কলকাতা ফুটবল লিগের ২০২৫ (CFL 2025) মরসুমে বৃহস্পতিবার দিনটি ছিল নাটকীয় মোড়ের, উত্থান-পতনের সাক্ষী। একদিকে ভবানীপুর ক্লাব (Bhawanipore FC) দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন করে উয়াড়িকে (Wari AC) ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে নিজেদের পুরনো ছন্দে ফেরার বার্তা দিল। অন্যদিকে খিদিরপুরের (Kidderpore SC) বিরুদ্ধে হেরে তৃতীয় ম্যাচেও জয়হীন থেকে গেল ঐতিহ্যশালী মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব (Mohammedan SC)।
নওবা মেইতেইয়ের হ্যাটট্রিকে মহামেডান ফের ব্যর্থ
এদিনের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মহামেডান স্পোর্টিং মুখোমুখি হয়েছিল খিদিরপুর ক্লাব। মরসুমে এখনও পর্যন্ত একটি জয়ও না পাওয়া সাদা-কালো বাহিনী এই ম্যাচেও জয়বঞ্চিত থেকে গেল। দলের অধিনায়ক দীনেশ মেইতেই কার্ড সমস্যার কারণে খেলতে পারেননি। তার অনুপস্থিতি স্পষ্ট ছিল মাঠের পারফরম্যান্সে।
প্রথমার্ধে দুই দলই গোল করে ম্যাচে সমতা বজায় রাখে। মহামেডানের হয়ে গোল করেন সজল বাগ, খিদিরপুরের হয়ে শুরুতেই গোল করেন নওবা মেইতেই। দ্বিতীয়ার্ধে ফের এগিয়ে যায় খিদিরপুর, আবারও গোল করেন নওবা। ৮২ মিনিটে সমতায় ফেরে মহামেডান, গোলদাতা অ্যাডিশন সিং। কিন্তু ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেন নওবা মেইতেই। ৮৬ মিনিটে হ্যাটট্রিক সম্পূর্ণ করে খিদিরপুরকে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে দেন তিনি। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে মহামেডানের হতাশা আরও বাড়ে।
তিন ম্যাচে মাত্র এক পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলে নীচের দিকে অবস্থান করছে মহামেডান। কোচ মেহরাজউদ্দিন ওয়াডু বলেন, “আমরা বারবার পিছিয়ে পড়ছি। কিছু মিসিং লিঙ্কস আছে, সেগুলো দ্রুত ঠিক না করলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হবে।”
ভবানীপুরের জয়ের পথে বিদ্যাসাগরের জোড়া ঝলক
অন্যদিকে টানা এক হার এবং একটি ড্র’র পরে ভবানীপুর ক্লাবের সামনে এই ম্যাচটি ছিল আত্মবিশ্বাস ফেরানোর চূড়ান্ত সুযোগ। সেই সুযোগকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে, উয়াড়িকে একপ্রকার দাঁড়াতেই দিল না আকাশি-সাদা বাহিনী। যদিও প্রথমার্ধে বেশ চাপ তৈরি করলেও গোলের দেখা পায়নি তারা। সুকুরাম সর্দার, বিদ্যাসাগর সিং, জোজোরা একাধিকবার আক্রমণ শানালেও উয়াড়ির রক্ষণভাগ প্রথমার্ধে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
দ্বিতীয়ার্ধে চিত্রনাট্য পাল্টে যায়। ৫৪ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে ভবানীপুরকে এগিয়ে দেন বিদ্যাসাগর। এর ঠিক তিন মিনিট পরে জোজোর দুর্দান্ত ফিনিশিং থেকে ব্যবধান বাড়ায় তারা। উয়াড়ির রক্ষণ তখন একপ্রকার দিশেহারা। এরপর ৬১ মিনিটে ফের গোল করে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন বিদ্যাসাগর। মাঝমাঠে সামাদ, রিকিরা পুরো খেলার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে তুলে নেন। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ভবানীপুরকে। ম্যাচ শেষ হয় ৩-০ গোলে।
এই জয় ভবানীপুরের কাছে শুধুই তিন পয়েন্ট নয়, বরং আত্মবিশ্বাসের সংজ্ঞা। কোচের ভাষায়, “এই জয়টা আমাদের দলকে নতুন করে গড়ার রাস্তা দেখাবে।”
এই ম্যাচগুলির পরিপ্রেক্ষিতে লিগ টেবিলে বড়সড় পরিবর্তন এসেছে। ভবানীপুর তাদের অবস্থান মজবুত করল, অন্যদিকে মহামেডান আরও পিছিয়ে গেল। খিদিরপুরের মতো কম আলোচনায় থাকা দল হ্যাটট্রিক নায়কের দৌলতে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এই নাটকীয় লড়াই আরও একবার প্রমাণ করে দিল, কলকাতা ফুটবলে কোনো কিছুই আগাম বলা যায় না। মাঠে নামলেই প্রতিপক্ষ কে, সেটা বড় কথা নয়, জয় শেষ কথা বলে সেই দলের জন্যই।
Mohammedan SC lost against Kidderpore SC by 3-2 goal in CFL 2025