২০২৬ সালে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগেই সরকারি ব্যয়ে লাগাম টানতে বড় সিদ্ধান্ত নিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার (West Bengal Government)। নবান্ন থেকে রাজ্যের সমস্ত দপ্তরের জন্য নতুন ব্যয় নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে, যেখানে একাধিক দফতরের প্রকল্প অনুমোদনের উর্ধ্বসীমা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই নির্দেশিকার মূল উদ্দেশ্য— সরকারি (West Bengal Government) কোষাগারে অতিরিক্ত চাপ রোধ করা এবং জনস্বার্থে আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে আরও শক্তিশালী করে তোলা। ২০২৩ সালের পুরনো গাইডলাইনের সঙ্গে তুলনা করলে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, রাজ্য সরকার এবার অনেক বেশি রক্ষণশীল পথে হাঁটতে চাইছে।
কোন দফতরে কত টাকার অনুমোদন?
নবান্নের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে—
সেচ, পূর্ত, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন, পুর ও নগর উন্নয়ন দফতরগুলি এখন থেকে সর্বোচ্চ ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত প্রকল্প অনুমোদন দিতে পারবে।
(২০২৩ সালে এই সীমা ছিল ৫ কোটি টাকা)
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন ও সুন্দরবন উন্নয়ন দফতর আগে এই দফতরগুলি ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত অনুমোদন দিত, এবার তা কমিয়ে ১ কোটি টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
আবাসন, MSME (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প), তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর তাদের জন্য উর্ধ্বসীমা নির্ধারিত হয়েছে ৭৫ লক্ষ টাকা।
বাকি অন্যান্য দফতরগুলির ক্ষেত্রে অনুমোদনের সর্বোচ্চ সীমা রাখা হয়েছে ৫০ লক্ষ টাকা।
কেন এই খরচ নিয়ন্ত্রণ?
নবান্ন সূত্রে খবর, গত কয়েক বছরে একাধিক প্রকল্পে অনুমোদনের সীমা ছাড়ানো ও অতিরিক্ত ব্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। ফলে কোষাগারে চাপ বাড়ছে এবং অডিটে প্রশ্ন উঠছে। তাই আগাম সতর্কতা হিসেবে প্রত্যেক দফতরকে তাদের আর্থিক ক্ষমতা অনুযায়ী সীমার মধ্যে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও, বিধানসভা নির্বাচনের আগে সরকারের আর্থিক ইমেজ ঠিক রাখতে এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের সমালোচনা এড়াতেও এই সিদ্ধান্ত কার্যকর বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই নির্দেশিকা কার্যকর হলে—
প্রতিটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে বেশি যাচাই-বাছাই ও পরিকল্পনার প্রয়োজন হবে।
দপ্তরগুলিকে বেশি বাজেট প্রয়োজন হলে Finance Department-এর কাছে আলাদা অনুমোদন চাইতে হবে।
ছোট প্রকল্পের ক্ষেত্রে সময় ও খরচ বাঁচবে, কারণ ছোট খাতে স্বয়ংক্রিয় অনুমোদনের সীমা নির্ধারিত হয়েছে।
নবান্নের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, এই পদক্ষেপ কোনওভাবেই উন্নয়ন রোখার উদ্দেশ্যে নয়, বরং উন্নয়ন যেন বাস্তবভিত্তিক হয়, এবং খরচ যেন স্বচ্ছ, পরিকল্পিত ও গ্রহণযোগ্য হয়, সেই লক্ষ্যেই এই গাইডলাইন।
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে রাজ্য সরকার নিজেদের সাজিয়ে নিতে চাইছে। সেই পথেই প্রথম বড় পদক্ষেপ হিসেবে ধরা হচ্ছে নবান্নের এই ব্যয় নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকা। এখন দেখার বিষয়, কীভাবে বিভিন্ন দফতর এই নতুন নিয়ম মানিয়ে নিতে পারে এবং তাতে রাজ্যের উন্নয়ন প্রকল্পগুলির গতি কতটা প্রভাবিত হয়।