রাজ্যের বহু স্কুলে এখনও ছাত্রছাত্রীরা অভুক্ত অবস্থায় স্কুলে হাজির হয়, অনেকেই মিড ডে মিলের আওতায় পড়েন না। এমন অবস্থায় রাজ্য সরকার এবার উদ্যোগ নিয়েছে স্কুলে থাকা বেঁচে যাওয়া মিড ডে মিল দিয়ে পথকুকুরদের (Dogs) অন্তত একবেলার খাবার জোগাতে। সমগ্র শিক্ষা মিশনের অধীনে এই নির্দেশিকা সম্প্রতি রাজ্যের সব জেলার শিক্ষা আধিকারিকদের পাঠানো হয়েছে।
নির্দেশিকার মূল বক্তব্য কী?
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী ঠিক করবেন, যিনি প্রতিদিন দুপুরের পর স্কুল চত্বরের বাইরে পথকুকুরদের খাবার দেবেন। এই দায়িত্ব মিড ডে মিল পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত কাউকে দেওয়া হলে সুবিধা হবে বলে নির্দেশিকায় উল্লেখ রয়েছে। বেঁচে যাওয়া খাবার দিয়েই মূলত এই ব্যবস্থা চালু করার প্রস্তাব রয়েছে।
পাশাপাশি পদক্ষেপ কী?
জেলার প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের আধিকারিকদেরও বলা হয়েছে, তাঁরা যেন নিয়মিতভাবে কুকুরদের স্টেরিলাইজেশন ও ভ্যাকসিনেশন করেন, যাতে জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বজায় থাকে।
সমালোচনা ও প্রশ্ন
এই উদ্যোগ যতটা মানবিক, ততটাই বাস্তবায়নের দিক থেকে জর্জরিত প্রশ্নে। রাজ্যের বহু স্কুলে এখন মিড ডে মিল চালানোর মতো যথেষ্ট খাবারই নেই, সেখানে অতিরিক্ত খাবার বাঁচে কীভাবে? আর যদি কিছু না বাঁচে, তবে কি সরকারি খরচে অতিরিক্ত খাবারের ব্যবস্থা করা হবে?
হাওড়ার তারাসুন্দরী বালিকা বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষিকা মনালিসা মাইতির মতে, “আমরা ক্লাস এইট পর্যন্ত মিড ডে মিল দিতে পারি। অথচ, নাইন-টুয়েলভের পড়ুয়ারাও অনেক সময় না খেয়ে স্কুলে থাকে। মিড ডে মিলের অতিরিক্ত খাবার যদি ওদের দেওয়া যেত, তবে সেটা আরও যুক্তিযুক্ত হতো।”
তিনি আরও বলেন, “আমি কুকুর ভালোবাসি। কিন্তু প্রতিদিন স্কুলে খাবার দিলে তারা স্কুলে ভিড় করবে, কামড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হবে। তখন শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।”
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং মানবসম্পদের ঘাটতি
যেখানে রাজ্যের প্রায় ৫০ হাজার প্রাইমারি স্কুলে এখনও শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মী নেই, সেখানে এই বাড়তি দায়িত্ব পালন করা কার পক্ষে সম্ভব? একাধিক স্কুলে বর্তমানে মাত্র একজন শিক্ষক আছেন, তার উপর মিড ডে মিল, পড়ানো ও অন্যান্য প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলাতে হয়।
ছুটির দিনগুলিতে কী হবে?
আইসার কলকাতার ‘ডগ ল্যাব’-এর বিজ্ঞানী অনিন্দিতা ভদ্র প্রশ্ন তুলেছেন, “রবিবার বা ছুটির দিনে কুকুরেরা খাবার পাবে কোথায়? স্কুলে খাবার দিলে তারা বিশেষ সময়ে সেখানে ভিড় করবে। এর ফলে নিজেদের মধ্যে মারামারি হতে পারে। এমনকি আচমকা সংখ্যাও বাড়তে পারে।”
পক্ষ ও বিপক্ষের অবস্থান
যেখানে অভিভাবক ও শিক্ষক সংগঠন এই সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, সেখানে পশুপ্রেমীরা এই উদ্যোগকে মানবিক বলেই প্রশংসা করছেন। কুকুরপ্রেমী পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়ের মতে, “এটা ছাত্রছাত্রীদের সহমর্মিতার পাঠ দেবে। চাইলে পড়ুয়া, শিক্ষক ও কুকুরপ্রেমীদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে সুন্দরভাবে কাজটি করা সম্ভব।”
মানবিক দিক থেকে এই সিদ্ধান্ত প্রশংসনীয় হলেও, বাস্তব প্রেক্ষাপটে তা কার্যকর করার পথে রয়েছে বহু চ্যালেঞ্জ। মিড ডে মিল ব্যবস্থার দুর্বলতা, জনবল ঘাটতি, নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে। রাজ্য সরকারের তরফে এ বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা এখনও মেলেনি। ফলে, সিদ্ধান্ত কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলবে।