২০১৪ সালে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL) ওডিশা এফসির (Odisha FC) যাত্রা শুরু হয়েছিলো অনেক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে। সময়ের সাথে তারা রীতিমতো এক উত্তরণের গল্প লিখে ফেলেছে। ওডিশা এফস’র শেষ কয়েক বছরের যাত্রা অনেক চড়াই-উৎরাইয়ে ভরা। সেই গল্পের পাতায় যারা সবচেয়ে উজ্জ্বল, তাদের নিয়েই আইএসএল তৈরি করল ক্লাবের সর্বকালের সেরা একাদশ।
গোলরক্ষক: অমরিন্দর সিং
তালিকার সবচেয়ে সহজ পছন্দ। ২০২২-২৩ মরসুমে যোগ দিয়েই অমরিন্দর হয়ে ওঠেন ডাগআউটের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ৬৯ ম্যাচে ১৫টি ক্লিন শিট, যার মধ্যে ২০২৩-২৪ সিজনে ৯টি। তার দুর্দান্ত সেভ, নেতৃত্বগুণ এবং ডিফেন্স সাজানোর ক্ষমতা তাকে ওডিশার পোস্টের নিচে সেরা করে তুলেছে।
রাইট ব্যাক: অময় রানাওয়াড়ে
দুই মরসুমের ৪৬ ম্যাচ খেলেছেন। শুধু ডিফেন্স নয়, আক্রমণেও সমান কার্যকর ছিলেন এই ফুল-ব্যাক। শুভম সরঙ্গির স্থানীয় ফ্যান-ফলোয়িং থাকলেও, সফল মরসুমে রানাওয়াড়ের অবদান ছিল আরও চোখে পড়ার মতো।
সেন্টার-ব্যাক: কার্লোস ডেলগাদো ও মুর্তাদা ফল
ডেলগাদো হলেন ক্লাবটির ইতিহাসে অন্যতম দীর্ঘমেয়াদি বিদেশি। ২০১৯-২০ সালে প্রথমবার যোগ দিয়েছিলেন, এরপর ফিরে এসে আরও ৭৯ ম্যাচ খেলেছেন। অন্যদিকে, মুর্তাদা ফল ছিলেন প্রতিপক্ষ বক্সে গোলের হুমকি। এই দুই ডিফেন্ডার একসাথে ক্লাবের ডিফেন্সকে করে তুলেছেন দুর্ভেদ্য প্রাচীর।
লেফট ব্যাক: জেরি লালরিনজুয়ালা
২০২৩ সালে ক্লাবে যোগ দিয়েই দলে থিতু হয়ে যান। আগ্রাসী ওভারল্যাপ এবং নিখুঁত ক্রসিংয়ের জন্য পরিচিত জেরি। সাহিল পানওয়ার বা স্যাভিয়র গামা থাকলেও, জেরির অবদান সাম্প্রতিক সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
রক্ষণাত্মক মিডফিল্ড: আহমেদ জাহু ও পুইটেয়া
আহমেদ জাহু ছিলেন কৌশলের কান্ডারি। ২০২৩ সালে যোগ দিয়ে মাঝমাঠে ছিলেন কার্যত এক ‘দীপ লাইং প্লেমেকার’। তার পাশে পুইটেয়া ছিলেন ক্লাবের ‘ইঞ্জিন’। দুর্দান্ত কভারেজ, প্রেসিং ও কাউন্টার শুরু করার দক্ষতায় তিনি জাহৌ’র আদর্শ সঙ্গী। বিনীত রায়ের স্থিরতা সত্ত্বেও, পুইটেয়ার সাম্প্রতিক পারফর্ম্যান্স তাকে এগিয়ে রাখে।
অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার: ইসাক ভানলালরুয়াতফেলা
২০২০ থেকে ক্লাবের হয়ে খেলেছেন ৬১ ম্যাচ, করেছেন ১০ গোল ও ৯ অ্যাসিস্ট। তরুণ এই মিডফিল্ডারের ড্রিবলিং ও চতুর পাসিং ওডিশার আক্রমণকে প্রাণ দিয়েছে।
লেফট উইং: নন্দকুমার শেখর
২০১৯ সাল থেকে ক্লাবে, ২০২২-২৩ সিজনে ছয় গোল করে নিজের সেরা পারফর্ম্যান্স দেন। তার গতি, কাট-ইন ও আক্রমণাত্মক খেলা তাকে ক্লাবের ফ্যান ফেভারিটে পরিণত করেছে।
রাইট উইং: জেরি মাওইহমিংথাঙ্গা
ওডিশা এফসির ইতিহাসে সর্বাধিক ম্যাচ খেলা খেলোয়াড়। ১১২ ম্যাচে ১৭ গোল ও ১৭ অ্যাসিস্ট। ডিয়েগো মউরিসিও সঙ্গে তার বোঝাপড়া ছিল দুর্দান্ত।
স্ট্রাইকার: ডিয়েগো মউরিসিও
৪৪ গোল, ১৩ অ্যাসিস্ট, এবং একটি গোল্ডেন বুট। ওডিশার ইতিহাসের সেরা গোলস্কোরার। তার গোলমেশিন হয়ে ওঠার গল্পে মিশে আছে ক্লাবের উত্থানের ইতিহাস।
কোচ: সার্জিও লোবেরা
২০২৩ সালে দায়িত্ব নিয়েই ক্লাবকে ইতিহাসের সেরা মরসুম উপহার দেন। হোম গ্রাউন্ডে অপরাজিত থাকা, প্লে-অফ ও সেমি-ফাইনালে ওঠা — সবই লোবেরার নিখুঁত ফুটবল দৃষ্টিভঙ্গির ফসল।
ওড়িশা এফসির এই সর্বকালের সেরা একাদশ কেবল কিছু ভালো খেলোয়াড়ের নাম নয়, বরং এটি একটি সময়ের দল, একটি অধ্যায়ের প্রতিচ্ছবি। এই একাদশে রয়েছে স্ট্যাটিস্টিক্স, আবেগ, এবং ঐতিহাসিক মুহূর্তের ছাপ। ওডিশার যাত্রা এখনও চলছে, তবে এই একাদশ ঠিকই স্মরণীয় হয়ে থাকবে ইতিহাসের পাতায়।
In ISL Odisha FC all-time playing XI not only boasts consistent performers but also includes fan favourites