মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Trump) তীব্র চাপের মুখে ন্যাটো সদস্য দেশগুলো তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় ৫ শতাংশ জিডিপি’র সমান করতে সম্মত হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে বুধবার অনুষ্ঠিত ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা ইউরোপের নিরাপত্তা কাঠামোর জন্য একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তবে, স্পেন এই লক্ষ্য থেকে ছাড় পাওয়ার জন্য আলাদা শর্ত চেয়েছিল, যা শেষ পর্যন্ত মেনে নেওয়া হয়। ট্রাম্প (Trump) দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপীয় মিত্রদের তাদের নিরাপত্তার জন্য আরও বেশি অর্থ ব্যয় করার দাবি জানিয়ে আসছেন, এবং এই সিদ্ধান্ত তাঁর কূটনৈতিক জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ন্যাটোর নতুন ব্যয় লক্ষ্য
২০১৪ সালে ন্যাটো সদস্য দেশগুলো তাদের জিডিপি’র ২ শতাংশ প্রতিরক্ষায় ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে, ২০২৪ সালে ৩২টি সদস্য দেশের মধ্যে মাত্র ২৩টি এই লক্ষ্য পূরণ করেছে। ট্রাম্প, যিনি তাঁর প্রথম মেয়াদে ন্যাটো সদস্যদের ৪ শতাংশ ব্যয়ের দাবি জানিয়েছিলেন, এবার ৫ শতাংশের লক্ষ্য নির্ধারণ করেন।
নতুন পরিকল্পনায় ৩.৫ শতাংশ সরাসরি সামরিক(Trump) ব্যয়ে এবং ১.৫ শতাংশ অ-প্রথাগত প্রতিরক্ষা-সংক্রান্ত খাতে, যেমন রেললাইন, সেতু, সাইবার নিরাপত্তা এবং উন্নত প্রযুক্তি, ব্যয় করা হবে। এই লক্ষ্য ২০৩৫ সালের মধ্যে পূরণ করতে হবে, যদিও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে এটি অর্জনের পক্ষে।
ট্রাম্পের চাপ এবং ইউরোপের প্রতিক্রিয়া (Trump)
ট্রাম্প (Trump) বারবার দাবি করে এসেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর নিরাপত্তা ব্যয়ের সিংহভাগ বহন করে, যা তাঁর মতে ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য ‘অন্যায্য’। ২০২৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর মোট প্রতিরক্ষা ব্যয়ের প্রায় ৬৮ শতাংশ বা ৯৬৮ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে, যেখানে ইউরোপীয় দেশগুলো এবং কানাডা মিলে ৫০৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। ট্রাম্পের এই দাবি ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে।
ন্যাটো (Trump) মহাসচিব মার্ক রুটে বলেন, “আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় আরও বাড়াতে হবে। ২ শতাংশ যথেষ্ট নয়।” তিনি ২০৩২ সালের মধ্যে ৩.৫ শতাংশের লক্ষ্য এবং ১.৫ শতাংশ অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রস্তাব দেন। পোল্যান্ড, এস্তোনিয়া এবং লিথুয়ানিয়ার মতো রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দেশগুলো ইতিমধ্যে ৫ শতাংশের লক্ষ্যের দিকে এগোচ্ছে। পোল্যান্ড ২০২৪ সালে জিডিপি’র ৪.১২ শতাংশ ব্যয় করেছে, এবং এস্তোনিয়া ও লিথুয়ানিয়া ২০২৬ সালের মধ্যে ৫ শতাংশে পৌঁছানোর পরিকল্পনা করছে।
স্পেনের ব্যতিক্রম
স্পেন, যারা ২০২৪ সালে জিডিপি’র মাত্র ১.২ শতাংশ প্রতিরক্ষায় ব্যয় করেছে, নতুন লক্ষ্য থেকে ছাড় চেয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেন, “৫ শতাংশ ব্যয় স্পেনের সামাজিক কল্যাণ ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।” শেষ পর্যন্ত, ন্যাটো সদস্যরা স্পেনকে নমনীয়তা দেওয়ার জন্য সম্মত হয়, যার ফলে চুক্তির ভাষা “আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি” থেকে “মিত্ররা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে” তে পরিবর্তিত হয়।
ইউরোপের চ্যালেঞ্জ
ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য ৫ শতাংশ লক্ষ্য অর্জন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ইতালি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো বাজেট ঘাটতি এবং সামাজিক ব্যয়ের চাপের মুখে রয়েছে। ইতালির প্রতিরক্ষামন্ত্রী গুইডো ক্রোসেতো বলেন, “৫ শতাংশ অর্থনৈতিকভাবে অসম্ভব। আমরা ২০২৮ সালের মধ্যে ২ শতাংশে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।” জার্মানি, যারা ২০২৪ সালে ২.১ শতাংশ ব্যয় করেছে, অস্থায়ী তহবিলের উপর নির্ভর করছে, যা দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নয়।
কিছু বিশ্লেষক ট্রাম্পের (Trump) এই দাবিকে একটি কূটনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছেন। রাফায়েল লস, ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস-এর একজন বিশ্লেষক, বলেন, “ট্রাম্প সম্ভবত ৩.৫ শতাংশে সমঝোতা করতে পারেন। তবে, তিনি যদি ন্যাটো থেকে মার্কিন সমর্থন প্রত্যাহারের হুমকি দেন, তা ইউরোপের জন্য বিপর্যয়কর হবে।”
ক্রেডিট স্কোরে কি প্রভাব ফেলে আয়ের পরিমাণ? জানুন অভিজ্ঞদের মত
রাশিয়ার হুমকি ও ইউক্রেন যুদ্ধ
রাশিয়ার ইউক্রেনে আগ্রাসন এবং পূর্ব ইউরোপে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ন্যাটোর প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর প্রধান কারণ। এস্তোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টান মিচাল বলেন, “এটি পুতিনের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা যে ন্যাটো তাঁর স্নায়ু পরীক্ষা করার সাহস করবে না।” ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, যিনি শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ন্যাটোর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ট্রাম্পের জয়
ন্যাটোর এই সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের (Trump) জন্য একটি বড় কূটনৈতিক জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। একজন মার্কিন প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, “ট্রাম্প ছাড়া ৫ শতাংশ লক্ষ্য সম্ভব হতো না।” তবে, ট্রাম্পের সমালোচকরা বলছেন, এই চাপ ইউরোপীয় দেশগুলোর অর্থনীতির উপর অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দিতে পারে এবং ন্যাটোর ঐক্যকে দুর্বল করতে পারে।
দ্য হেগে ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলন ইউরোপের নিরাপত্তা কাঠামোর জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। ট্রাম্পের (Trump) চাপে ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ হলেও, এটি বাস্তবায়নের পথে বাজেট সীমাবদ্ধতা এবং রাজনৈতিক মতবিরোধ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। রাশিয়ার হুমকি এবং ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ন্যাটোর এই সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য এটি একটি কঠিন পরীক্ষা হবে।