সম্প্রতি কসবাকাণ্ড নিয়ে মুখ খুলে আলোচনায় আসেন তৃণমূল কংগ্রেসের (Rajanya Halder) প্রাক্তন নেত্রী রাজন্যা। তার এই মন্তব্যের পর দলের মধ্যে শোরগোল শুরু হয়েছে। টিএমসিপি-র মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও, সবচেয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন দলেরই শীর্ষ নেতা জুঁই বিশ্বাস। রাজন্যার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি দলের একাধিক (Rajanya Halder) সদস্যকে একান্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ব্যবহার করছেন এবং দলের ভিতরে গোপনে নিজের রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন।
জুঁই বিশ্বাসের তোপ
কসবাকাণ্ডের পর রাজন্যার শত্রুরা একের পর এক আক্রমণ করছেন। তারই মধ্যে, প্রাক্তন তৃণমূল নেত্রী এবং বর্তমান দলের শীর্ষ নেতা জুঁই বিশ্বাস রাজন্যাকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। নাম না করেই তিনি রাজন্যাকে তীব্র কটাক্ষ করেন। তিনি লেখেন, “যোগ্যতা বিচারের জন্যও যোগ্যতা লাগে। যাঁরা একে মাথায় তুলেছিলেন, তাঁদের যোগ্যতা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। না নেত্রী হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে, না অভিনেত্রীর। দুদিনে এসেই নেত্রী? কোভিড কিংবা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে এদের মুখ কেন দেখতে পাওয়া যায় না। শুধু ব্যক্তিগত এজেন্ডা নিয়ে রাজনীতি করতে আসা।”
জুঁই বিশ্বাসের এই মন্তব্য রাজন্যার বিরুদ্ধে দলের অভ্যন্তরে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, “যদি কোনো মহিলার সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটে, তাহলে এতদিন চুপ কেন ছিলেন? তিনি তো একজন পড়াশোনা করা মহিলা। নেত্রী বলছেন নিজেকে, তিনি নিজেকেই যদি রক্ষা করতে না পারেন, তাহলে নেত্রী হিসেবে বাকিদের জন্য কী করবেন?”
রাজন্যার প্রতিক্রিয়া
এদিকে, রাজন্যা এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।(Rajanya Halder) তার দাবি, তিনি কসবাকাণ্ডের ঘটনার পরই দলের শীর্ষ নেতাদের জানিয়ে ছিলেন। রাজন্যার বক্তব্য, “আমি জানি প্রশ্ন উঠছে, আমি তখন কেন বলিনি, এখন কেন বলছি? আসলে আমি তখনই দলকে বলেছি। আমাদের দলে এরকম অনেক মেয়ে রয়েছে, যাদের সঙ্গে এটা হয়েছে। আমি তাদের ভয়েস হিসাবে বলছি। এমন নয় যে, একার বক্তব্য বলছি। আমি আমার হাইয়ার অথরিটিকে জানিয়েছি।”(Rajanya Halder)
তবে, তার এই বক্তব্যের পরও দলের মধ্যে তার বিরুদ্ধে ক্ষোভের শেষ নেই। নেতাদের প্রশ্ন, রাজন্যা কেন এতদিন চুপ ছিলেন এবং কেন মিডিয়ার কাছে মুখ খুলে একদিকে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার চেষ্টা করছেন। দলের শীর্ষ নেতাদের মতে, রাজনীতি ও নেতৃত্বে আসতে হলে অতীতে সংঘটিত ঘটনা গোপন না রেখে সরাসরি দল এবং প্রশাসনের কাছে সঠিক সময়ে অভিযোগ জানানো উচিত ছিল। তবেই সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হতো।
প্রিয়দর্শিনী ঘোষের মন্তব্য
এদিকে, কসবাকাণ্ড নিয়ে দলীয় নেতা প্রিয়দর্শিনী ঘোষও রাজন্যার উপর তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “এতদিন কেন চুপ ছিলেন রাজন্যা? কেন দলকে জানাননি? দল বা প্রশাসনের কাছে না গিয়ে মিডিয়ার কাছে মুখ খুলে ‘মুখ’ হওয়ার চেষ্টা করছেন কেন?” তার এই প্রশ্ন রাজন্যার বিরুদ্ধে আরও একবার তীব্র সমালোচনার সূচনা করে। তার মতে, এই ধরনের ঘটনা যদি সত্যিই ঘটে থাকে, তাহলে দলের অভ্যন্তরে সঠিকভাবে প্রতিবাদ জানানো উচিত ছিল।
দিলীপ ঘোষের প্রতিক্রিয়া
এছাড়া, বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষও রাজন্যার এই বিতর্কিত মন্তব্যের বিরুদ্ধে এক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তার মতে, যখন রাজনীতিতে একে অপরকে অগ্রাহ্য করে নেত্রী হওয়ার জন্য লোকজন আসেন, তখন এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়। তিনি বলেন, “হঠাৎ নেতা-নেত্রী হয়ে গেলে, এমনটাই হয়। যে যার মতো আসছে, যে যার মতো চলে যাচ্ছে। নেত্রী তাদের সামলাতেই ব্যস্ত। প্রশাসন কোথায়, কেউ জানে না।”
ভবিষ্যৎ কি?
রাজন্যার এই বিতর্কিত মন্তব্য এবং দলের অভ্যন্তরীণ ক্ষোভের মধ্যে এখন প্রশ্ন উঠেছে, তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী হবে? দলের নেতা-নেত্রীরা যে তাঁকে নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলছেন, তা স্পষ্ট। তবে, এই বিতর্কের শেষে রাজন্যা কি আবার দলের সঙ্গে মিলে কাজ করবেন, নাকি তিনি নিজস্ব পথে হাঁটবেন, তা সময়ই বলবে। রাজনীতিতে এ ধরনের পরিস্থিতি নতুন নয়, তবে রাজন্যার মতো এক প্রাক্তন জনপ্রিয় নেত্রীকে এভাবে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে দেখতে সত্যিই দুঃখজনক।
দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে যদি এই ঘটনা সঠিকভাবে তদন্ত করা না হয়, তাহলে দলের ভিতরে আরও বেশি বিভাজন দেখা দিতে পারে। তাই, রাজনীতিতে একতা এবং সততা বজায় রাখার জন্য দলীয় নেতৃত্বকে আরও সাবধানী হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।