কসবা গণধর্ষণ কাণ্ডে অভিযুক্তদের হেফাজত বাড়ল, বিতর্ক কলেজে

কলকাতা: দক্ষিণ কলকাতার কসবা আইন কলেজের (Kasba Law College) ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় ফের বড় সিদ্ধান্ত আদালতের। মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র এবং তাঁর দুই সহযোগী প্রমিত…

Kasba Case: Protect Victim’s Privacy, Warns Kolkata PoliceKasba Case: Protect Victim’s Privacy, Warns Kolkata Police

কলকাতা: দক্ষিণ কলকাতার কসবা আইন কলেজের (Kasba Law College) ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় ফের বড় সিদ্ধান্ত আদালতের। মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র এবং তাঁর দুই সহযোগী প্রমিত মুখার্জি ও জইব শেখের সাত দিনের অতিরিক্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। আগামী ৮ জুলাই পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখা হবে এই তিন অভিযুক্তকে। একই সঙ্গে ধৃত নিরাপত্তারক্ষী পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়ের তিন দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশও দিয়েছেন আদালত। আগামী ৪ জুলাই তাঁকে ফের আদালতে পেশ করা হবে।

মঙ্গলবার এই মামলার চার অভিযুক্তের পুলিশি হেফাজতের সময়সীমা শেষ হওয়ার কথা ছিল। আদালতে তোলা হয় অভিযুক্তদের। সেই শুনানিতেই বিচারপতি নতুন নির্দেশ দেন। শুনানিতে মনোজিৎ ও প্রমিতের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন জানাননি। বরং তাঁরা তদন্তে সহযোগিতা করার কথা জানান। মনোজিতের আইনজীবী রাজু গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা তদন্তে পুরোপুরি সহযোগিতা করছি। জামিনের আবেদন করিনি।’’

   

অন্যদিকে নিরাপত্তারক্ষী পিনাকীর আইনজীবী বলেন, তাঁর সরাসরি কোনও ভূমিকা ছিল না। তিনি শুধুমাত্র নিজের কাজ করছিলেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি সিকিউরিটি গার্ড। নির্দিষ্ট কাজের বাইরে কিছু করিনি। প্রকৃত তদন্ত হোক।’’

সরকারি আইনজীবী সৌরিন ঘোষাল বলেন, মেডিক্যাল রিপোর্ট, সিসিটিভি ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান সবকিছু নির্যাতিতার বক্তব্যের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। আরও তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। সেই কারণেই দশ দিনের পুলিশ হেফাজতের আবেদন করা হয়।

নির্যাতিতার আইনজীবী অরিন্দম জানা আদালতে বলেন, ‘‘মনোজিৎ অভিযুক্তের বিশ্বাস অর্জন করে সেই বিশ্বাস ভেঙেছে। তার সহযোগীরা তাকে সাহায্য করেছে। নিরাপত্তারক্ষীর ভূমিকা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।’’

এদিকে এই ঘটনায় কলেজ (Kasba Law College) প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কসবা আইন কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি তথা তৃণমূল বিধায়ক অশোক দেব মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী সবাই মর্মাহত। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা হবে।’’

Advertisements

মনোজিৎ কীভাবে কলেজে (Kasba Law College) চাকরি পেল, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। অভিযুক্তের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ছবি নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। এ নিয়ে অশোক দেব বলেন, ‘‘আমরা গণৎকার নই। কে কী করবে তা আগে থেকে বলতে পারি না। ওর চাকরি ছিল অস্থায়ী। কলেজ থেকে ইতিমধ্যেই বহিষ্কার করা হয়েছে।’’

তিনি আরও জানান, কলেজে (Kasba Law College) অস্থায়ী ভিত্তিতে দৈনিক মজুরিভিত্তিতে কয়েকজনকে নিয়োগ করা হয়। এই পদে নিয়োগের জন্য বড় কোনও প্রশাসনিক অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল না। বর্তমানে মনোজিতের চাকরি আর নেই বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন তিনি।

পুলিশ এবং তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর, ঘটনার সময় মনোজিৎ কলেজের (Kasba Law College) মূল গেট বন্ধ করে দেয়। গার্ডরুম ব্যবহার করা হয়। নিরাপত্তারক্ষীর ভূমিকা নিয়েও তাই সন্দেহ বাড়ছে। ইতিমধ্যেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এখনও পর্যন্ত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, ষড়যন্ত্র এবং শারীরিক নির্যাতনের একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। তদন্তে নেমেছে বিশেষ টিম। আদালতের নির্দেশে আগামী ৮ জুলাই ফের তিন প্রধান অভিযুক্তকে এবং ৪ জুলাই নিরাপত্তারক্ষীকে আদালতে তোলা হবে।

এই ঘটনায় উত্তাল গোটা রাজ্য। সোশ্যাল মিডিয়াতেও নিন্দার ঝড়। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ।