ডায়মন্ড হারবার: উলটোরথের দিনে মাঝসমুদ্রে প্রাণঘাতী বিপদ! ইলিশ ধরতে গিয়ে ফেরার পথে বঙ্গোপসাগরে ডুবে গেল ‘ভাই ভাই’ নামের একটি মাছধরা ট্রলার (Fishing Boat)। ট্রলারটিতে ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘির ১৩ জন মৎস্যজীবী। তবে সৌভাগ্যবশত, তাঁদের সবাইকেই অন্য একটি ট্রলারের তৎপরতায় জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটে ৩০ জুন ভোরে, যখন ‘ভাই ভাই’ ট্রলারটি মাছ (Fishing Boat) ধরে ফেরার পথে ছিল। রথযাত্রার দিন, অর্থাৎ ২৭ জুন তাঁরা সমুদ্রে পাড়ি দেন ইলিশ ধরার উদ্দেশ্যে। কিন্তু ফেরার পথে ট্রলারের নিচে থাকা একটি হোস পাইপ হঠাৎ ফেটে যায়। এর ফলে দ্রুতগতিতে জল ঢুকতে শুরু করে ট্রলারের ভিতর। অল্প সময়ের মধ্যেই ট্রলারটি ভারসাম্য হারিয়ে পুরোপুরি জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
দুর্ঘটনার সময় মৎস্যজীবীরা মাঝসমুদ্রে আটকে পড়েন। কেউ না এগিয়ে এলে মৃত্যু ছিল অবশ্যম্ভাবী। তবে ভাগ্য সহায় ছিল। ঠিক সেই সময় কাছেই ছিল আরেকটি মাছ ধরার ট্রলার, যার নাম ‘আব্বা মায়ের দোয়া’। দূর থেকে ডুবে যেতে থাকা ট্রলার ও বিপদে পড়া মৎস্যজীবীদের দেখে তারা সঙ্গে সঙ্গেই এগিয়ে আসে।
‘আব্বা মায়ের দোয়া’ ট্রলারের মৎস্যজীবীরা ঝাঁপিয়ে পড়েন উদ্ধারকাজে। একে একে সবাইকে জল থেকে তোলা হয়। কেউ গুরুতর আঘাত পাননি। সবার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছেন রায়দিঘি ফিশারম্যান ওয়েলফেয়ার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অলোক হালদার।
তবে ‘ভাই ভাই’ ট্রলারটি আর উদ্ধার করা যায়নি। ট্রলারটি সম্পূর্ণভাবে বঙ্গোপসাগরের জলে ডুবে যায়। ট্রলারের মালিকের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে নিঃসন্দেহে, কিন্তু তাতে দুঃখ নেই, কারণ ১৩টি প্রাণ বেঁচে গিয়েছে।
খবর পাওয়ার পর রায়দিঘিতে যে উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছিল, তা অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে মৎস্যজীবীদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনে। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, “এই খবর না পেলে আমরা ধরে নিয়েছিলাম, ওরা আর ফিরবে না।”
রায়দিঘি ঘাটে পৌঁছে তাঁরা প্রথমেই ধন্যবাদ জানান উদ্ধারকারী ট্রলারের মৎস্যজীবীদের। প্রশাসনের তরফেও জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনার বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে কীভাবে এমন দুর্ঘটনা এড়ানো যায় তা নিয়ে আলোচনাও শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে সমুদ্রে পাড়ি দেওয়ার ট্রলারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও মজবুত করার পরামর্শও দিয়েছে প্রশাসন।
এই দুর্ঘটনা আবারও প্রমাণ করে, সমুদ্র যত উদার, ততই ভয়ঙ্কর। নিরাপত্তার সামান্য গাফিলতিতেও হতে পারে বড় বিপদ। তবে এদিন সৌভাগ্যবশত প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন ১৩ জন। জীবনের এই ফিরে আসা যেন আর একবার জন্ম নেওয়ার মতোই।