রথযাত্রায় পুরীতে ভয়াবহ পদদলিত কাণ্ডে মৃত ৩, আহত বহু

পুরী: ওড়িশার পুরী (Puri) শহর রবিবার ভোরে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনার সাক্ষী থাকল। পবিত্র পুরী রথযাত্রা ২০২৫ উপলক্ষে গুন্ডিচা মন্দিরের কাছে পদদলিত হয়ে প্রাণ হারালেন তিনজন…

Odisha Government Bans Sale of Meat and Liquor Near Shree Jagannath Temple in Puri"

পুরী: ওড়িশার পুরী (Puri) শহর রবিবার ভোরে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনার সাক্ষী থাকল। পবিত্র পুরী রথযাত্রা ২০২৫ উপলক্ষে গুন্ডিচা মন্দিরের কাছে পদদলিত হয়ে প্রাণ হারালেন তিনজন পুণ্যার্থী। আহত হয়েছেন বহু। হাজার হাজার মানুষের সমাগমের মাঝে ঘটে গেল এই মর্মান্তিক পুরী স্ট্যাম্পিড নিউজ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রবিবার ভোর সাড়ে চারটা নাগাদ যখন জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার রথ গুন্ডিচা মন্দিরের সামনে পৌঁছায়, তখন হঠাৎ করেই প্রবল ভিড়ের চাপে ব্যাপক হুড়োহুড়ি শুরু হয়। বহু ভক্ত মাটিতে পড়ে যান। তার উপর দিয়ে দৌড়োতে শুরু করে আতঙ্কিত মানুষজন। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ৭০ বছর বয়সী প্রেমাকান্ত মোহান্তি, প্রভাতী দাস এবং বাসন্তী সাহু। তিনজনেরই বাড়ি খুরদা জেলায়। তারা সকলেই ধর্মীয় উদ্দেশ্যে পুরীর (Puri) রথযাত্রা উৎসবে অংশ নিতে এসেছিলেন।

   

স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর, নিহতদের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গিয়েছে। পুরীর (Puri) বিভিন্ন হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা চলছে।

পুরীর (Puri) জেলাশাসক সিদ্ধার্থ শঙ্কর স্বয়েন জানিয়েছেন, “ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে অতিরিক্ত মানুষের ঢল নামায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। আমরা দুঃখিত। ঘটনার আসল কারণ জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে।”

তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি প্রশাসনের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। অভিযোগ উঠেছে, এত বড় জগন্নাথ রথযাত্রা ট্র্যাজেডি সামলাতে প্রশাসনের প্রস্তুতি ছিল না। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও ভিড় নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা আগেভাগে নেওয়া হয়নি। পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী পর্যাপ্ত সংখ্যায় উপস্থিত ছিল না বলেও অভিযোগ।

Advertisements

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেডি প্রধান নবীন পট্টনায়েক এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেন, “পুরীর (Puri) রথযাত্রার মতো গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসবে এই ধরনের ওড়িশা টেম্পল স্ট্যাম্পিড ইনসিডেন্ট অত্যন্ত লজ্জাজনক। এটি এক ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা। প্রশাসনের গাফিলতির ফলেই এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা এখন একমাত্র প্রার্থনা করতে পারি যেন মহাপ্রভু জগন্নাথ এই ভয়াবহ বিশৃঙ্খলার জন্য দোষীদের ক্ষমা করেন।”

পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই উচ্চপর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুরো ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আহতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাদের সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

এই দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই গোটা রাজ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহতদের পরিবারে শোকের মাতম। স্থানীয় বাসিন্দা এবং পুরীর ব্যবসায়ী মহল প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়েছে। অনেকেই দাবি তুলেছেন, আগামী বছর থেকে পুরী (Puri) রথযাত্রা ২০২৬-এ আরও বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হোক।

প্রসঙ্গত, প্রতি বছর কোটি কোটি ভক্ত জগন্নাথদেবের রথযাত্রা দেখতে পুরীতে (Puri) ভিড় করেন। কিন্তু এবারের পুরী রথযাত্রার পদদলিত দুর্ঘটনা নতুন করে প্রশাসনের দায়িত্বজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।