অয়ন দে, কোচবিহার: উত্তর ২৪ পরগনার কাঁচরাপাড়ায় ৬-৮ জুন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ৩৫তম সর্বভারতীয় জাতীয় রিদিমিক যোগাসন চ্যাম্পিয়নশিপ (National Rhythmic Yogasana Championship)। এই মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতায় সারা দেশ থেকে প্রায় ১,০০০-এরও বেশি প্রতিযোগী অংশ নিয়েছিলেন। তবে এই প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বড় চমক হয়ে উঠেছে কোচবিহারের দিনহাটা মহামায়া পাট ব্যায়াম বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অসাধারণ পারফরম্যান্স। বিশেষ করে, ৬-১০ বছর বয়সীদের বিভাগে জাগ্রীতি আচার্য জাতীয় চ্যাম্পিয়নের খেতাব জিতে দিনহাটা তথা উত্তরবঙ্গের মুখ উজ্জ্বল করেছেন।
জাগ্রীতি আচার্যের এই অসাধারণ কৃতিত্ব শুধু তাঁর ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং এটি দিনহাটার মতো একটি ছোট শহরের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। তিনি তাঁর অদম্য ইচ্ছাশক্তি, কঠোর পরিশ্রম এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই সাফল্য অর্জন করেছেন। একই বিভাগে মনিত বর্মন দ্বিতীয় স্থান এবং সৌহার্দ্য বিশ্বাস ষষ্ঠ স্থান অধিকার করে বিদ্যালয়ের সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন।
এছাড়াও, ১০-১৫ বছর বয়সীদের বিভাগে দিনহাটার প্রতিযোগীরা তাদের দক্ষতার ছাপ রেখেছেন। অনিবার্ন কর্মকার চতুর্থ, সূর্য সাহা ষষ্ঠ এবং রাজবীর কর্মকার অষ্টম স্থান অধিকার করেছেন। দ্বৈত বিভাগেও বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা পিছিয়ে ছিলেন না। জাগ্রীতি আচার্য ও অন্নেষা সাহার জুটি সপ্তম এবং মনিত বর্মন ও অনিবার্ন কর্মকারের জুটি নবম স্থান অধিকার করে দলগত শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়েছেন।
নীহার চক্রবর্তী, অঙ্কুর বর্মন, রুদ্র সাহা, সৃজা সাহা-সহ বিদ্যালয়ের অন্যান্য প্রতিযোগীরাও তাদের অসাধারণ পারফরম্যান্সের মাধ্যমে জাতীয় মঞ্চে নিজেদের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে দিনহাটা মহামায়া পাট ব্যায়াম বিদ্যালয়ের নিবেদিত প্রশিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং প্রতিযোগীদের কঠোর অনুশীলন।
বিদ্যালয়ের সেক্রেটারি জেনারেল বিভু রঞ্জন সাহা গর্বের সঙ্গে বলেন, “জাগ্রীতির এই সাফল্য আমাদের জন্য একটি অত্যন্ত গৌরবের মুহূর্ত। তিনি শুধু দিনহাটার নয়, গোটা উত্তরবঙ্গের গর্ব। আমরা দিনহাটায় ফিরে এসে একটি গ্র্যান্ড সংবর্ধনার আয়োজন করব, যাতে শহরের প্রতিটি মানুষ এই উৎসবে শামিল হতে পারে।”
দিনহাটার এই সাফল্য কোচবিহার জেলার জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। যোগাসনের মতো একটি বিশেষ ক্রীড়ায় এই ধরনের জাতীয় স্তরের সাফল্য প্রমাণ করে যে, সঠিক প্রশিক্ষণ ও সুযোগ পেলে ছোট শহরের প্রতিভাও দেশের শীর্ষে পৌঁছতে পারে। জাগ্রীতি এবং তাঁর সহপ্রতিযোগীদের এই কৃতিত্ব ভবিষ্যতের ক্রীড়াবিদদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
এই ঐতিহাসিক জয় উত্তরবঙ্গের মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি করেছে। দিনহাটার রাস্তায় রাস্তায় এখন জাগ্রীতি আচার্যের নামে গর্বের জোয়ার। স্থানীয় বাসিন্দারা এই সাফল্যকে শুধু একটি ক্রীড়া জয় হিসেবে নয়, বরং তাদের অঞ্চলের সম্ভাবনার প্রতীক হিসেবে দেখছেন। আগামী দিনে দিনহাটা থেকে আরও প্রতিভা উঠে আসবে বলে আশাবাদী সকলে।