পূর্ব বর্ধমান: ইডি (ED) অফিসার সেজে প্রতারণার অভিযোগ! বুধবার সকাল থেকেই উত্তাল পূর্ব বর্ধমানের রায়না থানা এলাকার খেমতা গ্রাম। অভিযোগের কেন্দ্রে শেখ জিন্না আলি নামে এক ব্যক্তি। ইডির নাম করে এক বালি ব্যবসায়ীর থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। সকাল ৬টা থেকে শেখ জিন্না আলির বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছেন ইডির আধিকারিকরা। অভিযানে রয়েছেন সিআরপিএফ জওয়ানরাও। বাড়ি ঘিরে রাখা হয়েছে কড়া নিরাপত্তা বলয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শেখ জিন্না আলি নিজেকে ইডির (ED) অফিসার বলে পরিচয় দিতেন। শুধু তাই নয়, সরকারি সংস্থা ‘ন্যাশনাল অ্যান্টি ট্রাফিকিং কমিটি’র চেয়ারম্যান বলেও নিজেকে পরিচিত করতেন তিনি। যদিও পরে জানা যায়, সেটি একটি এনজিও মাত্র। সরকারি স্বীকৃত কোনও সংস্থা নয়।
অভিযোগ অনুযায়ী, জিন্না আলি তার এই ভুয়ো পরিচয়ের সুযোগ নিয়ে এক বালি ব্যবসায়ীর উপর চাপ সৃষ্টি করেন। ভয় দেখিয়ে, ইডি (ED) তদন্তের ভুয়ো হুমকি দিয়ে এবং সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করেন। প্রায় দেড় কোটি টাকার প্রতারণা করা হয়েছে বলে দাবি অভিযোগকারীর। শুধু এখানেই শেষ নয়, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে একাধিক ব্যক্তিগত ও পারিবারিক অভিযোগও রয়েছে।
প্রথম স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগে ডিভোর্স হয় তার। এরপর দ্বিতীয় বিয়ের পরেও একই ধরনের নির্যাতনের অভিযোগে মামলা চলছে জিন্না আলির বিরুদ্ধে। এই সমস্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই আজ ইডির পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হয় বলে অনুমান।
স্থানীয় সূত্রের দাবি, অভিযুক্ত শেখ জিন্না আলির বিভিন্ন সরকারি দফতরের কিছু অসাধু অফিসারের সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে। বিশেষ করে কাস্টমস দফতরের কিছু কর্মীর সঙ্গে তার সখ্যতা ছিল বলে অভিযোগ। সেই প্রভাব খাটিয়েই একের পর এক প্রতারণা করেছেন তিনি। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় অন্তত ৫টি বাড়ি রয়েছে জিন্না আলির। বুধবার সকাল থেকেই সেসব বাড়িতেও সমান্তরালভাবে তল্লাশি চালাচ্ছেন ইডির অফিসাররা।
পূর্ব বর্ধমানের খেমতা গ্রামের বাড়িতে প্রায় ৫-৬ জন ইডি অফিসার ভেতরে তল্লাশি চালাচ্ছেন। বাড়ির চারপাশে মোতায়েন রয়েছে সিআরপিএফ। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। গ্রামের মানুষজন সকাল থেকে গোটা পরিস্থিতি দেখছেন দূর থেকে।
তবে সরকারি স্তরে এখনও পর্যন্ত এই তল্লাশির বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। ঠিক কী কারণে এত বড় মাপের অভিযান, তা স্পষ্ট নয়। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই অভিযানের পেছনে একাধিক আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। বালি ব্যবসায়ী প্রতারণা মামলার পাশাপাশি, শেখ জিন্না আলির সম্পত্তি, ব্যাংক লেনদেন ও অন্য আর্থিক কার্যকলাপ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে খবর।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলাতেই এখন উত্তেজনা। Sheikh Jinna Ali এবং তার ভুয়ো পরিচয়কে ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ জমেছে। এলাকার বহু মানুষ অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে নানা প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন জিন্না আলি।
ইডির এই অভিযান শেষ পর্যন্ত কী মোড় নেয় এবং Sheikh Jinna Ali-র বিরুদ্ধে আরও কী কী অভিযোগ সামনে আসে, সেদিকে এখন নজর রাজ্যের রাজনৈতিক মহল থেকে সাধারণ মানুষ—সবারই।