মেঘালয়ের হানিমুন মার্ডার (Murder) এখনও মানুষের স্মৃতি থেকে মুছে যায়নি। তার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের প্রায় একই ধরনের এক নৃশংস খুনের ঘটনা উঠে এল সামনে। খুনের পেছনে স্ত্রীর প্রেমিক, সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ এবং এক রুদ্ধশ্বাস ষড়যন্ত্র— ঠিক যেন রোমাঞ্চ উপন্যাসের কাহিনি। ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি ও উত্তরাখণ্ড জুড়ে।
দক্ষিণ দিল্লির রাজকোরি এলাকার বাসিন্দা ছিলেন ৫৬ বছরের রবীন্দ্র কুমার। পেশায় তিনি ছিলেন ব্যবসায়ী। গত জুন মাসের গোড়া থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন। এর কয়েকদিন পর উত্তরাখণ্ডের কোতদ্বার এলাকার এক গিরিখাদ থেকে তাঁর পচাগলা দেহ উদ্ধার করে পুলিস। তদন্তে উঠে এল স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর প্রেমিকের যৌথ পরিকল্পনায় খুনের চাঞ্চল্যকর তথ্য।
খুনের পেছনে কি ছিল স্ত্রীর প্রেম?
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবীন্দ্রের স্ত্রী রীনা সিন্ধু, বয়সে রবীন্দ্রর থেকে প্রায় ২০ বছরের ছোট। তিনি একটি ফিজিওথেরাপি সেন্টার চালাতেন। কয়েক বছর আগে সেখানে চিকিৎসার জন্য আসেন পরিতোষ নামে এক যুবক। সেখান থেকেই শুরু রীনা ও পরিতোষের ঘনিষ্ঠতা, যা পরে প্রেমে পরিণত হয়।
ধীরে ধীরে দাম্পত্য কলহ বাড়ে রবীন্দ্র ও রীনার মধ্যে। একদিকে প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্ক, অন্যদিকে সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদ— পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। পুলিশ জানিয়েছে, রবীন্দ্র মাসে প্রায় ১ লক্ষ টাকা ভাড়ার আয় করতেন স্থাবর সম্পত্তি থেকে। তবে ব্যবসায়িক দেনা মেটাতে তিনি নিজের একটি সম্পত্তি বিক্রি করতে চাইছিলেন, যার বাজারমূল্য প্রায় এক কোটি টাকা। রীনা চায়নি সেই সম্পত্তি বিক্রি হোক।
পরিকল্পিত খুনের ছক
পুলিশ জানায়, রীনা ও পরিতোষ খুনের পরিকল্পনা করে। ৩১ মে, রীনা রবীন্দ্রকে ডেকে পাঠায় পরিতোষের বাড়িতে— যা উত্তরপ্রদেশের নাগিনা এলাকায়। সেখানে পার্টির আয়োজন করা হয়।
পার্টিতে রবীন্দ্রকে ভরপেট মদ খাইয়ে অচেতন করে দেওয়া হয়। এরপর তাঁর গলা ও বুকে ধারালো অস্ত্রের কোপ মারেন রীনা ও পরিতোষ। খুনের পর একটি SUV-তে মৃতদেহ তুলে তাঁরা প্রথমে রামনগর, তারপর কোতদ্বার পৌঁছয়। সেখান থেকে ডুগাড্ডার কাছে এক গিরিখাদে দেহ ফেলে পালিয়ে যায়।
কীভাবে ফাঁস হল রহস্য?
প্রথমে মনে করা হয়েছিল এটি দুর্ঘটনা। কিন্তু ময়নাতদন্তে উঠে আসে খুনের চিহ্ন। এরপর শুরু হয় তদন্ত। একাধিক অসঙ্গতির মধ্যে মূল সূত্র মেলে রবীন্দ্রর ট্রাউজারের পকেট থেকে পাওয়া হরিদ্বারের গেস্টহাউসের একটি স্লিপ-এ। সেই স্লিপ থেকেই ধরা পড়ে রীনা ও পরিতোষ।
পুলিশ জানিয়েছে, খুনের সময় রীনা ছিলেন হরিদ্বারের এক গেস্ট হাউসে। আর পরিতোষ ছিল নাগিনায়। মোবাইল লোকেশন, গাড়ির হদিশ, ও গেস্ট হাউস রেজিস্ট্রার— সব মিলিয়ে খুনের প্রমাণ মেলে।
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ফের মনে করিয়ে দেয় মেঘালয়ের ‘হানিমুন মার্ডার’ কাণ্ডকে। ভরসার সম্পর্ক, প্রেমের ছলনা আর লোভের খেলা মিলে এক হৃদয়বিদারক পরিণতি। সম্পত্তির জন্য স্বামীকে খুন করে প্রেমিকের সঙ্গে ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন— কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েই গেল চক্রান্ত।