পুরী: স্নানযাত্রার পর প্রভু জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা দেবী রুদ্ধদ্বার বিশ্রামে থাকেন, যা দীর্ঘদিনের পুরীর প্রাচীন রীতি। এই সময় তাঁদের শরীরের জ্বর কমানোর জন্য রাজবৈদ্য তৈরি করেন বিশেষ ঔষধি লাড্ডু, যাকে বলা হয় ‘দশমূল মোদক’। এই মোদক খেয়েই নাকি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে প্রভু সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং প্রস্তুত হন রথযাত্রার (Rath Yatra) মহোৎসবের জন্য।
কীভাবে ঘটল বিতর্কের সূত্রপাত?
এবছর এই পবিত্র সময়ে ঘটে গেল এক অস্বাভাবিক ঘটনা। সোমবার (২৩ জুন ২০২৫) জানা যায়, প্রভুর উদ্দেশ্যে নিবেদিত ৩১০টি দশমূল মোদকের মধ্যে ৭০টির হদিস মিলছে না। এই অভিযোগ করেন মন্দিরের (Rath Yatra) এক প্রবীণ সেবাইত, হলধর দাস মহাপাত্র, যিনি প্রভু বলভদ্রের বড়াগ্রাহী।
তিনি সরাসরি অভিযোগ জানান ‘শ্রী জগন্নাথ মন্দির প্রশাসনের’ প্রধান প্রশাসক অরবিন্দ পাধীর কাছে।
হলধরের দাবি, কড়া পাহারার মধ্যেও এই মোদকগুলি নিখোঁজ হওয়া অত্যন্ত সন্দেহজনক এবং এই ঘটনাকে তিনি অশুভ লক্ষণ বলে মনে করছেন।
ভক্তমহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য:
এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই পুরী শহরে শুরু হয় তীব্র আলোচনা এবং উদ্বেগ। ভক্তদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাঁদের মতে, রথযাত্রার আগে এমন অশুভ ঘটনা কখনও ঘটে না। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই বিষয়টি ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে ওড়িশা সরকারের আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, “পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে কোনও মোদক চুরি হয়নি। এই বিষয়ে মন্দির প্রশাসকের (অরবিন্দ পাধী) সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে সমস্ত মোদকই সুরক্ষিত রয়েছে।”
তবে সরকারের আশ্বাস সত্ত্বেও স্থানীয়দের মধ্যে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
তাহলে কেন এমন অভিযোগ উঠল?
অভিযোগ যদি ভুল হয়ে থাকে, তাহলে শুরুতেই এই বিভ্রান্তি কেন?
সেবাইতদের একাংশ কেন এই অভিযোগ করেছিলেন?
মন্দির কর্তৃপক্ষ এখনো এই বিষয়ে সরাসরি মুখ খুলছেন না।
তবে সূত্রের খবর, ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু হয়েছে।
রথযাত্রার (Rath Yatra) জগন্নাথ মন্দিরে মোদক চুরি বিতর্ক, রথযাত্রার আগে সরকারের আশ্বাসপ্রস্তুতি তুঙ্গে:
এই বিতর্কের মধ্যেই এখন পুরী শহর রথযাত্রার চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে ব্যস্ত।
বিশাল ভক্তসমাগমের জন্য প্রশাসনিক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
মন্দিরের প্রবেশপথ থেকে শুরু করে রথের রুট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে নজরদারি।
যদিও সরকারি ভাবে জানানো হয়েছে মোদক চুরি হয়নি, তবে পুরীর আকাশে বিতর্কের মেঘ এখনো কাটেনি। ভক্তদের আশা, প্রভু সুস্থ হয়ে রথে আরোহন করবেন এবং সারা বিশ্বের কাছে পুরীর রথযাত্রার গৌরবময় ঐতিহ্য অটুট থাকবে।
