এক ঝাঁপে ১১ বছরের খরা কাটিয়ে নাটকীয় মুহূর্তে ‘সূর্যোদয়’ বিরাট-রোহিতদের

২৯শে জুন দিনটি ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে (Indian Cricket Team) চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ১১ বছর পর, দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আবারও বিশ্ব ক্রিকেটের মঞ্চে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ…

Indian Cricket Team star Suryakumar Yadav unbelievable catch end their 11-year ICC trophy drought winning the ICC T20 World Cup 2024 on 29 June

২৯শে জুন দিনটি ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে (Indian Cricket Team) চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ১১ বছর পর, দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আবারও বিশ্ব ক্রিকেটের মঞ্চে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়েছিল ‘মেন ইন ব্লু’রা। রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ভারত ঘরে তুলেছিল আইসিসি টি-২০ বিশ্বকাপ ২০২৪ (ICC T20 World Cup 2024)।

২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর একের পর এক আইসিসি টুর্নামেন্টে ব্যর্থতার পর। বিশেষ করে ২০২৩ সালে ঘরের মাঠে এক দিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনালে পরাজয়ের পর, অনেকেই ভেবেছিলেন ভারতের শ্রেষ্ঠ সুযোগটি হয়ত হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে । কিন্তু এক বছর আগে রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন দল দেখিয়ে দিয়েছিল, হার মানার জন্য তারা তৈরি নয়। বরং তারা ফিরল আরও শক্তিশালী হয়ে, আরও ধারালো পরিকল্পনা ও একত্রিত মানসিকতায়।

   

নিউ ইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে শুরু হয় ভারতের অভিযান। মাত্র ৯৬ রানে আয়ারল্যান্ডকে গুটিয়ে, ১৩ ওভারের মধ্যেই ৮ উইকেটে জিতে নেয় ভারত।

এরপর এশিয়ার মহারণ ভারত বনাম পাকিস্তান। ব্যাটিং বিপর্যয়ে মাত্র ১১৯ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল ভারত। পাকিস্তান তখন ৭৩/২ জয়ের দরজা প্রায় খুলেই ফেলেছিল। কিন্তু তখনই দেখা গেল জসপ্রীত বুমরাহের বিপজ্জনক অস্ত্রের ঝলক। তাঁর অসাধারণ বোলিংয়ে পাকিস্তান ৬ রানে হার মানে।

কোয়াটার ফাইনাল থেকে সেমিফাইনাল

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ৭ উইকেটের সহজ জয়ের পর ভারত পৌঁছে যায় সুপার এইট পর্বে। আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যথাক্রমে ৪৭ ও ৫০ রানে জয় তুলে নেয় দল।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। বিশ্বকাপ ইতিহাসে ভারতের জন্য বরাবর কঠিন প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়াকে রোহিত শর্মা একাই বিধ্বস্ত করে দেন ৯২ রানের বিস্ফোরক ইনিংসে। ২০৫ রান তুলে অস্ট্রেলিয়াকে ২৪ রানে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ভারত।
সেমিফাইনালে ২০২২ সালের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয় ভারত। প্রথমে ব্যাট করে ১৭১ রান তোলে, এরপর ইংল্যান্ডকে গুটিয়ে দেয় মাত্র ১০৩ রানে। ৬৮ রানের জয়ে ভারতের ফাইনালে যাত্রা নিশ্চিত হয়।

Advertisements

ঐতিহাসিক ফাইনাল

ফাইনালে প্রতিপক্ষ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ভারতের শুরুটা ভালো হয়নি। মাত্র ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল দল। কিন্তু এরপর আসে বিরাট কোহলি ও অক্ষর প্যাটেলের গুরুত্বপূর্ণ ৭২ রানের জুটি। কোহলির ৭৬ ও অক্ষরের ৪৭ রানে ভর করে ভারত তোলে ১৭৬ রান।

জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকাও শুরুটা সাবলীল করে। ক্লাসেন, ডি কক, ও স্টাবস দলের রান এগিয়ে নিয়ে যান। শেষ ৫ ওভারে প্রয়োজন ছিল মাত্র ৩০ রান, হাতে ৬ উইকেট। জয়ের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল প্রোটিয়ারা।

শেষ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার ছিল ১৬ রান। প্রথম বলেই ডেভিড মিলার এক বিশাল ছক্কা হাঁকানোর মতো বল পেলেন। বল আকাশে ভেসে যাচ্ছিল বাউন্ডারির দিকে, কিন্তু তখনই মাঠের এক প্রান্ত থেকে উদিত হলেন এক তারকা, সুর্যকুমার যাদব (Suryakumar Yadav)। তিনি বাউন্ডারির একেবারে ধার ঘেঁষে অসাধারণ ক্যাচ নেন। প্রথমে বলকে ধরে, বাউন্ডারির বাইরে যাওয়ার সময় ছুড়ে দেন আবার নিজেই এসে ধরেন। ভারতীয় সমর্থকদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়ে গেল সেই দৃশ্য। এই ক্যাচই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত হার্দিক পান্ডিয়া, বুমরাহ ও অর্শদীপ সিং বোলিংয়ে ভারত জয় নিশ্চিত করে মাত্র ৭ রানে।

শুধু ফাইনালের সেই ক্যাচই নয়, গোটা টুর্নামেন্টে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ ছিলেন সুর্যকুমার যাদব। তিনি ১৯৯ রান করেন, যার মধ্যে ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ হাফ-সেঞ্চুরি সেমিফাইনালে। রান তো করেছেনই, তার চেয়েও বড় অবদান রেখে গেলেন এক ঝাঁপে দেশের ১১ বছরের খরা মেটানোর মাধ্যমে।

রোহিত শর্মার নেতৃত্বে, কোহলির অভিজ্ঞতা, বুমরাহর জাদু, হার্দিকের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং এবং সুর্যকুমারের অলৌকিক ফিল্ডিং। সব মিলিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে এক অসাধারণ অধ্যায় রচিত হয় ২৯ জুন, ২০২৪।