দেশ-বিদেশের নোট-কয়েন নিয়ে সংগ্রহশালা গড়ছেন গৃহশিক্ষক

শান্তনু পান, পশ্চিম মেদিনীপুর: পেশায় একজন সাধারণ গৃহ শিক্ষক, তবে শখের দিক থেকে তিনি অনেকের চেয়েই ব্যতিক্রমী। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি নিজেকে মগ্ন রেখেছেন এক ঐতিহাসিক…

দেশ-বিদেশের নোট-কয়েন নিয়ে সংগ্রহশালা গড়ছেন গৃহশিক্ষক

শান্তনু পান, পশ্চিম মেদিনীপুর: পেশায় একজন সাধারণ গৃহ শিক্ষক, তবে শখের দিক থেকে তিনি অনেকের চেয়েই ব্যতিক্রমী। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি নিজেকে মগ্ন রেখেছেন এক ঐতিহাসিক সংগ্রহের কাজে। দাঁতনের বামনদা এলাকার বাসিন্দা সঞ্জয় পোড়্যা শুধু ছাত্র-ছাত্রীদের টিউশনই দেন না, বরং তার বাড়ির এক অংশ জুড়ে রয়েছে বিশ্বের নানা দেশের পুরনো ও দুর্লভ কয়েন ও নোটের বিশাল সংগ্রহ (Currency Museum)।

ছোটবেলায় নতুন পাঁচ টাকার নোট হাতে পেলেই আলাদা করে তুলে রাখতেন সঞ্জয়বাবু। তখনও জানতেন না, এটাই একদিন হয়ে উঠবে তাঁর জীবনের অন্যতম প্রিয় নেশা। বড় হতে হতে ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও নোটের পেছনে রয়েছে ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। আর সেখান থেকেই শুরু তাঁর সংগ্রহের যাত্রা (Currency Museum)।

   

কী কী রয়েছে তাঁর সংগ্রহে?
বর্তমানে তাঁর সংগ্রহে রয়েছে—

৩০টির বেশি দেশের দুর্লভ নোট (যেমন: আমেরিকান ডলার, ইউরোপীয় ইউরো, পাকিস্তানি রুপি, মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, নেপালি রুপি ইত্যাদি)।

ভারতের বিভিন্ন সময়কালের শতাধিক কয়েন — ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে আধুনিক ভারতের বিভিন্ন দশকের কয়েন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কয়েন, যেগুলির সংগ্রহ সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়েছে।

দেশ-বিদেশের নোট-কয়েন নিয়ে সংগ্রহশালা গড়ছেন গৃহশিক্ষক

Advertisements

তাঁর সংগ্রহের উৎস
শুধু নিজের চেষ্টায় নয়, সঞ্জয় পোড়্যা বিভিন্ন আত্মীয়, বন্ধু এবং বিদেশে থাকা পরিচিতদের কাছ থেকেও সংগ্রহ করেছেন এই দুর্লভ মুদ্রাগুলি। কেউ বেড়াতে গেলে, কেউ কাজের সূত্রে বিদেশে গেলে, তিনি অনুরোধ করতেন এক টুকরো ইতিহাস ফিরিয়ে আনার জন্য।

শিক্ষকের আরও একটি পরিচয়: পত্রশিল্পী
ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশোনা করা সঞ্জয়বাবু শুধু শিক্ষকই নন, তিনি একজন দক্ষ পত্র শিল্পীও। ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর পাশাপাশি সময় পেলেই চিঠি ও পোস্টকার্ডে চিত্র আঁকেন, লিখে রাখেন নিজের ভাবনা। তাঁর মতে, “ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখার অন্যতম পথ হল সংরক্ষণ। যা ভবিষ্যতের প্রজন্মকে ইতিহাস জানাতে সাহায্য করবে।”

দেশ-বিদেশের নোট-কয়েন নিয়ে সংগ্রহশালা গড়ছেন গৃহশিক্ষক

গ্রামের ভিতরেই ঐতিহ্য সংরক্ষণের নজির
দাঁতনের মতো গ্রামীণ অঞ্চলে থেকেও এমন এক অনন্য সংগ্রহের নজির তৈরি করেছেন সঞ্জয় পোড়্যা। ভবিষ্যতে তিনি চান, এই সংগ্রহ ঘিরে একটি ছোট সংগ্রহশালা তৈরি করতে, যেখানে গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা মুদ্রার ইতিহাস জানতে পারবে হাতে-কলমে।

স্থানীয় মানুষ, ছাত্র ও অভিভাবকরা সঞ্জয়বাবুর এই উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। অনেকেই বলছেন, “আজকের দিনে যেখানে সবাই কেরিয়ার নিয়ে ব্যস্ত, সেখানে সঞ্জয়বাবু এক অন্যরকম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।”

সঞ্জয় পোড়্যার এই সংগ্রহ শুধু তাঁর একার নয়, এটা এক ধরনের ঐতিহাসিক ধন, যা আগামী প্রজন্মকে দেশের ও বিশ্বের মুদ্রার ইতিহাস জানাতে পথ দেখাবে। গৃহ শিক্ষকতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা এই নান্দনিক উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।