ওয়াশিংটন: মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে। ইসরায়েল-ইরান সংঘাত এবার সরাসরি যুদ্ধের দোরগোড়ায়। আর সেই যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু এখন ইরানের রাজধানী তেহরান। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তেহরান থেকে দ্রুত নাগরিকদের সরিয়ে নিতে আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েল,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন।
তেহরানের ‘সামরিক স্থাপনায়’ আঘাত
সোমবার এক বিস্ফোরক ঘোষণায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (IDF) মুখপাত্র কর্নেল আবিচায় আদরেই জানান, তেহরানের কিছু অঞ্চলে ‘সামরিক স্থাপনায়’ আঘাত হানতে চলেছে ইসরায়েল। তাই সেসব এলাকা দ্রুত খালি করার নির্দেশ দেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত বার্তাটি গাজার যুদ্ধের সময় ব্যবহৃত সতর্কবার্তার সঙ্গেও মিল রয়েছে।
ইসরায়েলের অভিযান শুরু হয় গত শুক্রবার। এরপর থেকে দেশটি দাবি করছে, তারা তেহরান-সহ ইরানের অনেক অংশে ‘বিমান আধিপত্য’ প্রতিষ্ঠা করেছে। এরই মধ্যে পারমাণবিক কেন্দ্র, তেল ও গ্যাস সংস্থা এবং ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে একের পর এক হামলা চালানো হয়েছে।
ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি: “সবাই তেহরান ছেড়ে যান” Israel evacuation warning
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতালির G7 সম্মেলনে অংশ নেওয়ার সময় নিজের ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ অ্যাকাউন্টে লেখেন, “সবাইকে এখনই তেহরান ত্যাগ করতে হবে!” তিনি আরও বলেন, “ইরান পারমাণবিক অস্ত্র পেতে পারে না। আমি এখান থেকে ফিরেই কিছু করব।”
তাঁর বক্তব্যে সরাসরি মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত না থাকলেও, পরিস্থিতি যে জটিল তা স্পষ্ট।
চীনের নাগরিকদের সতর্ক বার্তা
এদিকে, চীনা দূতাবাসও মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত তাদের নাগরিকদের সতর্ক করেছে। ইসরায়েল ও আশপাশের এলাকা ছেড়ে জর্ডানের স্থলসীমান্ত দিয়ে দ্রুত সরে যেতে বলা হয়েছে। তারা জানিয়েছে, ইসরায়েলের আকাশপথ বন্ধ হয়ে গেছে, এবং সহিংসতা দ্রুত বিস্তার লাভ করছে।
ইরানের কড়া হুঁশিয়ারি: NPT ছাড়ার ইঙ্গিত
ইসরায়েলের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান জানিয়েছে, প্রয়োজনে তারা পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধে স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক চুক্তি NPT থেকে সরে আসবে। তেহরান বলছে, তাদের সব ধরনের প্রতিরোধের প্রস্তুতি রয়েছে।
ইরান সরকারের তথ্য অনুযায়ী, সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ২২৪ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক। অন্যদিকে, ইসরায়েল ২৪ জন নিহত এবং প্রায় ৫৯০ জন আহত হওয়ার কথা জানিয়েছে।
ইসরায়েল-ইরান: দ্বন্দ্ব থেকে সর্বাত্মক যুদ্ধের মুখে?
ইসরায়েল ও ইরানের দীর্ঘদিনের শত্রুতা এবার যেন খোলাখুলি যুদ্ধে রূপ নিচ্ছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল হামলার পর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা অঞ্চল। এরপর একের পর এক পাল্টা হামলা, সাইবার আক্রমণ এবং গোপন অভিযানের পর এখন সরাসরি লড়াইয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি সামাল না দিলে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ বেধে যেতে পারে, যার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ-এমনকি পারমাণবিক যুদ্ধ পর্যন্ত গড়াতে পারে।