Shared Living vs Solo: অভিভাবকের বাড়ির আরাম ছেড়ে স্বাধীন জীবনে পা রাখা যেমন রোমাঞ্চকর, তেমনই চ্যালেঞ্জিং। ভারতের যুবসমাজ, বিশেষ করে ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীরা যখন নতুন শহরে চলে আসে, তখন তাদের উদ্দেশ্য হতে পারে উচ্চশিক্ষা, নতুন চাকরি অথবা নিছকই স্বাধীনতা খোঁজা। ২০২১ সালের ভারতীয় জনগণনা রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় ৩.৩ মিলিয়ন মানুষ শিক্ষার জন্য দেশের মধ্যে মাইগ্রেট করে। এর বড় একটি অংশ ঘটে টিয়ার-১ শহরগুলোতে, যা শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য।
নতুন শহরে আসার পর সবচেয়ে বড় এবং সাধারণ চ্যালেঞ্জ হলো সঠিক ভাড়ার বাড়ি খুঁজে বের করা। বাজেট, অপরিচিত এলাকা এবং নিরাপত্তার মতো নানা বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে হয়। একজন প্রাক্তন হোম-সিকার হিসেবে অভিজ্ঞতা থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ নতুন ভাড়াটিয়াদের জন্য তুলে ধরা হলো।
সঠিক অবস্থান নির্বাচন করুন
অনেকেই প্রিমিয়াম এবং ট্রেন্ডি এলাকায় থাকতে চান। তবে বাস্তবতা হলো, সাশ্রয়ী এবং প্রয়োজনের সঙ্গে মানানসই এলাকায় থাকা অনেক বেশি যুক্তিসঙ্গত। যেমন, ব্যাঙ্গালোরের কোরামাঙ্গলা, মুম্বাইয়ের বান্দ্রা বা পুনের কোরেগাঁও পার্কে থাকতে গেলে বাজেটের ওপর বড় ধাক্কা লাগতে পারে।
এর পরিবর্তে, অফিস বা কলেজের কাছাকাছি, গণপরিবহন সহজে পাওয়া যায়, নিরাপদ এবং প্রয়োজনীয় সুবিধা রয়েছে — এমন এলাকাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। NoBroker-এর মতো রিয়েল এস্টেট প্ল্যাটফর্ম থেকে এলাকার লাইভেবিলিটি স্কোর, কমিউট সুবিধা এবং রেন্টাল ট্রেন্ড জেনে নেওয়া সহজ।
শেয়ারড লিভিং বিবেচনা করুন
বাড়িভাড়া এবং অন্যান্য খরচ ভাগ করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো শেয়ারড লিভিং। এতে শুধুমাত্র ভাড়া নয়, ইলেকট্রিসিটি, ইন্টারনেট, হাউসকিপিং এবং খাবারের খরচও ভাগ হয়ে যায়। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, আপনি একটি সাপোর্ট সিস্টেম পেয়ে যান, যা পরিবার থেকে দূরে থাকা অবস্থায় মানসিক সহায়তা দেয়।
তবে, সহভাড়াটিয়াদের ভালোভাবে যাচাই করে নিন। প্রত্যেকেই যেন সরাসরি বাড়ির মালিকের কাছে ভাড়া দেন, তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি ট্যাক্সের ক্ষেত্রে হাউস রেন্ট অ্যালাওয়েন্স (HRA) ক্লেইম করার জন্য জরুরি।
সাইড হস্টল শুরু করুন
নতুন শহরে থাকতে গিয়ে হঠাৎ খরচ বেড়ে যেতে পারে। সিকিউরিটি ডিপোজিট, মেইন্টেন্যান্স, দৈনন্দিন খরচ — সবকিছু মিলিয়ে মাসিক ব্যয় অনেক বেশি হয়ে যেতে পারে। তাই একটি সাইড হস্টল শুরু করে অতিরিক্ত আয় করা বুদ্ধিমানের কাজ।
অনলাইন ইন্টার্নশিপ, কনটেন্ট ক্রিয়েশন, পার্ট-টাইম টিউশনি, বা ফ্রিল্যান্স ডিজাইন, রাইটিং-এর মতো কাজ করতে পারেন। LinkedIn, ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এখন এসব সুযোগ পাওয়া আগের চেয়ে সহজ।
কম কিনুন, বেশি ভাড়া নিন
অনেকে নতুন ফ্ল্যাটে ওঠার পরই আসবাব, ইলেকট্রনিকস, গাড়ি কিনে ফেলে। যদি এক জায়গায় অনেক বছর থাকার পরিকল্পনা না থাকে, তাহলে কেনার পরিবর্তে ভাড়া নেওয়া বেশি সুবিধাজনক। এখন অনেক সাবস্ক্রিপশন ভিত্তিক পরিষেবা রয়েছে, যেখান থেকে ফার্নিচার, অ্যাপ্লায়েন্স এমনকি বাইক বা গাড়িও ভাড়া নেওয়া যায়। এতে লং টার্ম EMI এর ঝামেলা কমে এবং স্থান পরিবর্তনের সময় সহজ হয়।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুছিয়ে রাখুন
লিজ এগ্রিমেন্ট, আধার, কলেজ আইডি ইত্যাদি নথি সবসময় হাতের কাছে এবং অনলাইনে সেভ করে রাখুন। Google Drive-এর মতো ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবহার করুন। বর্তমানে অনেক রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ই-সিগনেচার ও ডিজিটাল ভেরিফিকেশন সুবিধা দিচ্ছে, যা সময় এবং ঝামেলা বাঁচায়।
গেটেড কমিউনিটিতে ভাড়া নিন
স্ট্যান্ডঅ্যালোন বিল্ডিং-এ ভাড়া কম হলেও, সেগুলোতে প্রয়োজনীয় সিকিউরিটি এবং সুবিধা থাকে না। গেটেড সোসাইটিতে ২৪/৭ নিরাপত্তা, জিম, সুইমিং পুল, স্পোর্টস ফ্যাসিলিটি, পাওয়ার ব্যাকআপ, পরিচ্ছন্নতা সবই মেলে।
যদিও প্রথমে একটু বেশি খরচ হতে পারে, তবুও নিরাপত্তা ও লাইফস্টাইলের মানের জন্য এটি সেরা বিকল্প। বর্তমানে NoBroker-এর মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সেসব সোসাইটিতে সঠিক তালিকা পেয়ে যাওয়া সহজ হয়েছে।
চুক্তি ভালোভাবে পড়ুন
লিজ চুক্তি সাইন করার আগে ভালোভাবে শর্তাবলী বুঝে নিন। কত টাকা সিকিউরিটি ডিপোজিট, রেন্ট বৃদ্ধি কত শতাংশ, পেইন্টিং চার্জ — সবই স্পষ্টভাবে জেনে নিন। পেইন্টিং চার্জ প্রায় এক মাসের ভাড়ার সমান হতে পারে।
যদি ভাড়া ৫০,০০০ টাকার বেশি হয়, তাহলে ১০% TDS কাটতে হবে, এটাও মাথায় রাখুন।
ভারতের রেন্টাল মার্কেট যত দ্রুত বদলাচ্ছে, তরুণরা ততই স্মার্ট সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। সঠিক তথ্য এবং ডিজিটাল সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাড়ি খোঁজা এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ এবং নিরাপদ হয়েছে।