শান্তনু পান, পশ্চিম মেদিনীপুর: সোনার দোকানে চুরি করে পালানোর অভিযোগে পুলিশের জালে ধরা পড়ল বিজেপির যুব মোর্চার এক নেতা (BJP Youth Leader)। অভিযুক্ত যুবকের নাম সোমনাথ। উড়িষ্যার জলেশ্বরের একটি সোনার দোকানে ক্রেতা সেজে ঢুকে চুরি করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
পুলিশ সূত্রের খবর, কালো রঙের স্করপিও গাড়ি নিয়ে ওই দোকানে পৌঁছন সোমনাথ। দোকানে ঢুকে তিনি বিভিন্ন ধরনের সোনার অলঙ্কার দেখতে শুরু করেন। ক্রেতা সেজেই কর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলেন। ঠিক সেই সময়েই কর্মীদের অন্যমনস্কতার সুযোগ নিয়ে প্রায় ১০০ গ্রাম সোনার গয়না নিয়ে গাড়িতে উঠে দ্রুত পালিয়ে যান তিনি।
ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই দোকানের কর্মীরা এবং স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে ধাওয়া করতে শুরু করেন। জলেশ্বর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে লক্ষণনাথ রোডের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ি ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে দাঁড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা তৎক্ষণাৎ গাড়ি থেকে সোমনাথকে ধরে ফেলে এবং তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত সোমনাথ জানিয়েছেন, এক সময় পশ্চিম মেদিনীপুরের পাটনাবাজার এলাকায় সোনার গয়নার কারিগর হিসেবে কাজ করতেন তিনি। পাশাপাশি জানা গিয়েছে, তিনি বিজেপি যুব মোর্চার (BJP Youth Leader) একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন এবং দীর্ঘদিন জেলা কমিটির সম্পাদক পদেও ছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই ধৃতের বিজেপি নেতাদের সঙ্গে তোলা একাধিক ছবি ভাইরাল হয়েছে।
ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “বিজেপি নেতা মানেই নারী পাচার, ড্রাগ পাচার, সোনা পাচার! এই জেলার মানুষ বিজেপিকে ঘৃণা করে। এখানে বিজেপির কোনও অস্তিত্ব নেই। বিজেপির সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধেই কোনও না কোনও অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।”
তৃণমূলের আক্রমণের পাল্টা দিয়ে বিজেপির জেলা মুখপাত্র অরূপ দাস বলেন, “সোমনাথ একসময় বিজেপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, এটা ঠিক। কিন্তু বিগত দেড় বছর ধরে তার সঙ্গে বিজেপির কোনও যোগাযোগ নেই। পুরনো জেলা কমিটি থাকার কারণেই হয়তো তাঁর নাম এখনও ছিল। তবে তিনি এখন বিজেপির কোনও সক্রিয় কর্মী নন।”
তিনি আরও বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেস খুনি ও ধর্ষকদের দল। কলেজের ছাত্রীকে ধর্ষণ থেকে শুরু করে বোমার আঘাতে নাবালিকার মৃত্যুর ঘটনা পর্যন্ত সব কিছুর পিছনে ওদের হাত। তৃণমূলের মুখে এসব কথা মানায় না।”
এই ঘটনার পর জলেশ্বর থানার পুলিশ অভিযুক্ত সোমনাথের বিরুদ্ধে চুরি এবং প্রতারণার ধারায় মামলা রুজু করেছে। তাঁকে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয়দের দাবি, এই ধরনের ঘটনায় রাজনৈতিক দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত চলছে এবং যদি তাঁর বিরুদ্ধে আরও কোনও অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় তবে আইন অনুযায়ী কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই ঘটনা ঘিরে পশ্চিম মেদিনীপুর এবং জলেশ্বর দুই জেলাতেই রাজনৈতিক তরজা তীব্র আকার নিয়েছে। বিজেপি এবং তৃণমূলের পাল্টাপাল্টি বিবৃতি রাজনীতির উত্তাপ আরও বাড়িয়েছে। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, রাজনৈতিক পরিচয় থাকলেই কি আইনের চোখে ছাড় পাওয়া যায়? তদন্তের অগ্রগতি কি সত্যিই নিরপেক্ষ হবে? এখন সবার নজর পুলিশের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।