Assam Beef Ban Sparks Controversy: অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himanta Biswa Sarma) সম্প্রতি একটি বিতর্কিত বিবৃতি দিয়ে আবারো রাজ্যের রাজনৈতিক এবং সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি গরম করে তুলেছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, ঈদ উপলক্ষে কিছু গোষ্ঠী অসমের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সংহতি ভাঙার চেষ্টা করছে। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, প্রথমে ধুবড়ি, তারপর লাকীপুর, লখিমপুর, গোলপাড়া এবং এখন হোজাইয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এই প্রেক্ষাপটে, তিনি অসমের গোরক্ষণ আইনের কথা তুলে ধরেছেন, যার আওতায় হিন্দু মন্দির বা নামঘর থেকে ৫ কিলোমিটারের মধ্যে গোমাংস খাওয়া বা বিক্রয় করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তিনি জেলা প্রশাসনকে এই আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
ঐতিহাসিক পটভূমি ও বিতর্ক
এই আইনটি ২০২১ সালে অসম গোরক্ষণ বিল হিসেবে প্রণীত হয়েছিল, যার মাধ্যমে গরুর হত্যা, পরিবহন এবং গোমাংস ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। এই আইনের উদ্দেশ্য ছিল গোরক্ষা এবং স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা রক্ষা করা, বিশেষ করে যেসব এলাকায় হিন্দু বা অন্যান্য গোমাংস খাওয়া বন্ধকরা সম্প্রদায় বসবাস করে। তবে, এই আইন প্রয়োগের পেছনে সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সমালোচকরা দাবি করছেন যে, এটি সাম্প্রদায়িক ভাবনাকে আরও শক্তিশালী করতে পারে এবং ধর্মীয় ভিত্তিতে বিভাজন সৃষ্টি করতে সহায়তা করছে।
সম্প্রতি ঈদের পর ধুবড়িতে একটি হনুমান মন্দিরের কাছে গোমাংস ফেলে দেওয়ার ঘটনা রাজ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। মুখ্যমন্ত্রী শর্মা এই ঘটনাকে একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “অসমের শান্তি ও সামঞ্জস্য রক্ষা করা আমাদের প্রথম কর্তব্য, এবং এই ধরনের কাজ সহ্য করা হবে না।” এর ফলে জেলা প্রশাসন রैপিড অ্যাকশন ফোর্স (RAF) ও CRPF-এর সহায়তায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী প্রকাশ করেছে এবং গোপনে অপরাধীদের গ্রেফতার করা শুরু করেছে।
জনগণের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনা ও আইন নিয়ে জনমত দ্বিধাবিভক্ত। কিছু মানুষ মনে করছেন যে, এই আইন স্থানীয় সংস্কৃতি ও ধর্মীয় আদর্শ রক্ষা করবে, যা অসমের পরিচয়ের একটি অংশ। অন্যদিকে, অনেকে এটিকে সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে আইন বলে অভিযোগ করছেন। একজন সাধারণ নাগরিকের মতে, “মুখ্যমন্ত্রী কি শুধু হিন্দু-মুসলমান বিভাজন করতেই ব্যস্ত? আমরা অসমের কল্যাণে কিছু দেখতে পাচ্ছি না।” এই বিতর্কের মাঝে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন মতামত প্রকাশ পাচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
জনসংখ্যা ও অভিবাসনের প্রশ্ন
অসমের জনসংখ্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে। ২০১১-এর জনগণনা অনুযায়ী, রাজ্যের মুসলিম জনসংখ্যা ৩৪.২% এবং হিন্দু ৬১.৪৭%। তবে, শর্মা এবং তাঁর সমর্থকরা দাবি করছেন যে, বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অভিবাসনের কারণে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সাম্প্রদায়িক সমস্যার মূল কারণ। তবে, এই দাবির পেছনে কোনো নির্ভরযোগ্য গবেষণা নেই, যা এই বিতর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে।
ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ
এই আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং সাম্প্রদায়িক ঘটনা রাজ্যে শান্তি বজায় রাখা কঠিন করে তুলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারকে উভয় সম্প্রদায়ের সাথে আলোচনা করে একটি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। অন্যথায়, এই ধরনের আইন এবং ঘটনা অসমকে দীর্ঘমেয়াদী সংকটের মুখে নিয়ে যেতে পারে।