সম্প্রতি পহেলগাঁও-এ ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় নিহত হন ২৬ জন। এই হামলার তদন্তে নেমে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (NIA) বড়সড় সাফল্য পেয়েছে। তদন্তে জানা গিয়েছে, নিষিদ্ধ পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবা (Lashkar-e-Taiba)–র তিন সদস্য এই হামলায় যুক্ত ছিল।
তদন্তে আরও উঠে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য—এই জঙ্গিদের আশ্রয় ও সহযোগিতা করেছিলেন দুই স্থানীয় বাসিন্দা, যাদের ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম পারভেজ আহমেদ জোথার এবং বশির আহমেদ জোথার। দু’জনেই পহেলগামের বাসিন্দা।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, পারভেজ ও বশির হামলার আগে ওই তিন জঙ্গিকে পহেলগাঁও-র হিল পার্ক এলাকায় একটি মৌসুমি কুঁড়েঘরে আশ্রয় দিয়েছিল। সেখানেই তারা অস্ত্রসহ অবস্থান করছিল এবং হামলার আগে প্রয়োজনীয় রসদ ও লজিস্টিক সাপোর্ট সংগ্রহ করছিল। গ্রেফতার হওয়া দুই অভিযুক্তের কাছ থেকেই NIA ওই তিন পাকিস্তানি জঙ্গির পরিচয় জানতে পেরেছে বলে জানা গিয়েছে।
জঙ্গিরা কারা?
তদন্তে উঠে এসেছে, তারা সবাই পাকিস্তানের নাগরিক এবং লস্কর-ই-তৈবার সক্রিয় সদস্য। সীমান্ত পেরিয়ে তারা জম্মু ও কাশ্মীরে ঢুকেছিল এবং পারভেজ ও বশিরের সাহায্যে পহেলগাঁও-এ অবস্থান করছিল। এই ঘটনার পেছনে একটি সুসংগঠিত স্লিপার সেল নেটওয়ার্ক কাজ করছে বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেছে তদন্তকারীরা।
NIA এই দু’জনকে UAPA (Unlawful Activities Prevention Act) আইনে গ্রেফতার করেছে। বর্তমানে তারা তদন্তে সহযোগিতা করছে এবং আরও তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হচ্ছে। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই গ্রেফতার ভবিষ্যতের হামলা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এই হামলায় ২৬ জন সাধারণ মানুষ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। গোটা অঞ্চলজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা একযোগে তদন্ত শুরু করে। সেই তদন্তেই প্রথম বড় ক্লু হিসেবে উঠে এল এই দুই স্থানীয় সাহায্যকারীর নাম।
এই ঘটনার পর উপত্যকাজুড়ে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন জানিয়েছে, সীমান্তবর্তী এলাকা ও সম্ভাব্য সংবেদনশীল জায়গাগুলিতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি সেনা ও আধা-সেনা বাহিনীর যৌথ অভিযানের মাধ্যমে এলাকায় জঙ্গিদের লুকিয়ে থাকার সম্ভাব্য জায়গাগুলি তল্লাশি করা হচ্ছে।
NIA-র এই গ্রেফতার জম্মু ও কাশ্মীরের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। পাকিস্তানি জঙ্গিদের স্থানীয় সহযোগিতা পাওয়া এবং তাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া তদন্তে আরও অগ্রগতি ঘটাবে। এখন দেখার, এই ঘটনার জেরে উপত্যকায় শান্তি ফেরাতে প্রশাসন কতটা দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়।