাসুলিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে থানায় ফিরিয়ে আনার কিছুক্ষণ পরই তিনি হঠাৎ বমি করতে শুরু করেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে আবারও বাসুলিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় দ্রুত তাঁকে তমলুক সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। বর্তমানে তিনি সিসিইউতে চিকিৎসাধীন, এবং তাঁর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক বলে জানা গিয়েছে।
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, থানার হাজতে থাকার সময় অথবা হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে আমজাদ কোনও বিষাক্ত দ্রব্য, যেমন অ্যাসিড জাতীয় কিছু বা টয়লেট ক্লিনার জাতীয় পদার্থ খেয়ে ফেলেছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—থানার মতো সুরক্ষিত স্থানে কীভাবে একজন অভিযুক্ত এমন বিষাক্ত দ্রব্য সংগ্রহ করলেন?
স্থানীয় মানুষ এবং অধিকারকর্মীদের প্রশ্ন—একজন অভিযুক্ত যখন পুলিশের হেফাজতে থাকেন, তখন তাঁর নিরাপত্তার পূর্ণ দায়িত্ব পুলিশের। তাহলে কীভাবে এমন গাফিলতি ঘটল? এই ঘটনায় পুলিশের দায়িত্বে গাফিলতি ছিল কি না, তা এখন তদন্ত সাপেক্ষ।
এই ঘটনার পরে মহিষাদল থানার পুলিশ বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে। তদন্তে খতিয়ে দেখা হচ্ছে—কোন পরিস্থিতিতে আমজাদ এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, এবং তিনি ঠিক কী খেয়েছিলেন। যদিও এ বিষয়ে পুলিশের তরফে এখনো পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এদিকে এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক এবং সামাজিক মহলে আলোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, হেফাজতের নিরাপত্তা যদি এইরকম দুর্বল হয়, তাহলে পুলিশের উপর ভরসা রাখবে কে?
স্থানীয় এক সমাজকর্মী বলেন, “এটি শুধুমাত্র একটি আত্মহত্যার চেষ্টা নয়, এটি পুলিশের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার প্রতিচ্ছবি। এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া উচিত এবং যদি পুলিশের তরফে কোনও গাফিলতি থাকে, তবে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।”
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মহিষাদল থানার কার্যক্রম ও পুলিশের ভূমিকা ফের একবার জনসমক্ষে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে। মানুষ চাইছেন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং পুলিশি ব্যবস্থার আরও জবাবদিহিতা।