ভারতীয় বায়ুসেনা (IAF) একটি অসাধারণ মানবিক কাজের মাধ্যমে পাঁচজন মানুষের জীবন রক্ষা করেছে। একজন ব্রেন ডেড রোগীর অঙ্গ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়েছে, যার মধ্যে একটি কিডনি এবং একটি কর্নিয়া বেঙ্গালুরু থেকে দিল্লিতে বিমানের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়েছে। শনিবার ভারতীয় বায়ুসেনা এক্স-এ একটি পোস্টের মাধ্যমে এই সমন্বিত অভিযানের বিবরণ এবং বিমানে অঙ্গ পরিবহনের ছবি শেয়ার করেছে।
বায়ুসেনার পোস্টে বলা হয়েছে
বায়ুসেনার পোস্টে (IAF) বলা হয়েছে, “আজ কমান্ড হসপিটাল এয়ার ফোর্স বেঙ্গালুরু (সিএইচএএফবি)-র মাধ্যমে জীবন রক্ষাকারী বহু-অঙ্গ সংগ্রহ এবং বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিস্থাপন সম্পন্ন করা হয়েছে।” এই অভিযানে, শুক্রবার ব্রেন ডেড ঘোষিত একজন দাতার অঙ্গ পাঁচজন ব্যক্তির জন্য নতুন জীবনের উৎস হয়ে উঠেছে।
এই অভিযানটি (IAF) অত্যন্ত দ্রুত এবং সমন্বিতভাবে পরিচালিত হয়েছে। বেঙ্গালুরুর কমান্ড হসপিটাল এয়ার ফোর্সের তত্ত্বাবধানে, একটি কিডনি এবং একটি কর্নিয়া দিল্লির একটি সামরিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। এছাড়াও, আরেকটি কিডনি, কর্নিয়া এবং ত্বকের প্রতিস্থাপন বেঙ্গালুরুর ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের চিকিৎসকদের সহযোগিতায় সিএইচএএফবি-তে সম্পন্ন হয়েছে। এই অভিযানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল গ্লেনইগলস বিজিএস হাসপাতালে একটি যকৃতের সফল প্রতিস্থাপন।
The IAF enabled life-saving multi-organ retrieval and critical transplants at different locations, undertaken through Command Hospital Air Force Bangalore (CHAFB) today.
In this swiftly coordinated effort, the donor patient who was declared brain dead yesterday, became the… pic.twitter.com/zyckwIkAkO
— Indian Air Force (@IAF_MCC) June 7, 2025
সমাজে অঙ্গদানের গুরুত্ব
অঙ্গদানের (IAF) এই প্রক্রিয়াটি শুধুমাত্র চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি বড় সাফল্যই নয়, বরং এটি সমাজে অঙ্গদানের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। ব্রেন ডেড রোগীর পরিবারের সম্মতিতে এই অঙ্গদান সম্ভব হয়েছে, যা পাঁচজন মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। ভারতীয় বায়ুসেনার দ্রুত এবং নির্ভুল সহযোগিতা ছাড়া এই জটিল অভিযান সফল হতো না। অঙ্গ পরিবহনের জন্য একটি গ্রিন এয়ার করিডর তৈরি করা হয়েছিল, যা সময়মতো অঙ্গগুলোকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ভারতীয় বায়ুসেনা (IAF) এর আগেও এই ধরনের জীবন রক্ষাকারী অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ পুনের একজন ব্রেন ডেড রোগীর কিডনি এবং যকৃত দিল্লিতে পরিবহন করা হয়েছিল, যা তিনজনের জীবন বাঁচিয়েছিল। সেই অভিযানে সি-১৭ গ্লোবমাস্টার বিমান ব্যবহার করা হয়েছিল, এবং দিল্লির আরঅ্যান্ডআর সামরিক হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটি দল পুনেতে পাঠানো হয়েছিল। এই ধরনের অভিযানে বায়ুসেনার দক্ষতা এবং দ্রুত সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা প্রশংসনীয়।
অঙ্গদান (IAF) এবং প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে ভারত এখনও অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ভারতে অঙ্গদান সম্পর্কে সচেতনতার অভাব, ট্রমা রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থার ঘাটতি, নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ)-এর সীমিত সংখ্যা, এবং ট্রান্সপ্লান্ট সমন্বয়কারীদের অপ্রতুল প্রশিক্ষণ এবং বেতনের সমস্যা এই ক্ষেত্রে বড় বাধা। তবে, এই ধরনের অভিযানগুলো জনসাধারণের মধ্যে অঙ্গদানের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করছে।
বেঙ্গালুরুতে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে (IAF)
বেঙ্গালুরুতে ভিক্টোরিয়া (IAF) হাসপাতালে সম্প্রতি একটি অত্যাধুনিক অঙ্গ সংগ্রহ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই উদ্যোগটি অঙ্গদান প্রক্রিয়াকে আরও সুগম করবে এবং আরও বেশি মানুষের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করবে। এই ধরনের কেন্দ্রগুলো অঙ্গ সংগ্রহ এবং প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নত করবে, যা ভবিষ্যতে এই ধরনের অভিযানকে আরও কার্যকর করবে।
এই ঘটনাটি ভারতীয় বায়ুসেনার (IAF) মানবিক দিকটিকে তুলে ধরেছে। তাদের দ্রুত এবং নির্ভুল সহযোগিতা শুধুমাত্র সামরিক ক্ষেত্রেই নয়, বরং জনসাধারণের জীবন রক্ষায়ও তাদের অবদানের প্রমাণ। এই অভিযানে জড়িত চিকিৎসক, হাসপাতালের কর্মী এবং বায়ুসেনার সদস্যদের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। ব্রেন ডেড রোগীর পরিবারের সিদ্ধান্তও এই ক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে, যা অন্যদের অঙ্গদানের জন্য উৎসাহিত করতে পারে।
অষ্টম কমিশনে বেতন বাড়লে কীভাবে মধ্যবিত্ত পরিবারের জীবন বদলাবে?
অঙ্গদানের সংস্কৃতি
এই ধরনের ঘটনাগুলো ভারতে অঙ্গদানের সংস্কৃতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অঙ্গদানের মাধ্যমে একজন ব্যক্তির জীবন শেষ হওয়ার পরও অন্যদের জীবন বাঁচানো সম্ভব। ভারতীয় বায়ুসেনার এই অভিযান শুধুমাত্র পাঁচজনের জীবনই বাঁচায়নি, বরং সমাজে অঙ্গদানের গুরুত্ব সম্পর্কে একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের আরও উদ্যোগ এবং সচেতনতা প্রচারের মাধ্যমে ভারতে অঙ্গদানের হার বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।
এই অভিযানের সাফল্য ভারতীয় বায়ুসেনা,(IAF) চিকিৎসক দল এবং অঙ্গদানকারী পরিবারের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। এটি প্রমাণ করে যে, সঠিক সমন্বয় এবং প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে জীবন রক্ষার মতো জটিল কাজও সম্ভব। ভারতীয় বায়ুসেনার এই মানবিক কাজকে সকলেই প্রশংসা করছে, এবং এটি অন্যদের জন্যও একটি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।