সিপিএমের পর ২০২৬ নির্বাচনে বিজেপিকে শূণ্য করার সংকল্প মমতার

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে উত্তেজনার পারদ ক্রমশ চড়ছে। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস (mamata) এবং বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র মধ্যে…

mamata in bidhansobha

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে উত্তেজনার পারদ ক্রমশ চড়ছে। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস (mamata) এবং বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র মধ্যে তীব্র রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (mamata) বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন।

তিনি দাবি করেছেন, “২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি শূন্য হবে!” তাঁর এই দাবি এসেছে বিজেপি নেতাদের ব্যক্তিগত কুৎসা এবং রাজনৈতিক সমালোচনার জবাবে। মঙ্গলবার (১০ জুন ২০২৫) বিধানসভার বাদল অধিবেশনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (mamata) এই বিস্ফোরক মন্তব্য করেন, যা রাজ্য রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

   

বিধানসভায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি (mamata)

বিধানসভার অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (mamata) বিজেপির বিরুদ্ধে একাধিক ইস্যুতে তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বিশেষ করে বিজেপি নেতা এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণের অভিযোগ তুলে ধরেন। মমতা (mamata) বলেন, “বিজেপি নেতারা ব্যক্তিগত কুৎসা ছড়িয়ে রাজনীতি করছে।

এই ধরনের অসভ্য ভাষা শুধুমাত্র বিমারু ও বিকৃত মানসিকতার মানুষেরাই ব্যবহার করতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “ধর্মের নামে বিভেদ সৃষ্টি করে বিজেপি রাজ্যের শান্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। কিন্তু বাংলার মানুষ এই ধরনের বিভাজনের রাজনীতি মেনে নেবে না।”

মমতার এই মন্তব্যের পর বিধানসভায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিজেপি বিধায়করা তাঁর বক্তব্যের প্রতিবাদে হইহট্টগোল শুরু করেন। তারা দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রীর ভাষা অসংসদীয় এবং তাঁর বক্তব্যের জবাব দেওয়ার সুযোগ বিরোধী দলনেতাকে দেওয়া হয়নি। এই ঘটনার পর বিজেপি বিধায়করা বিধানসভার বাইরে এসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘অসত্য’ বলে দাবি করেন।

বিজেপির বিরুদ্ধে মমতার কড়া বার্তা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (mamata) তাঁর বক্তৃতায় বিজেপির রাজনৈতিক কৌশলের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “বিজেপি ধর্মের নামে মানুষকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে। তারা মানুষের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়িয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়। কিন্তু বাংলার মানুষ তাদের এই ষড়যন্ত্র বুঝে গেছে। ২০২৬-এ বিজেপি শূন্য হবে, কারণ বাংলার মানুষ তৃণমূলের (mamata) পাশে থাকবে।” তিনি আরও বলেন, “বিজেপি নেতারা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আমার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ করছে। আমি তাদের কাছ থেকে কোনও সার্টিফিকেট নিতে চাই না। আমার কাজই আমার পরিচয়।”

মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে বিশেষভাবে লক্ষ্য করে বলেন, “যিনি একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেছেন, তাঁকে একদিন পস্তাতে হবে।” তিনি বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এও বলেন, “মানবতাই সবচেয়ে বড় ধর্ম। আমরা বাংলার মাটিকে সম্মান করি এবং সব সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে একসঙ্গে বসবাস করি।”

বিজেপির পাল্টা প্রতিক্রিয়া

বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী মমতার এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর(mamata) বক্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য। তিনি বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার বক্তব্যের সুযোগ দেননি। আমরা বিধানসভার বাইরে সাংবাদিক সম্মেলনে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি।” শুভেন্দু আরও দাবি করেন, “তৃণমূল সরকার বাংলার মানুষের কল্যাণের জন্য কোনও কাজ করেনি। তারা ভোটার তালিকায় কারচুপির অভিযোগ তুলে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।”

বিজেপির আরেক নেতা অমিত মালব্য আসানসোলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (mamata) সরকার ২০২৬-এ ক্ষমতায় থাকবে না। বাংলার মানুষ তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট দেবে।” তিনি আরও বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের জনকল্যাণমূলক প্রকল্প, যেমন আয়ুষ্মান ভারত, বাংলায় বাস্তবায়িত হতে দেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে রাজ্যের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে।”

Advertisements

তৃণমূলের পাল্টা জবাব

তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ভি শিবদাসন (দাসু) বিজেপির এই সমালোচনার পাল্টা জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, “বিজেপি নেতারা মুঙ্গেরিলালের স্বপ্ন দেখছে। ২০২৬-এ বাংলার মানুষ তৃণমূলের পাশে থাকবে। বিজেপির কোনও সম্ভাবনা নেই।” তিনি আরও বলেন, “বিজেপি বাংলার বাজেটকে জনবিরোধী বলছে, কিন্তু তাদের শাসিত রাজ্যগুলোর বাজেট দেখলে বোঝা যায় কারা জনবিরোধী।”

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন বাংলার রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হতে চলেছে। ২০২১ সালের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল, যদিও বিজেপি উল্লেখযোগ্য আসন জিতে বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। তবে, এই নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং ব্যক্তিগত আক্রমণের ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (mamata) দাবি, “বিজেপি শূন্য হবে,” রাজ্যের জনগণের মধ্যে তৃণমূলের আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করে। তবে, বিজেপি নেতারা এই দাবিকে ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

প্রথমবার জাতি অন্তর্ভুক্ত করে ২০২৭ সালের জনগণনার দিন নির্ধারিত

জনগণের প্রতিক্রিয়া

রাজ্যের জনগণের মধ্যে এই বিতর্ক নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। একদিকে, তৃণমূল সমর্থকরা মমতার এই দাবিকে সমর্থন করছেন এবং বলছেন যে, বাংলার মানুষ বিজেপির বিভাজনমূলক রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করবে। অন্যদিকে, বিজেপি সমর্থকরা দাবি করছেন, তৃণমূলের শাসনকালে দুর্নীতি এবং উন্নয়নের অভাবের কারণে জনগণ তাদের পক্ষে ভোট দেবে।

সামাজিক মাধ্যমে এই বিতর্ক নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। এক্স-এ একটি পোস্টে তৃণমূল সমর্থক মনোজ জানিয়েছেন, “বিজেপি কোনওভাবেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারাতে পারবে না। ২০২৬-এ তৃণমূলই জিতবে।”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (mamata) “২০২৬-এ বিজেপি শূন্য” দাবি রাজ্যের রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে। এই দাবির মাধ্যমে তিনি তৃণমূলের আত্মবিশ্বাস এবং জনগণের সমর্থনের প্রতি নিজের বিশ্বাস প্রকাশ করেছেন। তবে, বিজেপির পাল্টা সমালোচনা এবং জনগণের মিশ্র প্রতিক্রিয়া ইঙ্গিত দেয় যে, ২০২৬-এর নির্বাচন একটি তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়াই হবে। এই বিতর্ক কীভাবে রাজনৈতিক সমীকরণকে প্রভাবিত করে, তা সময়ই বলবে।