ভারত বিশ্বে সোনার (Gold Price ) অন্যতম বৃহত্তম ভোক্তা দেশ, যা কেবলমাত্র চীনের পিছনে রয়েছে। এ দেশের সোনার চাহিদার সিংহভাগই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। এই আমদানিনির্ভরতা ভারতীয় বাজারে সোনার দামের ওঠানামায় গভীর প্রভাব ফেলে। যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম মার্কিন ডলারে নির্ধারিত হয়, তাই ডলারের মূল্যে সামান্য পরিবর্তনও ভারতীয় মুদ্রায় সোনার দামে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।
যখন ডলারের দাম বাড়ে, তখন ভারতীয় রুপিতে সোনার আমদানি খরচও বেড়ে যায়। অন্যদিকে, ডলারের দাম কমলে সোনার দামেও সামান্য স্বস্তি আসে। কিন্তু এই চিত্রটুকুই সমগ্র চিত্র নয়। ভারত সরকার সোনার আমদানির উপর যে উচ্চ হারে শুল্ক ধার্য করে রেখেছে, এবং যে জটিল ট্যাক্স কাঠামো রয়েছে, তা ঘরোয়া বাজারে সোনার দামকে আরও বেশি করে প্রভাবিত করে। ফলে সোনার দাম প্রায়শই পরিবর্তিত হতে থাকে, যার ফলে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিনিয়োগকারীরা পর্যন্ত এক অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকেন।
সাম্প্রতিককালে সোনার দাম আবারও ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে, যা দেশের বিভিন্ন শহরের সোনার দামের পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। নিচে ১০টি প্রধান শহরের বর্তমান সোনার দামের বিবরণ দেওয়া হলো—
ভারতের ১০টি প্রধান শহরে আজকের সোনার দর
- দিল্লি:
২২ ক্যারেট – ৮,৯৯৫ টাকা প্রতি গ্রাম
২৪ ক্যারেট – ৯,৮১২ টাকা প্রতি গ্রাম - চেন্নাই:
২২ ক্যারেট – ৮,৯৮০ টাকা প্রতি গ্রাম
২৪ ক্যারেট – ৯,৭৯৭ টাকা প্রতি গ্রাম - বেঙ্গালুরু:
২২ ক্যারেট – ৮,৯৮০ টাকা প্রতি গ্রাম
২৪ ক্যারেট – ৯,৭৯৭ টাকা প্রতি গ্রাম - মুম্বই:
২২ ক্যারেট – ৮,৯৮০ টাকা প্রতি গ্রাম
২৪ ক্যারেট – ৯,৭৯৭ টাকা প্রতি গ্রাম - পুনে:
২২ ক্যারেট – ৮,৯৮০ টাকা প্রতি গ্রাম
২৪ ক্যারেট – ৯,৭৯৭ টাকা প্রতি গ্রাম - কলকাতা:
২২ ক্যারেট – ৮,৯৮০ টাকা প্রতি গ্রাম
২৪ ক্যারেট – ৯,৭৯৭ টাকা প্রতি গ্রাম - আহমেদাবাদ:
২২ ক্যারেট – ৮,৯৮৫ টাকা প্রতি গ্রাম
২৪ ক্যারেট – ৯,৮০২ টাকা প্রতি গ্রাম - হায়দরাবাদ:
২২ ক্যারেট – ৮,৯৮০ টাকা প্রতি গ্রাম
২৪ ক্যারেট – ৯,৭৯৭ টাকা প্রতি গ্রাম - ইন্দোর:
২২ ক্যারেট – ৮,৯৮৫ টাকা প্রতি গ্রাম
২৪ ক্যারেট – ৯,৮০২ টাকা প্রতি গ্রাম - লখনউ:
২২ ক্যারেট – ৮,৯৯৫ টাকা প্রতি গ্রাম
২৪ ক্যারেট – ৯,৮১২ টাকা প্রতি গ্রাম
কেন বাড়ছে সোনার দাম?
বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও আন্তর্জাতিক বাজারে বিনিয়োগের নিরাপদ জায়গা হিসেবে সোনার প্রতি আগ্রহের কারণে এর দাম বেড়ে চলেছে। ভারতীয় বিনিয়োগকারীরাও দীর্ঘদিন ধরে সোনাকে এক নিরাপদ সম্পদ বলে মনে করেন। মুদ্রাস্ফীতি, সুদের হারের অনিশ্চয়তা, এবং শেয়ার বাজারের ওঠানামার সময়ে সোনা বিনিয়োগকারীদের কাছে এক নির্ভরযোগ্য বিকল্প হিসেবে থেকে যাচ্ছে।
ডলারের দামের পরিবর্তনের পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক ভাণ্ডারে সোনার সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে তার প্রভাবও ভারতীয় বাজারে পড়তে দেরি হয় না। এছাড়াও, বৈশ্বিক সংঘাত (যেমন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বা মধ্যপ্রাচ্যের টানাপোড়েন) এবং মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের নীতিমালাও সোনার দামের উপর প্রভাব ফেলে।
ভারতীয় বাজারে সোনার ভবিষ্যৎ
চলতি বছরে বেশ কয়েকবার সোনার দাম সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে। বিশেষত ২৪ ক্যারেট (৯৯৯) সোনার দামের ক্ষেত্রে রেকর্ড গঠনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, যদি ডলারের দাম আবারও শক্তিশালী হয় এবং বৈশ্বিক অর্থনীতি অনিশ্চয়তায় ঢুকে পড়ে, তবে সোনার দাম আরও ঊর্ধ্বমুখী হবে।
একই সঙ্গে, আগামী মাসগুলোতে বিয়ের মরসুম, উৎসব এবং বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের কারণে দেশজুড়ে সোনার চাহিদাও বাড়বে, যা মূল্যবৃদ্ধিতে বাড়তি ইন্ধন যোগাবে।
ভারতের মতো দেশে, যেখানে সোনা শুধুমাত্র অলঙ্কার নয় বরং এক গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ মাধ্যমও, সেখানে এর দামের ওঠানামা কেবলমাত্র বাজার বিশ্লেষকদের নয়, সাধারণ মানুষের জীবনকেও প্রভাবিত করে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সোনা আবারও প্রমাণ করছে, কেন একে ‘সুরক্ষার প্রতীক’ বলা হয়। তবে বিনিয়োগ করার আগে বাজার বিশ্লেষণ এবং অর্থনৈতিক দিকগুলি বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।