শুক্রবার রাতে ইরানের (Iran) উত্তরাঞ্চলের সেমনান অঞ্চলে ৫.২ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। তাসনিম নিউজ এজেন্সির খবর অনুযায়ী, এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল সেমনান শহর থেকে ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। ভূমিকম্পটি মাটির ১০ কিলোমিটার গভীরে সংঘটিত হয়, যা অপেক্ষাকৃত অগভীর বলে বিবেচিত হয়।
এই ঘটনা ইরান (Iran) ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যে ঘটেছে, যা গত নয় দিন ধরে ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। এই ভূমিকম্পের পর থেকে সামাজিক মাধ্যমে জল্পনা শুরু হয়েছে যে, এটি কোনো প্রাকৃতিক ভূমিকম্প নয়, বরং ইরানের গোপন পারমাণবিক পরীক্ষার ফল হতে পারে।
ইরানের (Iran) সেমনান প্রদেশে অবস্থিত সেমনান স্পেস সেন্টার এবং সেমনান মিসাইল কমপ্লেক্সের কাছে এই ভূমিকম্প ঘটায় এই জল্পনা আরও জোরালো হয়েছে। এই দুটি স্থাপনা ইরানের সামরিক বাহিনী দ্বারা পরিচালিত হয় এবং এটি দেশের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত। ভূমিকম্পের সময় ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে তীব্র সামরিক সংঘর্ষ চলছিল।
ইসরায়েল ইরানের (Iran) পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোতে একাধিক হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে ফোর্ডো, নাটানজ এবং ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো উল্লেখযোগ্য। এই প্রেক্ষাপটে ভূমিকম্পের ঘটনা পারমাণবিক পরীক্ষার জল্পনাকে উস্কে দিয়েছে।
ইরানের (Iran) রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে, এই ভূমিকম্পে কোনো প্রাণহানি বা উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে, ভূমিকম্পের কম্পন তেহরানের মতো দূরবর্তী এলাকায়ও অনুভূত হয়েছে, যা সেমনান থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
স্থানীয় সময় রাত ৯:১৯-এ ঘটে যাওয়া এই ভূমিকম্পের মাত্রা ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে ৫.৫ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও, ইউএস জিওলজিকাল সার্ভে (ইউএসজিএস) এবং ইউরোপিয়ান-মেডিটারেনিয়ান সিসমোলজিকাল সেন্টার (ইএমএসসি) এটিকে ৫.১ থেকে ৫.২ মাত্রার বলে নিশ্চিত করেছে।
এই ভূমিকম্পের পর সামাজিক মাধ্যমে, বিশেষ করে এক্স প্ল্যাটফর্মে, অনেকে দাবি করেছেন যে, এটি ইরানের গোপন পারমাণবিক পরীক্ষার ফল হতে পারে। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “ইরান গত রাত থেকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা শুরু করেছে। তারা ১০ কিলোমিটার গভীরে পরীক্ষা চালিয়েছে যাতে রেডিয়েশন নির্গত না হয়।” তবে, এই দাবিগুলোর কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ইউএসজিএস, কম্প্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার-টেস্ট-ব্যান ট্রিটি অর্গানাইজেশন (সিটিবিটিও) এবং স্বাধীন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা এই জল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁদের মতে, ভূমিকম্পের তরঙ্গ বিশ্লেষণে এটি একটি প্রাকৃতিক ঘটনা বলে প্রমাণিত হয়েছে। পারমাণবিক বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট ভূমিকম্প এবং প্রাকৃতিক ভূমিকম্পের তরঙ্গের ধরন ভিন্ন হয়। সিটিবিটিওর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ এবং ২০১৮ সালে সেমনানে একই ধরনের ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছিল, যা পারমাণবিক কার্যকলাপের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল না।
ইরান (Iran) ভূমিকম্পপ্রবণ একটি দেশ। এটি আরবীয় এবং ইউরেশীয় টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত, যার ফলে বছরে গড়ে ২১০০টি ভূমিকম্প ঘটে। এর মধ্যে ১৫ থেকে ১৬টি ভূমিকম্প ৫.০ বা তার বেশি মাত্রার হয়। ২০০৬ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ইরানে ৯৬,০০০টি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, সেমনানের ভূমিকম্পকে প্রাকৃতিক ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
তবে, ইরানের (Iran) পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। সেমনানে অবস্থিত মিসাইল কমপ্লেক্স এবং স্পেস সেন্টারের কাছে ভূমিকম্পের ঘটনা এই উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ইরানের পরমাণু স্থাপনা, যেমন ফোর্ডো এবং নাটানজ, গভীর ভূগর্ভে অবস্থিত এবং এগুলোকে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার লক্ষ্যবস্তু বলে মনে করা হচ্ছে।
বাইচুং ভুটিয়ার দুর্নীতির অভিযোগ খারিজ করে বিবৃতি ফেডারেশন সভাপতির
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সম্প্রতি ইসরায়েল ফোর্ডো, নাটানজ এবং ইসফাহানে হামলা চালিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এই হামলার পর ফোর্ডোর কাছে ২.৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়, যা ইসরায়েলি হামলার সঙ্গে সম্পর্কিত বলে জল্পনা তৈরি হয়। তবে, বিশেষজ্ঞরা এই ঘটনাকেও প্রাকৃতিক বলে নিশ্চিত করেছেন।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এবং সিটিবিটিও নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছে। ইরান বারবার দাবি করেছে যে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে, এবং পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। তবে, ইরানের ক্রমবর্ধমান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ এবং মিসাইল ক্ষমতা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগ বাড়ছে।
ইরান (Iran) ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত এই ভূমিকম্পের প্রেক্ষাপটে জল্পনাকে আরও জটিল করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক শক্তি শান্তি আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত নিরসনের চেষ্টা করছে। তবে, ইরান ঘোষণা করেছে যে তারা হুমকির মুখে পারমাণবিক আলোচনায় অংশ নেবে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভূমিকম্প প্রাকৃতিক কারণে ঘটেছে, এবং পারমাণবিক পরীক্ষার জল্পনা ভিত্তিহীন। তবে, ইরানের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান এবং পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক উত্তেজনার কারণে এই ধরনের ঘটনা সবসময়ই আলোচনার জন্ম দেয়। আগামী দিনগুলোতে এই ভূমিকম্প এবং এর প্রভাব নিয়ে আরও তথ্য প্রকাশিত হলে পরিস্থিতি আরও স্পষ্ট হবে।