ভুয়ো ডিগ্রি ব্যবহার করছিলেন অনেকদিন ধরেই (Shantanu)।বহুদিন ধরেই ডিগ্রি বিতর্কের কেন্দ্র বিন্দুতে ডাক্তার শান্তনু সেন। এবার চিকিৎসক তথা রাজনৈতিক নেতা শান্তনু সেনের (Shantanu) বিরুদ্ধে ভুয়ো ডিগ্রি ব্যবহারের গুরুতর অভিযোগে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য মেডিকেল কাউন্সিল। বৃহস্পতিবার, মেডিকেল কাউন্সিলের তরফে শান্তনু সেনের ডাক্তারি রেজিস্ট্রেশন দুই বছরের জন্য বাতিল করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে তিনি চিকিৎসক হিসেবে কোনও রকম প্র্যাকটিস করতে পারবেন না।
শান্তনু সেনের (Shantanu) বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি মেডিকেল কাউন্সিলে রেজিস্ট্রেশন না করেই ‘এফআরসিপি’ (FRCP, গ্লাসগো) ডিগ্রি ব্যবহার করে রোগীদের চিকিৎসা করে আসছিলেন। ইন্ডিয়ান মেডিকেল কাউন্সিল অ্যাক্ট, ১৯৫৬ এবং বেঙ্গল মেডিকেল অ্যাক্ট, ১৯১৪-এর ধারা অনুযায়ী, যে কোনও ডিগ্রি ব্যবহারের পূর্বে তা মেডিকেল কাউন্সিলে নথিভুক্ত করা বাধ্যতামূলক।
কিন্তু শান্তনু সেন (Shantanu) তাঁর প্রফেশনাল লেটারহেডে এফআরসিপি ডিগ্রি ব্যবহার করলেও, তা মেডিকেল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ায় রেজিস্ট্রার্ড ছিল না। শান্তনু সেন বলেছিলেন এই ডিগ্রি ব্যাবহারে মেডিক্যাল কাউন্সিলের মান্যতা দরকার হয়না।
মেডিকেল কাউন্সিলের তরফে জানানো হয়েছে, শান্তনু সেনের (Shantanu) দেখানো সার্টিফিকেটে উল্লেখ রয়েছে ‘ডিপ্লোমা অফ ফেলোশিপ এফআরসিপি (গ্লাসগো)’। কিন্তু তাঁর লেটারহেডে শুধুমাত্র ‘এফআরসিপি (গ্লাসগো)’ লেখা হয়েছে, যা রোগীদের এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা তৈরি করতে পারে। এই কথা মাথায় রেখেই আজ মেডিক্যাল কাউন্সিল তলব করে শান্তনুকে। আশানুরূপ উত্তর না দিতে পারে কাউন্সিল তাকে দোষী সাবস্ত করেছে।
শান্তনু সেন (Shantanu) এই অভিযোগের বিরুদ্ধে সাফাই গেয়েছেন। এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি দাবি করেন, “এই মেডিকেল কাউন্সিলে আমি নিজে কিছুদিন আগে পর্যন্ত সরকারি নমিনি হিসেবে কাজ করেছি। আমার রেজিস্ট্রেশনে এমবিবিএস এবং ডিএমআরডি (DMRD) কোয়ালিফিকেশন রয়েছে।
DMRD হচ্ছে রেডিওলজি কোয়ালিফিকেশন, যার ভিত্তিতে আমি রেডিওলজিস্ট হিসেবে প্র্যাকটিস করি।” তিনি আরও জানান, এফআরসিপি ডিগ্রি একটি সাম্মানিক ডিগ্রি, যা রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই ব্যবহার করা যায়। তবে মেডিকেল কাউন্সিল শান্তনু সেনের এই দাবি মানতে রাজি হয়নি।
এই ঘটনা শান্তনু সেনের (Shantanu) বিরুদ্ধে প্রথম বিতর্ক নয়। এর আগেও তাঁর ডিগ্রি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। গত ১৪ জুন, পশ্চিমবঙ্গ মেডিকেল কাউন্সিল তাঁকে নোটিস পাঠিয়ে ২১ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলেছিল। সেই নোটিসে বলা হয়েছিল, তিনি রোগীদের বিভ্রান্ত করার জন্য লেটারহেডে ডিপ্লোমা অফ ফেলোশিপের উল্লেখ না করে শুধুমাত্র এফআরসিপি ডিগ্রি ব্যবহার করেছেন।
মেডিকেল কাউন্সিলের এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে। চিকিৎসকদের পেশাগত সততা এবং রোগীদের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে কোনও আপস করা হবে না। শান্তনু সেনের মতো একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ জনসাধারণের মধ্যে মেডিকেল কাউন্সিলের নিরপেক্ষতা এবং কঠোরতার প্রতি আস্থা বাড়িয়েছে।
তবে, শান্তনু সেন (Shantanu) এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেন বলে জানা গেছে। তিনি দাবি করেছেন, মেডিকেল কাউন্সিল তাঁর বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে এবং তিনি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন।
এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। শান্তনু সেন তৃণমূল কংগ্রেসের একজন বিশিষ্ট নেতা এবং রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ। তাঁর বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপকে কেউ কেউ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবেও দেখছেন। তবে মেডিকেল কাউন্সিল স্পষ্ট জানিয়েছে, তাঁদের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে পেশাগত নীতিমালার ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে, এবং এর সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে ভুয়ো ডিগ্রির ব্যবহার একটি গুরুতর অপরাধ। এটি কেবল রোগীদের জীবনের সঙ্গে খেলা করে না, বরং চিকিৎসা পেশার প্রতি মানুষের ভরসাকেও ক্ষুণ্ণ করে। শান্তনু সেনের ঘটনা এই বিষয়ে আরও কঠোর নজরদারি এবং নিয়মানুসরণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে।
১ জুলাই থেকে WhatsApp-এর নতুন নিয়ম, এই সমস্ত ব্যবহারকারীদের পকেটে ধরবে টান!
ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে মেডিকেল কাউন্সিলের তরফে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।এই ঘটনা নিয়ে জনসাধারণের মধ্যেও মিশ্র (Shantanu)প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। একদিকে, অনেকে মেডিকেল কাউন্সিলের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন, অন্যদিকে শান্তনু সেনের সমর্থকরা এটিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন। আগামী দিনে এই ঘটনার পরিণতি কী হয়, তা দেখার জন্য সবার দৃষ্টি এখন আইনি ও পেশাগত প্রক্রিয়ার দিকে।