কলকাতা: কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের ডাকে মঙ্গলবার দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে সাধারণ ধর্মঘট। তার প্রভাব পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে। কলকাতা থেকে শুরু করে জেলাশহর, শিল্পাঞ্চল, উত্তরবঙ্গ ও উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে বন্ধকে কেন্দ্র করে কোথাও বিক্ষোভ, কোথাও পথ ও রেল অবরোধ, আবার কোথাও পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির চিত্র ধরা পড়েছে।
যাদবপুরে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ
ধর্মঘটের সমর্থনে কলকাতার যাদবপুর, লেকটাউন এবং গাঙ্গুলিবাগানে সক্রিয় হন বন্ধ সমর্থকেরা। যাদবপুরে রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান ধর্মঘটীরা। বেশ কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে যান চলাচল। গাঙ্গুলিবাগান এলাকায় সকাল থেকেই মিছিল বার হয়। লেকটাউনে পথ অবরোধের চেষ্টা হলে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিন বন্ধের অন্যতম প্রভাব পড়ে রেল পরিষেবায়। বেলঘরিয়া ও দুর্গাপুর রেল স্টেশনে ট্রেন আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেন ধর্মঘটীরা। এর ফলে শিয়ালদহ মেন শাখার ট্রেন চলাচল সাময়িকভাবে ব্যাহত হয় সকাল সাড়ে ৮টার পর। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার যাদবপুর স্টেশনেও একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। সেখানে ট্রেন থামানোর চেষ্টা হলেও পুলিশ দ্রুত হস্তক্ষেপ করে ধর্মঘটীদের সরিয়ে দেয়।
ডোমজুড়ে উত্তেজনা Nationwide Strike Impact
ডোমজুড়েও উত্তেজনার ছবি ধরা পড়েছে। সেখানে বন্ধ সমর্থকেরা রাস্তা আটকাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে একাধিকবার বচসার সৃষ্টি হয়। পুলিশের বাধায় শেষ পর্যন্ত অবরোধ তোলেন ধর্মঘটীরা, তবে পরিস্থিতি কিছুক্ষণ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
হুগলি জেলার একাধিক স্থানে ধর্মঘটের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। হুগলি স্টেশনে বন্ধ সমর্থকেরা রেল অবরোধ করেন। হাওড়াগামী ব্যান্ডেল লোকাল ট্রেন রেল লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ধর্মঘটীদের কারণে কিছুক্ষণ থমকে যায়। পুলিশ এসে অবরোধ সরিয়ে দেয়, তবে এই সময়ে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়।
ভদ্রেশ্বরে নর্থ জুটমিলের গেটে পিকেটিংয়ে
রাজ্যের বিভিন্ন জুটমিল অঞ্চলেও বন্ধের প্রভাব ছিল লক্ষণীয়। ভদ্রেশ্বরের শ্যামনগর নর্থ জুটমিলের গেটে সকাল থেকেই পিকেটিংয়ে শামিল হন শ্রমিকেরা। বাঁশবেড়িয়ার গ্যাঞ্জেস জুটমিলেও শ্রমিকদের মধ্যে বন্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা গিয়েছে। জেলার অন্যান্য মিলগুলিতেও কর্মীদের হাজিরা ছিল উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
উত্তরবঙ্গের কোচবিহার জেলায় বন্ধের প্রভাব তুলনামূলক বেশি দেখা যায়। সকাল থেকে অধিকাংশ বাজার-হাট ও দোকানপাট বন্ধ থাকে। বেসরকারি পরিবহণ ছিল কার্যত স্তব্ধ। তবে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বাস চলাচল করলেও, চালকদের হেলমেট পরে গাড়ি চালাতে দেখা যায়, যা ছিল বেশ নজরকাড়া চিত্র। বন্ধ সমর্থনে সকালের দিকেই মিছিল বের হয় শহরের বিভিন্ন অংশে। তবে পাল্টা বন্ধবিরোধী মিছিলও হয়েছে।
বালুরঘাটে উত্তেজনা
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট শহরে সকাল ৬টা থেকেই বন্ধের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। সরকারি বাসস্ট্যান্ডের সামনে পিকেটিং করে রাস্তা অবরোধ করেন বামপন্থী কর্মী-সমর্থকেরা। বালুরঘাট-মালদহ রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বসেন তাঁরা। এর ফলে অনেক দূরপাল্লার বাস আটকে পড়ে। প্রশাসন অবশ্য পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্রিয় ছিল।
অন্যদিকে, প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশার খুরদা জেলাতেও ধর্মঘটের ডাকে সাড়া মেলে। জাতীয় সড়ক অবরোধ করে সিটু সমর্থকেরা। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালালেও কিছুক্ষণ জাতীয় সড়কে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়। এদিকে, বিহারের পাটনার মানেরের ৩০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন বন্ধ সমর্থকেরা। টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ। জেহনাবাদ স্টেশনে রেল অবরোধ করে ধর্মঘটীরা।
একাধিক জায়গায় মিছিল
এই ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সকালে কলকাতার এন্টালি মার্কেট থেকে কেন্দ্রীয় মিছিল বের করার কথা ঘোষণা করে সিটু-সহ একাধিক বাম ঘরানার ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন- যেমন আইএনটিইউসি, এআইসিসিটিইউ, এআইটিইউসি, ইউটিইউসি ও এআইইউটিইউসি। একইসঙ্গে শিয়ালদহ, যাদবপুর ও খিদিরপুর থেকেও পৃথক পৃথক মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে মঙ্গলবারের ধর্মঘটে রাজ্যজুড়ে আংশিক প্রভাব দেখা গেলেও, কিছু এলাকায় উত্তেজনা এবং পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং নাগরিক দুর্ভোগ কমাতে নজরদারি চালানো হচ্ছে।