রাহুল গান্ধীর বিহার নিয়ে মন্তব্যের জবাবে বিস্ফোরক কিশোর, অস্বস্তিতে তৃণমূল

জন সুরাজ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এবং বিশিষ্ট রাজনৈতিক কৌশলবিদ প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishor) সম্প্রতি কংগ্রেস সাংসদ ও লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর একটি মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা…

Prashant Kishor slams rahul gandhi

জন সুরাজ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এবং বিশিষ্ট রাজনৈতিক কৌশলবিদ প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishor) সম্প্রতি কংগ্রেস সাংসদ ও লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর একটি মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। রাহুল গান্ধী বিহারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন, যার জবাবে প্রশান্ত কিশোর বলেছেন, “১৫ বছর ধরে রাহুল গান্ধী লালু প্রসাদ যাদবের সঙ্গে জোট করেছিলেন।

তিনি হয়তো (Prashant Kishor)  বিহারে ঘটে যাওয়া অপরাধের ধারণা রাখেন না… এখন দিল্লিতে বসে তিনি বিহারের অপরাধ দেখতে পাচ্ছেন। যখন বিহারের প্রতিটি বাড়িতে অপহরণ আর লুটপাট হচ্ছিল, তখন রাহুল গান্ধী কোথায় ছিলেন? যখন লালু যাদব রাহুল গান্ধীকে সাহায্য করেছিলেন, তখন বিহারে সবকিছু ঠিক ছিল।

   

আজ যদি নীতিশ কুমার রাহুল গান্ধীকে নেতা হিসেবে মেনে নেন, তবে তিনি বিহারকে আবার সুইজারল্যান্ডের মতো দেখবেন। বিহারে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি এসে নীতিশ কুমারের সঙ্গে ইন্ডিয়া জোট গঠন করেছিলেন। তখন কি বিহার ভালো দেখাচ্ছিল?”

প্রশান্ত কিশোরের সমালোচনার পটভূমি (Prashant Kishor) 

প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishor)  বিহারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রাহুল গান্ধীর সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এই মন্তব্য করেছেন। রাহুল গান্ধী দাবি করেছেন, বিহারে অপরাধের হার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং রাজ্যে শাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এই মন্তব্যের জবাবে কিশোর তাঁর এক্স পোস্টে রাহুল গান্ধীর রাজনৈতিক অবস্থান এবং বিহারে কংগ্রেসের জোট নীতির সমালোচনা করেছেন।

তিনি বিহারের অতীত রাজনৈতিক ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, রাহুল গান্ধী যখন লালু প্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)-এর সঙ্গে জোটে ছিলেন, তখন তিনি বিহারের অপরাধ নিয়ে কোনো কথা বলেননি। একইভাবে, নীতিশ কুমারের জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর সঙ্গে ইন্ডিয়া জোট গঠনের সময়ও তিনি বিহারের পরিস্থিতি নিয়ে কোনো সমালোচনা করেননি।

বিহারের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

বিহারের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে জটিল এবং পরিবর্তনশীল। ১৯৯০-এর দশক থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত লালু প্রসাদ যাদব এবং তাঁর স্ত্রী রাবড়ি দেবীর নেতৃত্বে আরজেডি বিহার শাসন করেছে। এই সময়কালে বিহারে অপরাধ, দুর্নীতি, এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগ ব্যাপকভাবে প্রকাশ পেয়েছিল। প্রশান্ত কিশোর দাবি করেছেন, এই সময়ে কংগ্রেস আরজেডি-র সঙ্গে জোটে ছিল এবং রাহুল গান্ধী বা তাঁর দল বিহারের এই পরিস্থিতি নিয়ে কোনো সমালোচনা করেনি।

পরবর্তীকালে, নীতিশ কুমারের (Prashant Kishor)  নেতৃত্বে জেডি(ইউ) ২০০৫ সাল থেকে বিহারে শাসন করছে, এবং কংগ্রেস বিভিন্ন সময়ে তাদের সঙ্গেও জোট করেছে।২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস এবং জেডি(ইউ) ইন্ডিয়া জোটের অংশ হিসেবে একসঙ্গে কাজ করেছিল।

প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishor)  প্রশ্ন তুলেছেন, তখন রাহুল গান্ধী বিহারের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কেন কিছু বলেননি। তিনি বলেন, “রাহুল গান্ধীর সমালোচনা রাজনৈতিক সুবিধা অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। যখন নীতিশ কুমার তাঁর জোটের সঙ্গী, তখন বিহার সুইজারল্যান্ডের মতো লাগে।”

