ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আরেকটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক অর্জিত হয়েছে (Enemy Drones)। আকাশ অস্ত্র ব্যবস্থার উন্নত সংস্করণ ‘আকাশ প্রাইম’ লাদাখ সেক্টরে উচ্চ উচ্চতায় পরীক্ষার সময় দুটি হাই-স্পিড মানববিহীন আকাশযান (ড্রোন) সফলভাবে ধ্বংস করেছে। এই পরীক্ষা ৪,৫০০ মিটারের বেশি উচ্চতায় পরিচালিত হয়েছে, যা এই অস্ত্র ব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং উন্নত প্রযুক্তির প্রমাণ দেয়।
আকাশ প্রাইমে সংযোজিত দেশীয়ভাবে উন্নত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি (আরএফ) সিকার প্রযুক্তি এই পরীক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই সাফল্য ভারতের ‘আত্মনির্ভর ভারত’ উদ্যোগের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এবং দেশীয় প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতি।
আকাশ প্রাইমের পরীক্ষা ও কার্যকারিতা
লাদাখের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে পরিচালিত এই পরীক্ষায় আকাশ প্রাইম তার অত্যাধুনিক ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। এই অস্ত্র ব্যবস্থাটি বিশেষভাবে ৪,৫০০ মিটারের বেশি উচ্চতায় কাজ করার জন্য কাস্টমাইজ করা হয়েছে, যা উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলের মতো চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে যুদ্ধের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষার সময় দুটি হাই-স্পিড মানববিহীন আকাশযানকে টার্গেট করা হয়, এবং আকাশ প্রাইম সফলভাবে তাদের নিখুঁতভাবে ধ্বংস করেছে।
এই পরীক্ষায় অস্ত্র ব্যবস্থার নির্ভুলতা, গতি এবং নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণিত হয়েছে।ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)-এর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আকাশ প্রাইমে সংযোজিত আরএফ সিকার প্রযুক্তি সম্পূর্ণ দেশীয়ভাবে তৈরি। এই সিকার টার্গেটের গতিবিধি ট্র্যাক করে এবং উচ্চ গতিতে চলমান বস্তুকে নির্ভুলভাবে ধ্বংস করতে সক্ষম। এই প্রযুক্তি ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করেছে এবং বৈদেশিক প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা কমিয়েছে।
আকাশ অস্ত্র ব্যবস্থার বিবর্তন
আকাশ অস্ত্র ব্যবস্থা ভারতের সমন্বিত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি ডিআরডিও দ্বারা তৈরি এবং ভারত ডায়নামিক্স লিমিটেড (বিডিএল) দ্বারা উৎপাদিত হয়। আকাশ প্রাইম এই ব্যবস্থার একটি উন্নত সংস্করণ, যা আগের সংস্করণের তুলনায় উন্নত নির্ভুলতা, দীর্ঘ পরিসর এবং উচ্চ উচ্চতায় কাজ করার ক্ষমতা প্রদর্শন করে।
এই অস্ত্র ব্যবস্থা ২৫ কিলোমিটার পরিসরে শত্রুপক্ষের বিমান, হেলিকপ্টার এবং মানববিহীন আকাশযান ধ্বংস করতে সক্ষম। উন্নত আরএফ সিকার এবং রাডার প্রযুক্তির সংযোজন এটিকে আরও কার্যকর করেছে।লাদাখের মতো উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে এই অস্ত্র ব্যবস্থার কার্যকারিতা ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশলের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
এই অঞ্চলটি ভারত-চীন সীমান্ত বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত, এবং আকাশ প্রাইমের সফল পরীক্ষা ভারতীয় সেনাবাহিনীর আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে।
আত্মনির্ভর ভারতের প্রতিফলন
আকাশ প্রাইমের সাফল্য ভারতের ‘আত্মনির্ভর ভারত’ উদ্যোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দেশীয়ভাবে তৈরি আরএফ সিকার প্রযুক্তি এবং উন্নত রাডার সিস্টেম এই অস্ত্র ব্যবস্থাকে বিশ্বমানের করে তুলেছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এই সাফল্যের জন্য ডিআরডিও এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, “আকাশ প্রাইমের সফল পরীক্ষা ভারতের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক অর্জন। এটি আমাদের দেশীয় প্রযুক্তির শক্তি এবং বিজ্ঞানীদের প্রতিভার প্রমাণ।” তিনি আরও বলেন, এই অস্ত্র ব্যবস্থা ভারতীয় সেনাবাহিনীর আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষমতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
রাজনৈতিক ও কৌশলগত প্রভাব
আকাশ প্রাইমের সফল পরীক্ষা ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশলের উপর গভীর প্রভাব ফেলবে। লাদাখের মতো সংবেদনশীল সীমান্ত অঞ্চলে এই অস্ত্র ব্যবস্থার কার্যকারিতা ভারতের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতিকে আরও শক্তিশালী করবে। এছাড়া, এই সাফল্য ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানির সম্ভাবনাও বাড়িয়েছে। আকাশ অস্ত্র ব্যবস্থা ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশে রপ্তানির জন্য আলোচনায় রয়েছে, এবং আকাশ প্রাইমের উন্নত ক্ষমতা এই সম্ভাবনাকে আরও উজ্জ্বল করেছে।
শিশুপর্ন-কাণ্ডে ধৃত ভারতীয়ের সঙ্গে AAP নেতাদের ‘যোগসাজশ’? মুখে কুলুপ মান সরকারের
জনমনে প্রভাব
এই পরীক্ষার সাফল্য ভারতীয় জনগণের মধ্যে গর্ব ও আত্মবিশ্বাসের সঞ্চার করেছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে ডিআরডিও এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রশংসা করেছেন। একজন এক্স ব্যবহারকারী লিখেছেন, “আকাশ প্রাইমের সাফল্য ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষমতার একটি নতুন অধ্যায়। এটি আমাদের বিজ্ঞানীদের প্রতিভা এবং দেশীয় প্রযুক্তির শক্তির প্রমাণ।” তবে, কিছু বিরোধী নেতা এই সাফল্যকে নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসেবে দেখছেন, যদিও সরকার এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
আকাশ প্রাইমের সফল পরীক্ষা ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। লাদাখের উচ্চ উচ্চতায় দুটি হাই-স্পিড ড্রোন ধ্বংস করার মাধ্যমে এই অস্ত্র ব্যবস্থা তার কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে। দেশীয় আরএফ সিকার প্রযুক্তির সংযোজন ভারতের আত্মনির্ভরতার লক্ষ্যকে আরও এগিয়ে নিয়েছে।
এই সাফল্য কেবল ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্ষমতা বৃদ্ধি করেনি, বরং আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির মর্যাদাও বাড়িয়েছে। আগামী দিনে আকাশ প্রাইম ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কাজ করবে।