এআইএফএফ সংবিধান মামলায় আজ সুপ্রিম রায়ে ফুটবলের ভবিষ্যৎ

ভারতীয় ফুটবলের প্রশাসনিক কাঠামোতে একটি ঐতিহাসিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আজ, শুক্রবার অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের (এআইএফএফ) নতুন সংবিধানের (AIFF Constitution) বিষয়ে চূড়ান্ত রায়…

Supreme Court to Rule on AIFF Constitution on July 18, Impacting ISL 2025-26 Season

ভারতীয় ফুটবলের প্রশাসনিক কাঠামোতে একটি ঐতিহাসিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আজ, শুক্রবার অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের (এআইএফএফ) নতুন সংবিধানের (AIFF Constitution) বিষয়ে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করতে চলেছে। এই রায় ভারতীয় ফুটবলের শাসনব্যবস্থা, ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল), এবং ফুটবলের সামগ্রিক উন্নয়নের উপর গভীর প্রভাব ফেলবে।

রায়ের প্রেক্ষাপট
ভারতীয় ফুটবলের শাসনব্যবস্থায় সংস্কারের প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৭ সালে, যখন দিল্লি হাইকোর্ট এআইএফএফ-এর নির্বাচনকে জাতীয় ক্রীড়া কোড লঙ্ঘনের কারণে বাতিল ঘোষণা করে। এই মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছায়, এবং ২০২২ সালের মে মাসে সুপ্রিম কোর্ট তৎকালীন এআইএফএফ সভাপতি প্রফুল প্যাটেলকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়। একই সঙ্গে, একটি তিন সদস্যের প্রশাসক কমিটি (কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরস বা CoA) নিয়োগ করা হয়, যারা একটি নতুন সংবিধানের খসড়া তৈরি করে। তবে, এই খসড়া বিভিন্ন রাজ্য ফুটবল সংস্থার আপত্তির মুখে পড়ে, এবং ২০২২ সালে ফিফা ভারতের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যার ফলে CoA ভেঙে দেওয়া হয়।

   

২০২৩ সালের মে মাসে, সুপ্রিম কোর্ট প্রাক্তন বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাওকে নতুন সংবিধান চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেয়। তিনি এআইএফএফ, রাজ্য সংস্থা, ফিফা, এএফসি, এবং ফুটবল স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (এফএসডিএল)-এর মতো স্টেকহোল্ডারদের মতামত নিয়ে একটি খসড়া তৈরি করেন। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্ট এই খসড়া নিয়ে চূড়ান্ত শুনানি শুরু করে, এবং ৩০ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে রায় সংরক্ষিত হয়। এখন ১৮ জুলাই, ২০২৫ তারিখে এই রায় ঘোষণার কথা রয়েছে।

নতুন সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য
নতুন সংবিধানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন প্রস্তাবিত হয়েছে, যা ভারতীয় ফুটবলের শাসনব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক করবে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • প্রাক্তন খেলোয়াড়দের প্রতিনিধিত্ব: ১৪ সদস্যের নির্বাহী কমিটিতে কমপক্ষে পাঁচজন প্রাক্তন জাতীয় খেলোয়াড় (দুজন মহিলা সহ) অন্তর্ভুক্ত হবেন।
  • অনাস্থা প্রস্তাব: কর্মকর্তাদের অপসারণের জন্য অনাস্থা প্রস্তাবের বিধান।
  • জেনারেল বডির গঠন: প্রতিটি সদস্য সংস্থা থেকে একজন প্রতিনিধি, ১৫ জন বিশিষ্ট খেলোয়াড় (কমপক্ষে পাঁচজন মহিলা), আইএসএল, আই-লিগ, এবং ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগ থেকে একজন করে প্রতিনিধি, এবং রেফারি ও কোচদের থেকে দুজন করে প্রতিনিধি। এর ফলে রাজ্য সংস্থাগুলির ভোট দুই থেকে একে কমে যাবে।
  • মেয়াদ সীমা: একজন ব্যক্তি সর্বাধিক ১২ বছর পদে থাকতে পারবেন, টানা দুটি চার বছরের মেয়াদ সহ।
  • বয়সসীমা: কর্মকর্তাদের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৭০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে।

আইএসএল-এর উপর প্রভাব
এই রায়ের একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল)-এর উপর। এআইএফএফ এবং এফএসডিএল-এর মধ্যে মাস্টার রাইটস অ্যাগ্রিমেন্ট (এমআরএ) ২০২৫ সালের ৮ ডিসেম্বর শেষ হচ্ছে। এই চুক্তির নবায়ন নিয়ে আলোচনা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে, কারণ নতুন সংবিধান গৃহীত হলে নতুন নির্বাহী কমিটির সঙ্গে এই আলোচনা করতে হবে। ফলে, ২০২৫-২৬ আইএসএল মরসুম বর্তমানে স্থগিত রয়েছে, যা ক্লাব, খেলোয়াড়, এবং সমর্থকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

এআইএফএফ-এর বিবৃতি অনুযায়ী, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের অপেক্ষায় এমআরএ নবায়ন নিয়ে আলোচনা স্থগিত রয়েছে।” তবে, তারা আইএসএল-এর ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে সব সম্ভব পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছে। এই অনিশ্চয়তা ভারতীয় ফুটবলের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ, কারণ আইএসএল দেশের শীর্ষ ফুটবল লিগ হিসেবে ক্লাব এবং খেলোয়াড়দের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

Advertisements

রায়ের গুরুত্ব
এই রায় ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। নতুন সংবিধান গৃহীত হলে, এটি ফুটবল শাসনব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক করবে। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের বর্ধিত প্রতিনিধিত্ব এবং মেয়াদ ও বয়সসীমার বিধান ফেডারেশনের কার্যকারিতা বাড়াবে। অ্যামিকাস কিউরি গোপাল শঙ্করনারায়ণন বলেছেন, “এই সংবিধান ভারতীয় ফুটবল এবং ক্রীড়া জগতের জন্য একটি বড় পুনরায় শুরু হবে।”

তবে, ফিফার নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি রয়েছে, বিশেষ করে যদি নতুন সংবিধান ফিফার নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়। ২০২২ সালে ফিফা CoA-কে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এই ঝুঁকি এড়াতে সুপ্রিম কোর্ট এবং এআইএফএফ-এর সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।

সম্ভাব্য প্রভাব
এই রায় খেলোয়াড়দের উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, এবং বাণিজ্যিক বিনিয়োগের উপর প্রভাব ফেলবে। আইএসএল-এর ধারাবাহিকতা এবং নতুন নির্বাহী কমিটি গঠন এই রায়ের উপর নির্ভর করবে। এছাড়া, এই রায় ভারতীয় ফুটবলের আন্তর্জাতিক মর্যাদা এবং ফিফা ও এএফসি-র সঙ্গে সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলবে।

আজ সুপ্রিম কোর্টের রায় ভারতীয় ফুটবলের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। নতুন সংবিধান গৃহীত হলে, এটি ফুটবলের শাসনব্যবস্থাকে আধুনিক এবং স্বচ্ছ করবে, যা দীর্ঘমেয়াদে খেলোয়াড়দের উন্নয়ন এবং ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়াতে সহায়ক হবে। তবে, আইএসএল-এর ভবিষ্যৎ এবং ফিফার সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি এই রায়কে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। ভারতীয় ফুটবলের সমর্থক, ক্লাব, এবং খেলোয়াড়রা এই রায়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছে, যা ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ গঠন করবে।