UPI-র অনুপ্রেরণায় বিদ্যুৎ খাতে নয়া ডিজিটাল মডেল গড়ার পথে নীলেকানি

ভারতের বিদ্যুৎ খাতে বড় ধরনের সংস্কার এবং আধুনিকীকরণের লক্ষ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার একটি নতুন টাস্ক ফোর্স গঠনের পরিকল্পনা করছে। এই টাস্ক ফোর্সের নেতৃত্বে থাকবেন ইনফোসিসের…

UPI

ভারতের বিদ্যুৎ খাতে বড় ধরনের সংস্কার এবং আধুনিকীকরণের লক্ষ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার একটি নতুন টাস্ক ফোর্স গঠনের পরিকল্পনা করছে। এই টাস্ক ফোর্সের নেতৃত্বে থাকবেন ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ডিজিটাল ইন্ডিয়ার অন্যতম রূপকার নন্দন নীলেকানি। ইকনমিক টাইমস-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদ্যুৎ মন্ত্রকের Revamped Distribution Sector Scheme (RDSS) এর অধীনে বরাদ্দকৃত তহবিল থেকে এই টাস্ক ফোর্সকে সহায়তা প্রদান করা হবে।

ডিজিটাল এনার্জি গ্রিড এবং শক্তি খাতে UPI মডেল:

   

নীলেকানি আগেই এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া এক পোস্টে উল্লেখ করেন, “শক্তি খাত হতে চলেছে পরবর্তী UPI! ভবিষ্যতে কোটি কোটি ক্ষুদ্র উৎপাদক ডিজিটাল এনার্জি গ্রিডে (DEG) অংশ নেবেন।”

তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতের প্রতিটি ঘর হবে শক্তির উৎপাদক, ক্রেতা এবং বিক্রেতা — কারণ তাদের থাকবে সৌর ছাদ এবং শক্তি সঞ্চয়ের ব্যবস্থা। “আপনি যদি বিদ্যুৎ কিনছেন বা বিক্রি করছেন, সেটা একপ্রকার UPI ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই হবে।” নীলেকানির মতে, এটি শুধু শক্তির লেনদেন নয়, বরং নতুন এক স্টার্টআপ এবং উদ্যোক্তা সংস্কৃতির সূচনা করবে।

টাস্ক ফোর্সের কাজ কী হবে?

প্রতিবেদন অনুসারে, নীলেকানির নেতৃত্বাধীন টাস্ক ফোর্সের মূল লক্ষ্য হবে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরণে যে ব্যয় হয়, তার প্রায় ২৫ শতাংশ পর্যন্ত খরচ কমানো। তিনি ইতিপূর্বেও বিদ্যুৎ সংস্কার বিষয়ে সরকারের কাছে একটি রূপরেখা জমা দিয়েছিলেন। এবার দ্বিতীয় দফায় ডিজিটাইজেশন ও বিকেন্দ্রীকরণের দিকটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে রোডম্যাপ তৈরি করবেন তিনি।

Revamped Distribution Sector Scheme (RDSS) কী?

ভারত সরকার ২০২১-২২ অর্থবছরে Revamped Distribution Sector Scheme (RDSS) চালু করে, যার মোট ব্যয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে ₹৩,০৩,৭৫৮ কোটি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে অনুদান ₹৯৭,৬৩১ কোটি পর্যন্ত। এই প্রকল্প চলবে ২০২৫-২৬ অর্থবছর পর্যন্ত।

RDSS-এর লক্ষ্য দুইটি প্রধান খাতে কাজ করা:

1. AT&C ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা: প্যান-ইন্ডিয়া স্তরে Aggregate Technical & Commercial (AT&C) ক্ষতি কমিয়ে ১২-১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা।

2. ACS-ARR ঘাটতি দূর করা: Average Cost of Supply (ACS) এবং Average Revenue Realised (ARR) এর মধ্যে যে পার্থক্য থাকে, তা ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে শূন্যে নামিয়ে আনা।

প্রকল্পের মূল অংশ

RDSS প্রকল্পে দুটি মূল অংশ রয়েছে:

অংশ ‘A’:

Advertisements

পূর্ব-প্রদত্ত স্মার্ট মিটারিং এবং সিস্টেম মিটারিং

বিতরণ পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণ

ডিজিটাল মিটার বসানো, ট্রান্সফর্মার পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালু করা এবং গ্রিডের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করাই মূল উদ্দেশ্য।

অংশ ‘B’:

প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি

সক্ষমতামূলক অন্যান্য কার্যক্রম

DISCOM (বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা)-কে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয় শুধুমাত্র তখনই, যখন তারা নির্দিষ্ট যোগ্যতা এবং সংস্কারমূলক মানদণ্ড পূরণ করে।

ডিজিটালাইজেশন কেন প্রয়োজন?

বর্তমানে দেশের অনেক বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা বা DISCOM রুগ্ন অবস্থায় রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে, যার অন্যতম কারণ হলো প্রযুক্তির অভাব, দুর্বল পরিকাঠামো, বিদ্যুৎ চুরি এবং ভুল বিলিং। এই প্রেক্ষাপটে ডিজিটালাইজেশন অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। স্মার্ট মিটার, অটোমেশন, ব্লকচেইন ভিত্তিক বিদ্যুৎ লেনদেন, এবং AI/ML ব্যবহারে না কেবল সাশ্রয় হবে, বরং স্বচ্ছতা এবং ভোক্তা সন্তুষ্টিও বাড়বে।

বিদ্যুৎ খাতে বিকেন্দ্রীকরণ কীভাবে কাজ করবে?

নন্দন নীলেকানির মতে, ভবিষ্যতের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা হবে “ডিস্ট্রিবিউটেড” বা বিকেন্দ্রীকৃত। এর মানে, বড় বড় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের উপর নির্ভরতা কমে গিয়ে, ছোট ছোট উৎপাদকরা যেমন — গ্রামীন সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র, ছাদের উপর বসানো সৌর প্যানেল, কিংবা স্থানীয় জৈববিদ্যুৎ ইউনিট— সরাসরি বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে গ্রিডে বা অন্য ভোক্তাদের কাছে।

এতে করে বিদ্যুৎ খাতে এক নতুন “গিগ ইকোনমি” তৈরি হবে — ঠিক যেমনটা হয়েছিল UPI আসার পর পেমেন্ট ক্ষেত্রে।

নন্দন নীলেকানির নেতৃত্বে সরকার যে টাস্ক ফোর্স গঠন করতে চলেছে, তা শুধু বিদ্যুৎ খাতেই নয়, দেশের সামগ্রিক ডিজিটাল পরিকাঠামোতেও এক নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রকের এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ সফল হলে, ভারত হয়তো বিশ্বে প্রথম দেশ হিসেবে শক্তিকে UPI-এর মত গণমুখী ও অংশগ্রহণভিত্তিক সিস্টেমে রূপান্তরিত করতে পারবে।