মিলন পণ্ডা, কাঁথি: পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে ফের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা। তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) কাউন্সিলর রীনা দাস সহ দুইজনের বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করল কাঁথি থানার পুলিশ। মৃত রামপদ দাসের স্ত্রী শ্রাবণী দাস স্বামী মৃত্যুর পিছনে সরাসরি কাউন্সিলর ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
ঘটনার সূত্রপাত গত ১২ জুন। অভিযোগ অনুযায়ী, সেদিন কাঁথি পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল (TMC) কাউন্সিলর রীনা দাসের বাড়িতে পারিবারিক বিবাদের জেরে তীব্র ঝগড়া-বিবাদ শুরু হয়। সেই সময় শ্রাবণী দাসকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। আহত অবস্থায় তাঁকে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এই ঘটনার পাল্টা অভিযোগে কাউন্সিলর রীনা দাসও তাঁর ভাই রামপদ দাস ও অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
তবে ঘটনার মোড় ঘুরে যায় ১৩ জুন। অভিযোগ, হাসপাতালের বেড থেকে রামপদ দাসকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায় কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠরা। শ্রাবণী দাসের দাবি, কাউন্সিলর রীনা দাসের মদতে রামপদকে একটি গোপন স্থানে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়।
সূত্রের খবর, মারধরের পর বিষক্রিয়ার অবস্থায় রামপদ দাসকে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে তমলুকের এক বেসরকারি নার্সিংহোমে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে টানা চিকিৎসার পর গত ১৬ জুন মৃত্যু হয় রামপদ দাসের।
মৃতের পরিবারের অভিযোগ, “ঘটনার দিন থেকে পরিকল্পিতভাবে রামপদকে হত্যা করা হয়েছে। তার প্রতিবাদ করার জন্যই তাঁকে বারবার হেনস্থা করা হচ্ছিল।”
শ্রাবণী দাস বলেন, “আমার স্বামীর মৃত্যু শুধু আত্মহত্যা নয়, এর পিছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে। কাউন্সিলরের উপস্থিতিতেই বাড়িতে নানা অসামাজিক কাজ চলত। আমি প্রতিবাদ করায় আমাকেও মারধর করা হয়েছিল। আমার স্বামীকে অপমান করে, মানসিকভাবে চাপে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশের কাছে আবেদন করেছি, নিরপেক্ষ তদন্ত হোক।”
পুলিশের পক্ষ থেকে কাঁথি থানার আইসি প্রদীপ কুমার দাঁ জানান, “অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
অন্যদিকে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কাউন্সিলর রীনা দাস। তাঁর দাবি, “এই সমস্ত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাকে এবং আমার পরিবারকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। আমি নিজেও ওই দিন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চক্রান্ত করা হচ্ছে। বড় সাক্ষী আমার মা। আমি নির্দোষ।”
রাজনৈতিক মহলে ইতিমধ্যেই ব্যাপক চর্চা শুরু হয়েছে এই ঘটনা নিয়ে। একাংশের মতে, তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। মৃতের পরিবারের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পাশাপাশি, ময়নাতদন্তের রিপোর্টও বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এখন দেখার, তদন্তের শেষ পর্যায়ে সত্যিই কারা দোষী সাব্যস্ত হন এবং আদৌ কাউন্সিলর ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে আইনত কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।