কসবা কাণ্ডে বহিস্কার মনোজিৎ সহ দুই অভিযুক্ত

দক্ষিণ কলকাতা ল কলেজের গভর্নিং বডি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে তিন অভিযুক্তকে বহিষ্কার করেছে, যারা কলেজের (Kasba-Incident) প্রথম বর্ষের ছাত্রীর উপর গণধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে। এই…

Kasba-Incident college expelled accused

দক্ষিণ কলকাতা ল কলেজের গভর্নিং বডি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে তিন অভিযুক্তকে বহিষ্কার করেছে, যারা কলেজের (Kasba-Incident) প্রথম বর্ষের ছাত্রীর উপর গণধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে। এই ঘটনাটি গত ২৫ জুন কলেজের ক্যাম্পাসে ঘটে এবং এটি কলকাতায় নারী নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

বহিষ্কৃতরা হলেন মনোজিৎ মিশ্র, একজন প্রাক্তন ছাত্র এবং কলেজের অস্থায়ী কর্মী, এবং বর্তমান ছাত্র প্রমিত মুখোপাধ্যায় ও জয়েব আহমেদ। এই ঘটনায় আরও একজন নিরাপত্তা প্রহরী পিনাকি বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়েছে, যিনি ঘটনার সময় উপস্থিত থেকেও কোনও সাহায্য করেননি।

   

কলকাতা পুলিশের তথ্য (Kasba-Incident) অনুযায়ী, ২৪ বছর বয়সী এক ছাত্রী ২৫ জুন সন্ধ্যায় কলেজে পরীক্ষার ফর্ম পূরণ করতে এসেছিলেন। তাঁর অভিযোগ অনুযায়ী, সন্ধ্যা ৭:৩০ থেকে রাত ১০:৫০ পর্যন্ত তাঁকে কলেজের নিরাপত্তা প্রহরীর কক্ষে আটকে রাখা হয় এবং গণধর্ষণ করা হয়।

প্রধান অভিযুক্ত (Kasba-Incident) মনোজিৎ মিশ্র, যিনি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) দক্ষিণ কলকাতা জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক এবং একজন অনুশীলনরত আইনজীবী, এই ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। অন্য দুই অভিযুক্ত, প্রমিত মুখোপাধ্যায় (২০) এবং জয়েব আহমেদ (১৯), বর্তমানে কলেজের ছাত্র এবং ঘটনার সময় তারা নিরাপত্তা কর্মীর কক্ষের বাইরে পাহারা দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ।

পুলিশ তিন অভিযুক্তের মোবাইল ফোন জব্দ করেছে, যেখানে ধর্ষণের ভিডিও ক্লিপ পাওয়া গেছে, যা দিয়ে তারা ভুক্তভোগীকে হুমকি দিয়েছিল।কলকাতা পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে ২৬ জুন সন্ধ্যায় মনোজিৎ মিশ্র এবং জয়েব আহমেদকে কসবা এলাকার তালবাগান ক্রসিং থেকে গ্রেফতার করে। প্রমিত মুখোপাধ্যায়কে একই রাতে তাঁর বাসভবন থেকে গ্রেফতার করা হয়।

শনিবার (২৮ জুন) নিরাপত্তা প্রহরী পিনাকি বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়, কারণ তিনি ঘটনার সময় উপস্থিত থেকেও কোনও সাহায্য করেননি। ভুক্তভোগীর চিকিৎসা পরীক্ষায় জোরপূর্বক শারীরিক নির্যাতন, কামড়ের দাগ এবং নখের আঁচড়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা তাঁর অভিযোগকে সমর্থন করে।

কলকাতা (Kasba-Incident) পুলিশ একটি পাঁচ সদস্যের বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠন করেছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন দক্ষিণ শহরতলি বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার প্রদীপ কুমার ঘোষাল।দক্ষিণ কলকাতা ল কলেজের গভর্নিং বডি মঙ্গলবার (১ জুলাই) একটি জরুরি বৈঠকে প্রমিত মুখোপাধ্যায় এবং জয়েব আহমেদকে কলেজ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়।

মনোজিৎ মিশ্র, যিনি একজন প্রাক্তন ছাত্র এবং অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কলেজে কর্মরত ছিলেন, তাঁর চাকরি বাতিল করা হয়েছে। কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল নয়না চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “এই ঘটনার পর আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং আমরা ভুক্তভোগীর পাশে রয়েছি।”

Advertisements

তিনি আরও বলেন, কলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এই ঘটনা রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) জানিয়েছে, তারা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানায়।

তবে, বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার এবং সুবেন্দু অধিকারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের উপর নিরাপত্তা ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছেন। তারা দাবি করেছেন, পশ্চিমবঙ্গে নারীদের নিরাপত্তা বিপন্ন। বিজেপি জাতীয় সভাপতি জে. পি. নাড্ডা একটি চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন এই ঘটনার তদন্তের জন্য।

জাতীয় মহিলা কমিশন (এনসিডব্লিউ) এই ঘটনার স্বতঃপ্রণোদিত সংজ্ঞান নিয়ে পুলিশের কাছে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে।সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ভুক্তভোগীকে জোর করে নিরাপত্তা প্রহরীর কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তরা এই অপরাধের পরিকল্পনা আগে থেকেই করেছিল এবং তারা পূর্বে অন্য ছাত্রীদেরও যৌন হয়রানির শিকার করেছিল।

পুলিশ তদন্তে প্রমাণ সংগ্রহের জন্য কলেজের ইউনিয়ন রুম, বাথরুম এবং নিরাপত্তা প্রহরীর কক্ষ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে। অভিযুক্তদের ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য।এই ঘটনা কলকাতায় ব্যাপক প্রতিবাদের সূত্রপাত করেছে। (Kasba-Incident) ছাত্র সংগঠন, সিপিআই(এম)-এর যুব শাখা এবং বিজেপি সমর্থকরা কলেজের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে।

পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে বাধ্য হয় এবং বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদারসহ কয়েকজনকে আটক করা হয়। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, দল ভুক্তভোগীর পাশে রয়েছে এবং অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছে। (Kasba-Incident) তবে, তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্য বিতর্কের সৃষ্টি করেছে, যেখানে তিনি বলেছিলেন, “বন্ধু যদি বন্ধুকে ধর্ষণ করে, তাহলে সরকার কীভাবে সুরক্ষা দেবে?” এই মন্তব্যের জন্য তিনি সমালোচনার মুখে পড়েছেন।

ওডিশায় সোনা চুরিতে ধৃত বিজেপি নেতার মেদিনীপুরেও প্রতারণার জাল

এই ঘটনা গত বছরের আর.জি. কার মেডিকেল কলেজের ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের পর কলকাতায় নারী নিরাপত্তা নিয়ে পুনরায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ভুক্তভোগী বলেছেন, “আমি একজন আইনের ছাত্রী, এখন আমিই শিকার। আমি ন্যায়বিচার চাই।” (Kasba-Incident) তাঁর এই সাহসী অবস্থান সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রশংসিত হয়েছে। তদন্ত এখনও চলছে, এবং পুলিশ অভিযুক্তদের হেফাজতের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আদালতে আবেদন করেছে।