প্রশান্ত কিশোরের রাজনৈতিক অবস্থান

প্রশান্ত কিশোর,(Prashant Kishor) যিনি একসময় নীতিশ কুমারের রাজনৈতিক কৌশলবিদ ছিলেন, ২০২২ সালে জন সুরাজ পার্টি গঠন করেছেন। তিনি বিহারের রাজনীতিতে একটি বিকল্প শক্তি হিসেবে উঠে আসার চেষ্টা করছেন। তাঁর এই মন্তব্য কংগ্রেস এবং আরজেডি-র বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থানকে আরও স্পষ্ট করে। কিশোর দাবি করেছেন, বিহারের জনগণ এখন আর ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলগুলির “জোটের রাজনীতি” মেনে নিতে প্রস্তুত নয়।

Advertisements

তিনি বিহারে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর জোর দিয়ে তাঁর দলের এজেন্ডা তুলে ধরেছেন।বিহারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিবিহারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক বিতর্কের বিষয়। ১৯৯০-এর দশকে লালু-রাবড়ির শাসনকালে বিহারকে “জঙ্গলরাজ” হিসেবে বর্ণনা করা হতো।

অপহরণ, লুটপাট, এবং দুর্নীতির অভিযোগে রাজ্যের শাসনব্যবস্থা সমালোচিত হয়েছিল। নীতিশ কুমারের শাসনকালে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অপরাধের হার আবার বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিজেপি এবং জেডি(ইউ)-এর জোট সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলি এই ইস্যুতে সমালোচনা করে আসছে।

রাহুল গান্ধীর সাম্প্রতিক মন্তব্যে তিনি বিহারে মহিলাদের নিরাপত্তা, দলিত সম্প্রদায়ের উপর হামলা, এবং অপরাধের বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে, প্রশান্ত কিশোর দাবি করেছেন, এই সমালোচনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং কংগ্রেসের জোট নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাপট

পশ্চিমবঙ্গে এই বিতর্ক তেমন বড় আকার না নিলেও, রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে জোট নীতি এবং আইনশৃঙ্খলার ইস্যু নিয়ে আলোচনা চলছে। তৃণমূল কংগ্রেস, যারা কংগ্রেসের সঙ্গে ইন্ডিয়া জোটে রয়েছে, রাহুল গান্ধীর মন্তব্যকে সমর্থন করলেও, প্রশান্ত কিশোরের (Prashant Kishor) মন্তব্য তাদের জন্য অস্বস্তির কারণ হতে পারে। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেছেন, “বিহারের সমস্যা নিয়ে রাহুল গান্ধী সঠিকভাবে কথা বলেছেন। নীতিশ কুমারের সরকার বিহারের জনগণকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।”

সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া

এক্স-এ প্রশান্ত কিশোরের (Prashant Kishor) মন্তব্য ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ তাঁর যুক্তিকে সমর্থন করে বলেছেন, রাহুল গান্ধীর সমালোচনা রাজনৈতিক সুবিধার জন্য। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “রাহুল গান্ধী যখন লালুর সঙ্গে জোট করেছিলেন, তখন বিহারের জঙ্গলরাজ নিয়ে কিছু বলেননি।

এখন নীতিশের (Prashant Kishor) বিরুদ্ধে কথা বলছেন, কারণ জোট ভেঙেছে।” অন্যদিকে, কংগ্রেস সমর্থকরা বলছেন, রাহুল গান্ধী বিহারের জনগণের পক্ষে কথা বলছেন। এই বিতর্ক বিহারের রাজনীতিতে নতুন গতিশীলতা তৈরি করতে পারে। প্রশান্ত কিশোরের জন সুরাজ পার্টি ২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে একটি বিকল্প শক্তি হিসেবে উঠে আসতে পারে।

ভারতে লঞ্চ হল 2025 Triumph Speed Triple 1200 RS, এখন আরও শক্তিশালী ও আধুনিক

রাহুল গান্ধীর মন্তব্য এবং কিশোরের প্রতিক্রিয়া কংগ্রেস এবং আরজেডি-র জোটের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। পশ্চিমবঙ্গে, যেখানে তৃণমূল এবং কংগ্রেস ইন্ডিয়া জোটে রয়েছে, এই বিতর্ক তাদের সম্পর্কের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে।এই ঘটনা ভারতের রাজনৈতিক দলগুলির জোট নীতি এবং আইনশৃঙ্খলার ইস্যু নিয়ে বৃহত্তর আলোচনার সূত্রপাত করেছে। আগামী দিনে এই বিতর্ক কীভাবে বিহার এবং জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে সকলের দৃষ্টি রয়েছে।