জম্মু ও কাশ্মীরের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ও জাতীয় কনফারেন্সের নেতা ওমর আবদুল্লা (Omar Abdullah ) সম্প্রতি একটি বড় ঘোষণা দিয়েছেন, যা রাজ্যের উন্নয়ন ও সংযোগের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ২০২৫ সালের ২৩ জুন, সোমবার, সন্ধ্যা ৭:১৯টায় এই খবরটি তিনি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ প্রকাশ করেন। তিনি জানিয়েছেন যে তাঁর সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় ১০,৬০০ কোটি টাকার রাস্তা ও সুড়ঙ্গ প্রকল্পের অনুমোদন লাভ করেছে। এই প্রকল্পটি জম্মু ও কাশ্মীরের উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং সংযোগের জন্য একটি বড় ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ওমর আবদুল্লা এই সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় পরিবহন ও হাইওয়ে মন্ত্রী নীতিন গড়করিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, “আমি প্রধানমন্ত্রী @narendramodi
জি এবং মন্ত্রী @nitin_gadkari
জি-এর অব্যাহত সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞ, যিনি আমাদের জম্মু ও কাশ্মীরকে উন্নতির পথে পরিচালনা করতে সাহায্য করছেন।”
প্রকল্পের বিস্তারিত
ওমর আবদুল্লার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এই ১০,৬০০ কোটি টাকার প্রকল্পে ৪৭টি উন্নয়ন কাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে রাস্তা নির্মাণ, সুড়ঙ্গ নির্মাণ এবং সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাজগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তালিকায় উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হলো ১৩.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ জোজিলা সুড়ঙ্গ, যা সোনামার্গ পর্যটনক্ষেত্রের সারাবছর সংযোগ নিশ্চিত করবে। এছাড়া বিভিন্ন সড়ক নিরাপত্তা কাজ, যেমন জম্মু-শ্রীনগর হাইওয়ে চতুর্দলীকরণ এবং অন্যান্য সংযোগ উন্নয়নের জন্য প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরের দুর্গম এলাকাগুলোর সঙ্গে বাকি ভারতের সংযোগ আরও শক্তিশালী হবে, যা অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পর্যটন এবং প্রতিরক্ষা লজিস্টিক্সের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
ওমর আবদুল্লার এই ঘোষণা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৪ সালের অক্টোবরে তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন, যেখানে তাঁর জাতীয় কনফারেন্স ও ইন্ডিয়া ব্লকের সঙ্গে জয়ী জোট গড়ে। তবে পূর্বে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সম্পর্কে বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছিলেন, বিশেষ করে ২০১৯ সালে আর্টিকেল ৩৭০ প্রত্যাহারের পর। তখন তিনি কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তিনি একটি ব্যবহারিক এবং সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছেন, যা তাঁর রাজনৈতিক পরিপক্কতার প্রমাণ। এই পরিবর্তন অনেকের মতে, জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের ভালোর জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
জনগণের প্রতিক্রিয়া
ওমর আবদুল্লার এই ঘোষণার পর এক্স-এ বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ এই উন্নয়নকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং জম্মু ও কাশ্মীরকে “সুইজারল্যান্ড”-এর মতো পর্যটনক্ষেত্রে রূপান্তরের কথা বলেছেন। অন্যদিকে, কিছু ব্যবহারকারী জম্মু শহরের জন্য কোনো প্রকল্পের অভাবে নিরাশা প্রকাশ করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, “জম্মু শহরের জন্য একটি প্রকল্পও নেই, এটা কি ন্যায়বিচার?” এছাশা, কিছু ব্যক্তি উন্নয়নের পাশাপাশি যুবকদের চাকরি, শিক্ষা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি তুলেছেন। এই প্রতিক্রিয়াগুলো দেখায় যে, স্থানীয় জনগণ উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সমাজিক ন্যায়বিচারের প্রত্যাশাও রাখছেন।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব
এই প্রকল্পগুলোর অর্থনৈতিক প্রভাব গভীর হতে পারে। জম্মু ও কাশ্মীরের দুর্গম এলাকাগুলোতে সড়ক সংযোগের উন্নতি পর্যটন, বাণিজ্য এবং শিল্পের জন্য দরজা খুলবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২,৪০০ কোটি টাকায় নির্মিত জেড-মরহ সুড়ঙ্গ সোনামার্গকে সারাবছর সক্রিয় রাখবে, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে। তবে কিছু সমালোচক বলছেন, এই প্রকল্পগুলোর ব্যয়বহুল প্রকৃতির কারণে সরকারকে স্থানীয় উন্নয়ন, যেমন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা, এবং বাজেটের ভারসাম্য রাখতে হবে।
পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়ন
সড়ক ও সুড়ঙ্গ নির্মাণের সঙ্গে পরিবেশের উপর প্রভাব বিবেচনা করা জরুরি। হিমালয়ের কোল ঘেঁষে এই প্রকল্পগুলো পরিবেশবাদীদের উদ্বেগের কারণ হতে পারে। তবে ওমর আবদুল্লা এবং কেন্দ্রীয় সরকার টেকসই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জোজিলা সুড়ঙ্গের মতো প্রকল্পে আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যেমন সিসিটিভি, রেডিও কন্ট্রোল এবং পরিবেশ সুরক্ষা ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, যা এই উদ্বেগ কিছুটা কমাতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদী পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য আরও সচেতনতা প্রয়োজন।
ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা
ওমর আবদুল্লার এই পদক্ষেপ রাজ্যের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য একটি ইতিবাচক সংকেত। তবে তাঁকে স্থানীয় জনগণের বিভিন্ন দাবি, যেমন চাকরি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এই প্রকল্পগুলো যদি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের উন্নত রাজ্যগুলোর সারিবদ্ধ হতে পারে। তবে এর জন্য সরকারকে স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও সহযোগিতা বজায় রাখতে হবে।