‘মুখোশ খুলে গেছে’ ,যুক্তরাষ্ট্রের ইরান আক্রমন নিয়ে বিস্ফোরক ওয়াইসি

অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) প্রধান এবং হায়দ্রাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসি  (Owaisi) যুক্তরাষ্ট্রের ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় সাম্প্রতিক হামলা এবং ইসরায়েল-ইরান সংঘাত নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া…

Owaisi statement on iran crisis

অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) প্রধান এবং হায়দ্রাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসি  (Owaisi) যুক্তরাষ্ট্রের ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় সাম্প্রতিক হামলা এবং ইসরায়েল-ইরান সংঘাত নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

তিনি (Owaisi) এই হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের তীব্র নিন্দা করেছেন এবং পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মধ্যাহ্নভোজের বৈঠক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

   

ওয়াইসি (Owaisi) বলেছেন, “পাকিস্তানের জেনারেল (আসিম মুনির) কি এই কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে মিলিত হয়েছিলেন? আজ তাদের সকলের মুখোশ খুলে গেছে।” তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে এই হামলা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে সহায়তা করেছে, যাকে তিনি ফিলিস্তিনিদের উপর “গণহত্যা” চালানোর জন্য “কসাই” বলে আখ্যায়িত করেছেন।

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলা (Owaisi)

সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে ফোর্ডো ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্টও রয়েছে, যা ভূগর্ভে অবস্থিত এবং প্রচলিত বাঙ্কার বাস্টার বোমা দিয়ে ধ্বংস করা কঠিন।

এই হামলা ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের পটভূমিতে সংঘটিত হয়েছে, যেখানে ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে। ইরানও পাল্টা হামলার মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাকে আরও তীব্র করেছে, এবং এর ফলে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার উপর প্রভাব পড়তে পারে।

ওয়াইসি (Owaisi) এই হামলার তীব্র নিন্দা করে বলেছেন যে এটি ইসরায়েলের হাতকে শক্তিশালী করেছে, যিনি ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে “গণহত্যা” চালাচ্ছেন। তিনি আরও প্রশ্ন তুলেছেন যে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজের বৈঠক কি এই হামলার পরিকল্পনার অংশ ছিল। তিনি বলেছেন, “পাকিস্তানিরা কি এই কারণে ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করেছিল? আজ তাদের সকলের মুখোশ খুলে গেছে।”

ট্রাম্প-মুনির বৈঠক: পটভূমি ও বিতর্ক

১৮ জুন, ২০২৫-এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের সঙ্গে একটি ব্যক্তিগত মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন। এটি ছিল একটি অভূতপূর্ব ঘটনা, কারণ এটি প্রথমবারের মতো একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে, যিনি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান নন, হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

এই বৈঠকের বিষয়বস্তু আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে যে আলোচনায় আঞ্চলিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের বিষয়ে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

Advertisements

ট্রাম্প এই বৈঠকের পর দাবি করেছেন যে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি সম্ভাব্য যুদ্ধ প্রতিরোধ করেছেন, এবং এই প্রক্রিয়ায় মুনির এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Owaisi) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তবে, ভারত এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে, জানিয়েছে যে মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সামরিক উত্তেজনা কমানোর জন্য দুই দেশের সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে সরাসরি আলোচনা হয়েছিল, এবং কোনো তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা জড়িত ছিল না।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্প-মুনির বৈঠক ভারতের কূটনৈতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ভারতের প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিং এই বৈঠককে পাকিস্তানের জন্য “লজ্জাজনক” বলে আখ্যায়িত করেছেন, কারণ পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তিনি বলেছেন, “এটি এমন একটি দেশের জন্য লজ্জার বিষয় যেখানে সামরিক প্রধান সরকারের উপরে প্রাধান্য পায়।”

কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এবং জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহও (Owaisi) এই বৈঠকের সমালোচনা করেছেন। রমেশ বলেছেন যে এটি ভারতের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার জন্য একটি “ধাক্কা” এবং মুনিরের অতীতের উস্কানিমূলক মন্তব্যের কথা উল্লেখ করেছেন। আবদুল্লাহ বলেছেন, “আমেরিকা কেবল নিজের স্বার্থ দেখে, অন্য কোনো দেশের কথা ভাবে না।”

কর্ণাটকের আমচাষিদের জন্য কেন্দ্রীয় অর্থ সহায়তার ঘোষণা

পাকিস্তানের অবস্থান

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির ওয়াশিংটনে একটি বক্তৃতায় ইরানের প্রতি তাঁর দেশের “সুস্পষ্ট এবং দৃঢ়” সমর্থন প্রকাশ করেছেন, তবে একই সঙ্গে সংঘাত নিরসনের জন্য মার্কিন নেতৃত্বাধীন প্রচেষ্টার সমর্থন করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমরা চাই এই যুদ্ধ অবিলম্বে শেষ হোক।” তবে, পাকিস্তানের এই দ্বৈত অবস্থান তাদের কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে, কারণ তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা করছে, যখন ইরান এবং চীনের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখছে।

ওয়াইসির (Owaisi) মন্তব্য এবং ট্রাম্প-মুনির বৈঠক নিয়ে উদ্ভূত বিতর্ক মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার জটিল ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতাকে তুলে ধরেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা এবং পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক এই অঞ্চলে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।

ভারত এই পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে, কারণ এটি তাদের কৌটনীতিক এবং নিরাপত্তা স্বার্থের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই ঘটনাগুলো বিশ্ব রাজনীতিতে ক্ষমতার ভারসাম্য এবং জটিল জোটের গতিশীলতাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।