টেস্ট ক্রিকেটের ময়দানে ভারতের (Indian Cricket Team) নতুন অধিনায়ক শুভমন গিল (Shubman Gill)। বয়সের তুলনায় অভিজ্ঞতা কম, তবে প্রতিভা প্রশ্নাতীত। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে প্রথম ম্যাচ হারের পর থেকেই ক্রিকেট মহলে শুরু হয়েছে বিতর্ক, শুভমন কি আদৌ ক্যাপ্টেন হিসেবে সফল হবেন? নাকি সময়ের আগেই তাঁর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বিরাট দায়িত্ব? এই উত্তেজনার মাঝেই আশাবাদী কণ্ঠে নিজের মত প্রকাশ করলেন ভারতের প্রাক্তন কোচ (Former Indian Coach) রবি শাস্ত্রী (Ravi Shastri)। তাঁর মতে, “এখনই নয় মোহভঙ্গ, শুভমনকে বুঝে নেওয়ার সময় চলছে।”
এজবাস্টনে শুরু হতে চলেছে দ্বিতীয় টেস্ট। সিরিজে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামবে গিলের ভারত। তবে শুধু এই ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতা ফেরানোই নয়, গিলের সামনে চ্যালেঞ্জ আরও বড়। নিজেকে একজন যোগ্য নেতা হিসেবে প্রমাণ করা।
গৌতম গম্ভীরকে যখন ভারতীয় দলের হেড কোচ হিসেবে নিয়োগ করা হয়, অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁর কোচিং দক্ষতা নিয়ে। কেউ কেউ তো স্পষ্ট বলেই দিয়েছিলেন, গম্ভীর সফল হতে পারবেন না। অথচ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সব সমালোচনা অনেকটাই স্তব্ধ হয়ে গেছে। এখন আবার নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু শুভমন গিল। অনেকটাই একই রকম চিত্র। কেউ বলছেন, সিরিজের শেষে হয়ত তাঁকে সরিয়েই দেওয়া হবে। আবার কেউ কেউ চাইছেন, সময় দেওয়া হোক তরুণ এই অধিনায়ককে।
এই দ্বন্দ্বের আবহে রবি শাস্ত্রীর মতামত এক গভীর বার্তা বহন করে। এক পডকাস্টে তিনি বলেন, “শুভমনের মধ্যে ব্যাটসম্যান হিসেবে যেমন অসাধারণ প্রতিভা আছে, ঠিক তেমনই একজন নেতৃত্বদাতা হিসেবেও তাঁর মধ্যে আছে বিশেষ গুণ। এখন শুধু দরকার সময় ও সুযোগ।” তাঁর মতে, গিলের মধ্যে সেই পরিণত বোধ দেখা যাচ্ছে। যেমনটা একজন ভালো নেতার মধ্যে থাকা উচিত। সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর সাবলীল ভঙ্গি, মিডিয়াকে সামলানোর ধরণ এবং টসের সময় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভাষা প্রমাণ করে দিচ্ছে, তিনি আগের থেকে অনেক পরিণত হয়েছেন।
বুমরাহকে নিয়ে চিন্তা নেই, এই ক্রিকেটারকে নিয়ে জুজু দেখছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক!
শাস্ত্রীর স্পষ্ট বার্তা, একটি বা দুটি ম্যাচের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে কোনো বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। তিনি বলেন, “যদি গিলকে সময় না দেওয়া হয়, সেটা হবে দুঃখজনক। আমার মতে, অন্তত তিন বছর ওকে এই দায়িত্বে রাখা উচিত। তখনই বোঝা যাবে, সে কতটা সফল। সময় না দিলে তো কখনওই জানতেই পারব না।”
টেস্ট ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে একজন খেলোয়াড়ের পরিপক্বতা তৈরি হতে সময় লাগে। ধোনি, কোহলি বা রোহিতের পথও একদিনে তৈরি হয়নি। তাদের প্রতিটাকেই সময় দেওয়া হয়েছিল। শুভমনের ক্ষেত্রেও একই ধৈর্য দেখানোর আহ্বান জানালেন শাস্ত্রী। “সব ধরণের পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা যদি ওর মধ্যে থাকে, তা হলে ও পিছনে ফিরে তাকাবে না,”—এই কথার মধ্যেই রয়েছে গিলের ভবিষ্যতের ইঙ্গিত।
ভারতীয় ক্রিকেটে এখন এক রূপান্তরের সময় চলছে। রোহিত, বিরাটদের অবসরের পর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপর দায়িত্ব বর্তাবে। সেখানে শুভমন গিলের মতো ক্রিকেটারের নেতৃত্বে আস্থা রাখাটা কেবল বাস্তবসম্মত নয়, সময়ের দাবিও বটে।
অতএব, এখনই মোহভঙ্গ নয়। হয়তো একটি ম্যাচে ব্যর্থতা এসেছে, কিন্তু সেটাই শেষ কথা নয়। শাস্ত্রীর ভাষায়, “একটা সিরিজ দিয়ে কোনো ক্যাপ্টেনকে বিচার করা যায় না।” শুভমন গিলের এখনও অনেক পথ বাকি, এবং সেই পথে হাঁটার সুযোগ তাঁর প্রাপ্য।