১১ মাসেই ইতি, ভারতীয় ফুটবলের দায়িত্ব ছাড়ার পর ‘বিস্ফোরক’ মার্কুয়েজ

২ জুলাই ভারতীয় কোচের পদ থেকে মানোলো মার্কুয়েজের (Manolo Marquez) পদত্যাগের কথা সরকারি ভাবে ঘোষণা করেছিল ফেডারেশন (AIFF)। এবার ভারতীয় দলের (Indian Football Team) কোচের…

Manolo Marquez confident on Indian Football Team 

২ জুলাই ভারতীয় কোচের পদ থেকে মানোলো মার্কুয়েজের (Manolo Marquez) পদত্যাগের কথা সরকারি ভাবে ঘোষণা করেছিল ফেডারেশন (AIFF)। এবার ভারতীয় দলের (Indian Football Team) কোচের দায়িত্ব ছাড়ার পর অবশেষে মুখ খুললেন স্প্যানিশ কোচ (Spanish Coach)। তিনি জানিয়েছেন, ফেডারেশনকে এপ্রিলেই ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু কল্যাণ চৌবের নেতৃত্বাধীন কমিটি তাঁকে জুন উইন্ডো পর্যন্ত থাকার অনুরোধ করেছিল।

   

২০২৪ সালে বিতর্কিতভাবে বরখাস্ত হওয়া ইগর স্টিমাচের স্থলাভিষিক্ত হন মার্কুয়েজ। তাঁর অধীনে জাতীয় দল মাত্র আটটি ম্যাচ খেলেছে, যার মধ্যে জয় এসেছে মালদ্বীপের বিরুদ্ধে একটি প্রীতি ম্যাচে। হারের সংখ্যাও কম নয়—তিনটি পরাজয় ও চারটি ড্র। কোচ হিসেবে তাঁর জয় শতাংশ মাত্র ১৩%, যা সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম সর্বনিম্ন।

স্পেনের নামী ক্রীড়া দৈনিক Marca-কে দেওয়া এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে মার্কুয়েজ বলেন, “আমি এপ্রিলেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম। ওরা একমাস ধরে আমাকে থেকে যেতে অনুরোধ করে। শেষমেশ আমার সিদ্ধান্ত মেনেই তারা আমাকে ছাড়ে।”

তবে খারাপ ফলাফল নয়, বরং সিস্টেমের ভেতরের অসঙ্গতিই তাঁকে সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছে। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, “ভারতীয় জাতীয় দলকে কোচিং করানো ছিল আমার স্বপ্ন। কিন্তু যখন দেখলাম সব দল এক নিয়মে খেলে না, তখনই বুঝে গিয়েছিলাম, এই জায়গা আমার জন্য নয়।”

২০২৭ সালের এএফসি এশিয়ান কাপ যোগ্যতা অর্জনে ভারতের অভিযান শুরু থেকেই ছিল হতাশাজনক। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ড্র করার পর হংকং বিরুদ্ধে অতিরিক্ত সময়ে হেরে যায় ভারত। এই পরাজয়ের পরেই আসলে মার্কুয়েজের কোচিং ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে পড়ে।

Advertisements

তবে কোচ জানান, মাঠের বাইরের পরিবেশ খেলোয়াড়দের ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিল। সেই প্রসঙ্গে বলেন, “হংকং ম্যাচের তিনদিন আগেই পুরো দল জানত আমি চলে যাচ্ছি। এই পরিস্থিতিতে খেলোয়াড়দের মানসিকভাবে প্রস্তুত রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।”

একই সঙ্গে জাতীয় দল ও এফসি গোয়ার কোচ হিসেবে কাজ করাও তাঁর কোচিং দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। একদিকে সমালোচনা আসে ‘গোয়া-ঘেঁষা’ দল নির্বাচন নিয়ে, অন্যদিকে ক্লাব ও দেশের জন্য পর্যাপ্ত সময় না দেওয়ার অভিযোগও ওঠে। প্রাক্তন কোচ বলেন, “জাতীয় দল এবং ক্লাব—দুটো দিক থেকেই চাপ ছিল। কোথাও কিছু ভুল হয়েছে, সেটা আমি মানি। কিন্তু ফলাফল একটু ভালো হলে হয়ত আমি এখনও কোচের পদে থাকতাম।”

জাতীয় দলের হতাশার মধ্যেও ক্লাব স্তরে কিন্তু সাফল্যের রেখাচিত্র তুলেছেন এই স্প্যানিশ কোচ। হায়দরাবাদ এফসির কোচ হিসেবে ২০২২ সালে আইএসএল ট্রফি জেতান। পরে এফসি গোয়ার দায়িত্ব নিয়ে দলকে সুপার কাপ জেতানোর পাশাপাশি ২০২৪-২৫ মরসুমে আইএসএল লীগ টেবিলে দ্বিতীয় স্থানে তোলেন। এফসি গোয়ার অধীনে তাঁর কোচিংয়ে ৬২ ম্যাচে এসেছে ৩৮টি জয়, ১২টি ড্র এবং ১২টি পরাজয়। ক্লাব ফুটবলে অ্যাটাকিং ব্র্যান্ডের খেলার জন্য প্রশংসাও কুড়িয়েছেন।

সর্ব ভারতীয় ফুটবল সংস্থার এক্সিকিউটিভ কমিটির বৈঠকে ২ জুলাই তাঁর বিদায় সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই শোনা যাচ্ছে, এফসি গোয়া তাঁর সঙ্গে নতুন চুক্তির পরিকল্পনায় রয়েছে। তিনি আগামী মাসে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এ ওমানের ক্লাব আল সিব-এর বিরুদ্ধে গোয়ার দায়িত্বে থাকবেন বলেও জানানো হয়েছে। ফলে জাতীয় দলের কোচ হিসেবে সংক্ষিপ্ত ও বিতর্কিত অধ্যায় শেষে মানোলো মার্কুয়েজ আবারও ক্লাব ফুটবলে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার সুযোগ পেতে চলেছেন।

Spanish Coach Manolo Marquez breaks silence after exit as coach of Indian Football Team