পুরী রথযাত্রা (Rath Yatra) মানেই এক বিশাল ধর্মীয় উৎসব, ঐতিহ্য আর আবেগের মেলবন্ধন। প্রতিবছর লাখ লাখ ভক্ত পুরীতে জড়ো হন এই মহাযাত্রার সাক্ষী হতে। ২০২৫ সালের রথযাত্রাও তার ব্যতিক্রম নয়। আগামিকাল, ২৭ জুন ২০২৫, অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বহু প্রতীক্ষিত রথযাত্রা। আর এই উপলক্ষে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
জগন্নাথের রথ (Rath Yatra) তৈরির বিশেষত্ব: জগন্নাথদেবের রথ শুধু একটি বাহন নয়, এটি একটি চলমান মন্দির। রথ তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয় বিশেষ ধরনের কাঠ। মূলত ফাসি, ধোরা, সিমলি, সহজা, মাহি এবং দারুক নামের গাছের কাঠ ব্যবহার করা হয়। বছরের শুরু থেকেই শুরু হয় কাঠ সংগ্রহের কাজ। এরপর মাসের পর মাস ধরে দক্ষ কারিগররা হাতে তৈরি করেন তিনটি বিশালাকৃতি রথ।
তিনটি রথের (Rath Yatra) আকার ও নাম:
১। নন্দীঘোষ (জগন্নাথদেবের রথ):
চাকার সংখ্যা: ১৬টি
রঙ: হলুদ আর লাল
উচ্চতা: প্রায় ৪৫ ফুট
প্রধান পতাকা: গরুড়ধ্বজ
২। তালধ্বজ (বলরামের রথ):
চাকার সংখ্যা: ১৪টি
রঙ: নীল ও কালো
প্রধান পতাকা: তালগাছের চিহ্ন
৩। দর্পদলন (সুভদ্রার রথ):
চাকার সংখ্যা: ১২টি
রঙ: লাল ও কালো
প্রধান পতাকা: পদ্মফুলের চিহ্ন
রথের কাঠের বিশেষ ব্যবহার: প্রতিবার রথযাত্রা (Rath Yatra) শেষ হওয়ার পর, রথের কাঠ নিরাপদে সংরক্ষণ করা হয়। শুধু তাই নয়, রথের কিছু কাঠ মন্দিরের রান্নাঘরে প্রসাদ তৈরির জন্যও ব্যবহার করা হয়। কারণ এই কাঠকে অত্যন্ত পবিত্র মনে করা হয়। অনেক ভক্ত আবার এই কাঠ সংগ্রহ করে নিজেদের বাড়িতে শুভ কাজের জন্য রাখেন।
রথযাত্রার প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে: রথযাত্রা (Rath Yatra) উপলক্ষে পুরী শহর এখন সাজো সাজো রব। রথের সাজসজ্জা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, ভক্তদের থাকার ও খাওয়ার সুব্যবস্থা সবই এখন শেষ মুহূর্তের ছোঁয়ায় ব্যস্ত। পুরী প্রশাসন থেকে শুরু করে ভক্ত-স্বেচ্ছাসেবীরা রাতদিন এক করে কাজ করছেন। মন্দির প্রাঙ্গণ, বাদরখন্ডি পথ, গ্র্যান্ড রোড—সব এলাকাই রথযাত্রার সাজে সেজে উঠেছে।
নিরাপত্তা ও দর্শনার্থীদের জন্য নির্দেশিকা: পুরী পুলিশ প্রশাসন ইতিমধ্যেই ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ভিড় নিয়ন্ত্রণ, মেডিকেল ক্যাম্প, জরুরি পরিষেবা সবই প্রস্তুত। ভক্তদের অনুরোধ করা হয়েছে নির্ধারিত পথ দিয়ে চলাচল করতে এবং স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশ মানতে।
পুরী রথযাত্রা (Rath Yatra) শুধু এক ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি এক ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। প্রতি বছর যেমন ভক্তদের ভিড় উপচে পড়ে, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। রথের কাঠ, রথের আকার এবং তার ঐতিহ্য নিয়ে রয়েছে মানুষের গভীর আগ্রহ। তাই আগামিকালের মহাযাত্রার জন্য উন্মুখ অপেক্ষায় দেশ-বিদেশের হাজারো ভক্ত।